আর ক’দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খুলনায় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে পশু বেচাকেনার কাজ। আনুষ্ঠানিকভাবে সব জায়গায় হাট এখনো বসেনি। ক্রেতারা আগাম বিভিন্ন গ্রামে ও খামারে গিয়ে কোরবানির পশু কিনছেন। ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতবারের চেয়ে এবার পশুর দাম বেশি। জবাবে, বিক্রেতারা বলছেন, করোনায় দু’বছর সেভাবে বিক্রি হয়নি। এখন পশু খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। তাই পশুর দামও বেড়েছে।
এদিকে, খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, খুলনা জেলাসহ বিভাগের ১০ জেলায় কোরবানির পশু সঙ্কটের কোনো কারণ নেই। বিভিন্নস্থানে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় ৯ লাখ গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় বেশি।
জানা গেছে, খুলনা বিভাগে বিভিন্ন ছোটখাটো হাট বসে গেছে। বড় আকারের হাটগুলো আগামী সপ্তাহের শুরুতে বসবে। তবে ক্রেতারা এবার গরু ছাগল কেনার জন্য বিভিন্ন গ্রাম ও খামারে ছুটে যাচ্ছেন। তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারবেন বলে তারা সরাসরি খামারে যাচ্ছেন। এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি। গৃহস্থ বাড়িগুলোতে পোষা আড়াই থেকে ৩ মন ওজনের ছোট গরু চাওয়া হচ্ছে লাখ টাকা। ছাগলের দামও কম নয়। ১৫ থেকে ১৬ কেজি ওজনের ছাগল চাওয়া হচ্ছে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের পিঁপড়ামারি এলাকার বিসমিল্লাহ এগ্রোর ম্যানেজার মো. ইয়াছিন জানান, আমাদের ফার্মে ৪০টি গরু রয়েছে। এসব গরুর পরিচর্যা করে ক্রেতার মনের মত করে তুলতে, সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেকে ইতোমধ্যে ফার্মে এসে গরু কিনে এখানে রেখে যাচ্ছেন। কোরবানির সময় নিয়ে যাবেন। ভারতীয় পশু দেশে না ঢুকতে দিলে, ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি। পশু খাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এখন দ্বিগুন, তাই পশুর দামে এর প্রভাব পড়ছে।
খুলনা মহানগরীর নিরালা সবুজবাগের জমজম এগ্রোর ম্যানেজার মো. ইকরাম জানান, এবার কোরবানিযোগ্য ২২টি গরুর মধ্যে ২০টি বিক্রি হয়ে গেছে। ঢাকা ও চট্টগামের ক্রেতারা কিনে নিয়েছেন। এদের প্রত্যেকটির ওজন ১২০০ কেজি। বাকি আছে ২টি। এগুলোর দাম চাওয়া হয়েছে ২২ লাখ টাকা। এদের প্রত্যেকটির প্রতিদিনে খাবার বাবদ ব্যয় করতে হয় ২০০ টাকা। বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম। তাই গতবারের তুলনায় এবার পশুর দাম একটু চড়া।
একই এলাকার এসকে ডেইরী ফার্মের ম্যানেজার মো. আলমঙ্গীর হোসেন জানান, ৫ টাকার চালের কুড়া এখন ১৫ টাকায় কিনতে হয়। বেড়েছে গম ও ডালের ভুষির দাম। পাল্লা দিয়ে যেন সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। ভারত যদি এলসি বন্ধ রাখে তাহলে আমাদের মতো খামারিরা এবার লাভের মুখ দেখবে। আর যদি এলসি খুলে দেয় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। তিনি তার খামারের একটি ৬ মণ ওজনের গরুর দাম হাঁকিয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এই খামারে আসা ক্রেতা আমিনুল ইসলাম জানান, হাটে অনেক ভোগান্তি। হাটে ঘোরাঘুরির চেয়ে আগে বাইরে থেকে পশু কেনাকে তিনি ঝামেলামুক্ত মনে করেন। খামারে এলে দেখেশুনে গরু কেনা যায়। তাই খামারে এসেছি। তবে খামারিরা এবার গতবারের থেকে চড়া দাম চাইছেন।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতরের পরিচালক ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েন জানান, খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে খুলনা বিভাগে এবার ৮ লাখ ৭৯ হাজার ২৫১টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যার মধ্যে খুলনায় ৩৩ হাজার ৬০০টি, বাগেরহাটে ৩৫ হাজার ৮৪৮টি, সাতক্ষীরায় ৫২ হাজার ৬২৯টি, যশোরে ৫৩ হাজার ৬৯৬টি, ঝিনাইদহ জেলায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৪১টি, মাগুরায় ৩১ হাজার ৯৯৭টি, নড়াইলে ২৮ হাজার ৬৬৩টি, কুষ্টিয়ায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৭১টি, চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ ২৫ হাজার ২১৮টি, মেহেরপুরে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৬ টি গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। চাহিদার তুলনায় পশুর ঘাটতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার গবাদি পশু একটু কম আছে। প্রাথমিক তথ্যমতে খুলনায় এবার ২৩ হাজার ৮৬৭টি পশু ঘাটতি আছে। সাতক্ষীরাতে ৪৩৪টি পশু ঘাটতি আছে। তবে খুলনা বিভাগে কোরবানির পশুর যে চাহিদা রয়েছে, তাতে প্রস্তুতকৃত পশু দিয়ে হয়ে যাবে। চাহিদার তুলনায় স্থানীয় খামারগুলোতে গরু বেশি থাকায় খুলনা বিভাগে পশু আনতে হবে না বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন