পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পিরোজপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগছে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা। ফেরিতে সময় লাগত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাগত। কখনো কখনো যানজটের কারণে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লেগে যেত।
গত রোববার পদ্মা সেতুতে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। এরপর পিরোজপুর থেকে ঢাকাগামী পরিবহনের বাসচালক, বাসচালকের সহকারী ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছেছেন। পাশাপাশি যাত্রীরা উপভোগ করেছেন পদ্মা সেতু পার হওয়ার আনন্দ।
গত মঙ্গলবার পিরোজপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন যাত্রী আবির হাসান। সকাল সাড়ে নয়টায় আবির রাজধানীর পোস্তাগোলা এলাকায় নামেন। আবির বলেন, পদ্মা সেতু দেখার জন্য পিরোজপুর থেকে বাসে ঢাকায় গিয়েছি। আমাদের বাস যখন পদ্মা সেতু পার হচ্ছিল, তখন যাত্রীরা বাসচালককে ধীরে চালাতে অনুরোধ করেছিলেন। কারণ আমরা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। বাসের যাত্রীরা মুঠোফোনে ভিডিও করছিলেন, কেউ ছবি তুলছিলেন। বাসের গতি কমিয়ে দেওয়ায় আমরা ৯ মিনিটে সেতু পার হই। এ অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ।
ইমাদ পরিবহনের বাসচালক আকাশ ব্যাপারী বলেন, গত রোববার ভোর পাঁচটায় রাজধানী থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পদ্মা সেতুতে প্রথম দিন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের জন্য ভিড় ছিল। এ জন্য যানজটে কিছু সময় বেশি লেগেছিল। তবে গত সোমবার সকালে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে সেতু পার হতে পেরেছেন। সাড়ে তিন ঘণ্টায় পিরোজপুরে পৌঁছে যান।
বাসচালক আকাশ ব্যাপারী আরো বলেন, রোববার সকালে যখন যাত্রীদের নিয়ে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুতে উঠি, তখন যাত্রীদের মধ্যে এক অন্য রকম উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সেতুতে বাস ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা জানালা দিয়ে সেতু দেখতে থাকেন। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে বাসের সামনে চলে আসেন। কেউ মুঠোফোনে ভিডিও করছেন, কেউ জানালা দিয়ে ছবি তুলছেন।
আমার ১৫ বছরের বাস চালানোর জীবনে যাত্রীদের মধ্যে এত আনন্দ আগে কখনো দেখিনি। পদ্মা সেতু যখন প্রথম পার হচ্ছিলাম, আমার নিজের মধ্যেও একধরনের উত্তেজনা কাজ করছিল। আট বছর ধরে স্বপ্ন দেখতাম, একদিন পদ্মা সেতু দিয়ে বাস চালাব। সেই স্বপ্ন যখন বাস্তব হলো, সেটা অবশ্যই মহা আনন্দের।
বাসচালকেরা জানান, পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ না থাকায় সড়কে গাড়ি রাখায় কিছুটা যানজট সৃষ্টি হয়। প্রথম দিন সেতুতে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসচালকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। তবে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করায় স্বস্তি পাওয়া গেছে। এছাড়া গত সোমবার থেকে সেনাবাহিনী তৎপর থাকায় সেতুতে কোনো যানজট ছিল না।
পিরোজপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকিব বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় যাত্রীরা কম সময়ে যাতায়াত করতে পারছেন। ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি দূর করেছে পদ্মা সেতু। আগে লিচু, আম, তরমুজ, কাঁঠালসহ সবজি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক মাওয়া ফেরিঘাটে কয়েক দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করত। এতে পণ্য নষ্ট হয়ে যেত। এখন সে সমস্যা দূর হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে মাছ পাঠানো যাচ্ছে। পাশাপাশি অসুস্থ রোগীদের নিয়ে ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা অবসান ঘটেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন