শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দু’বছর দেরি হয়েছে

জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই বছর দেরি হয়েছে। কিন্তু এতে হতোদ্যম হইনি। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র এবং বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ পেয়েছে। এ সেতুর ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে গতকাল সরকারি দলের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সেতুর (পদ্মা সেতু) সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং প্রত্যয়। আমরা এ সেতু করবোই, সেই জেদ ছিল। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’। পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।

সংসদ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তারা জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিবেদন পেশ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়নের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এর সাথে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হলে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা এবং আইডিবি ঋণচুক্তি স্থগিত করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে কানাডার টরেন্টোর একটি আদালতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণ না করে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বহু কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূচনালগ্নে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, চ্যালেঞ্জসমূহের উত্তরণ এবং হার না মানা সুদৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এ সেতু আজ স্বপ্ন নয়, একটি দৃশ্যমান বাস্তবতা।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনে শুকরিয়া আদায় করে শেখ হাসিনা বলেন, এতে কোটি কোটি দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্ত পদ্মার বুকে আজ বহু-কাক্সিক্ষত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এ সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহা-কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ, কৃষি, ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প, ক্ষুদ্রশিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জাতীয় ও আঞ্চলিক অর্থনীতির বিস্তৃত ক্ষেত্রেও প্রভাব সৃষ্টিসহ দেশের বিভক্ত অঞ্চলকে একীভূত করে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক এবং সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে সৃষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন বেকারত্ব হ্রাসে ভূমিকা পালন করবে তেমনি দারিদ্র দূরীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এছাড়াও, সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগের ফলে সাধারণ মানুষের বিপুল কর্মঘণ্টার সাশ্রয় হবে এবং জীবনমান উন্নত হবে।

জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অর্থনীতির চাকা সচল রেখে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় রাখার চেষ্টা করছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের পদক্ষেপের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।
সরকারি দলের নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিজস্ব প্রযুক্তিতে স্বল্প পরিসরে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ বিমান ও আননেমড এরিয়েল ভেহিক্যাল তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কৌশলগত দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ধীরে ধীরে এই প্রচেষ্টা সফলতার পথ ধরে একদিন বাংলাদেশ উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার ও পাইলট বিহীন বিমান তৈরি করতে সক্ষম হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
HF Murad Khan ৩০ জুন, ২০২২, ৫:৪৬ এএম says : 0
ক্ষতিপুরন চাইতে হবে ষড়যন্ত্র কারীদের কাছে
Total Reply(0)
Mamun Miah ৩০ জুন, ২০২২, ৫:৪৬ এএম says : 0
এখন ষড়যন্ত্র কারিগরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দেশের জনগণ কাছ থেকে ওরা দুই বছর কেড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ দুই বছর পিছিয়ে গেছে
Total Reply(0)
Zahir Ahmed ৩০ জুন, ২০২২, ৫:৪৭ এএম says : 0
আসলেই ষড়যন্ত্র হয়ে থাকলে তার গ্রহনযোগ্য তথ্য প্রমান বের করে জাতিকে আশ্বস্ত করা উচিত, শুধু মূখে মূখে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে এমন অভিযোগ আর কতদিন ?
Total Reply(0)
Rm Farhad ৩০ জুন, ২০২২, ৫:৪৮ এএম says : 0
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই দেশ বিরোধীরা সবসময়ই দেশের উন্নয়ন বিরোধী ষড়যন্ত্র করে আসছে, এদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে জনগণকে সচেতন করতে হবে। ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
Saima Sultana ৩০ জুন, ২০২২, ৫:৪৮ এএম says : 0
অনেক দুঃসহ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে হারিয়েছেন পরিবারের প্রায় সবাইকে। তাঁর প্রাণসংহারের চেষ্টা হয়েছে বারবার। সে সব অন্ধকার তাঁকে ভিতর থেকে ন্যুব্জ করে ফেলারই কথা ছিল হয়তো। কিন্তু প্রতি বার তিনি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। পদ্মা সেতু তাঁর অনমনীয় সংকল্পের এক অমোঘ চিহ্ন।
Total Reply(0)
Omar ৩০ জুন, ২০২২, ৫:৪৮ এএম says : 0
পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার,যাতে ভবিষ্যতে আর দেশে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে বাধা যেন না দিতে পারে। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
Total Reply(0)
Nobita Era ৩০ জুন, ২০২২, ৫:৪৯ এএম says : 0
পদ্মা সেতু প্রমাণ করে, দেশ নেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিশ্ব দরবারে রোল মডেল।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন