বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বুড়িগঙ্গায় ভাসমান আবাসিক হোটেল!

লঞ্চে যাত্রী কমেছে ৫০ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পাল্টে যাবে রাজধানী ঢাকার চিত্র। ৪০০ বছর আগে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা ঢাকা শহর ভাসমান আবাসিক হোটেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করা অত্যাধুনিক কিছু লঞ্চকে ‘ভাসমান আবাসিক হোটেল’ হিসেবে ব্যবহারের চিন্তাভাবনা চলছে। ব্যাংক লোন নিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে অনেক ব্যবসায়ী নৌপথে অধ্যাধুনিক লঞ্চ নামিয়েছেন। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর নৌপথে যাত্রী কমে গেছে। এক সপ্তাহ আগে বরিশাল, পটুয়াখালী রুটের যে লঞ্চ হাজার যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করত; সে লঞ্চে অর্ধেক লোক নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে লঞ্চ মালিকদের। লাভ দূরের কথা খবর উঠছে না। ফলে কেউ কেউ নতুন আইডিয়া বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাটের আশপাশে ‘ভাসমান আবাসিক হোটেল’ হিসেবে লঞ্চ ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছেন। অবশ্য ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, ভাসমান আবাসিক হোটেল হিসেবে লঞ্চ ব্যবহার করলে খারাপ হবে না। পৃথিবীর অনেক দেশে ভাসমান আবাসিক হোটেল রয়েছে।
ঈদ এলেই প্রতিবছর বুড়িগঙ্গার তীরে সদরঘাটের দৃশ্য পাল্টে যায়। যাত্রীদের ভারে ভয়াবহ হয়ে উঠে বুড়িগঙ্গা নদীর এ ঘাটের দৃশ্য। লাখো মানুষ সদরঘাটে লঞ্চে যাতায়াতের জন্য ছুটে যান। কিন্তু এবার দৃশ্যপাল্টে গেছে। কমলাপুর রেল স্টেশনে গতকাল ছিল হাজার হাজার মানুষের ভিড়। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত অনলাইনে রেলের টিকিটের জন্য ৬ কোটি হিট পড়েছে। গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালিতে যাত্রীরা বাসের টিকিটের জন্য ভিড় করছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম সদরঘাট। পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ ঈদে সড়কপথে গ্রামে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে সদরঘাটে লঞ্চের কেবিন ও টিকিটের জন্য যাচ্ছেন না। একাধিক লঞ্চ মালিক জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চে যাত্রী কমেছে ৫০ শতাংশ। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোনো কোনো টিপে খরচ উঠছে না। ফলে যাদের লঞ্চের সংখ্যা বেশি, তাদের কেউ কেউ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চকে ভাসমান আবাসিক হোটেল হিসেবে ব্যবহারের কথা ভাবছেন।
ইতালির ভ্যানিস বন্দরসহ বিশ্বের বহু দেশের বড় বড় শহরে ভাসমান আবাসিক হোটেল রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আবাসিক হোটেলগুলোতে তুলনামূলক ভাড়া কম হওয়ায় মানুষ সেগুলোই বেশি বেছে নেন। বুড়িগঙ্গায় নিম্নবিত্তদের জন্য নৌকায় বস্তির মতো ভাসমান হোটেল সেই পাকিস্তান আমাল থেকেই রয়েছে। এবার তার সঙ্গে লঞ্চ যোগ হলে রাজধানীতে ভালোমানের ভাসমান আবাসিক হোটেল গড়ে উঠবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন লঞ্চ মালিক বলেন, একটি লঞ্চ তৈরি করতে কোটি কোটি টাকা খরচ। এসব অন্য কোথাও ব্যবহারের সুযোগ কম। কারণ তাতে ব্যবসা হবে না। ফলে নতুন কিছু ভাবছি।
বরিশাল, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের রাজধানীর সঙ্গে যাতায়াতের অন্যতম বাহন ছিল নৌযান (লঞ্চ)। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এসব লঞ্চে দুর্দিন নেমে এসেছে। বেড়েছে সড়ক পথে যাতায়াত করা যাত্রীর সংখ্যা। এরই নেতিপ্রভাব পড়তে শুরু করেছে নৌযানগুলোতে। বিশেষ করে লঞ্চে যাত্রী পরিবহনে ভাটা পড়েছে। অনেকে নৌযানের বিকল্প ব্যবহারের পথ খুঁজছে বলে জানা গেছে।
একাধিক লঞ্চ মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে নৌযান উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী কমেছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলগামী নৌযানে বেশি প্রভাব পড়েছে। সময় ও টাকা দুটোই সাশ্রয় হওয়ায়, নৌযানের যাত্রীরা নদী পথ ছেড়ে সড়ক পথে যাতায়াত করছেন। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে গেছেন নৌযান মালিকরা। অনেক ক্ষেত্রে নৌযানগুলোর তেলের খরচও উঠছে না বলে জানিয়েছেন। বিশেষ করে কোটি কোটি টাকা খরচ করে যারা অত্যাধুনিক লঞ্চ নির্মাণ করেছেন; তাদের ব্যবসা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে শুরু করেছে।
নৌযান মালিক (যাত্রী পরিবহন) সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. বদিউজ্জামান খান বাদল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশর ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু এটি হওয়ার কারণে এরই মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ যাত্রী কমেছে নৌযানগুলোতে। যাত্রীরা যেভাবে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য মনে করছেন সেভাবেই যাচ্ছেন। তবে নৌযান-মালিকদের দিকে সরকারের নজর দেয়া প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, খরচ পোষাতে লঞ্চ মালিকদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। ফলে অনেকে কম টাকা নিয়ে যাত্রী পরিবহন করছেন। তার পরেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। খালি নৌযান নিয়েই ছেড়ে যেতে হচ্ছে।
রাবেয়া শিপিং লাইন্সের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে লঞ্চে যাত্রী ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমেছে। অনেক সময় তেলের খরচও উঠছে না। প্রতি ট্রিপে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে লাখ টাকা। আর্থিক ক্ষতির ফলে ব্যাংক লোন পরিশোধ করা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। অনেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে বিকল্প আয়ের কথা ভাবছেন। তিনি এরই মধ্যে একটি ভাসমান রেস্তোরাঁ করার কথাও ভাবছেন।
সদরঘাট নৌবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিআইডব্লিউটি’র যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির জানান, গত ৫ দিনে নৌযাত্রী যেমন কমেছে, তেমনি নৌযান ছেড়ে যাওয়ার সংখ্যাও কমেছে। পদ্মা সেতু চালুর আগে যেখানে ৭৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেলেও এখন ছেড়ে যাচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ। যাত্রীরও নেই চাপ। তবে অচিরেই একটা খারাপ প্রভাব পড়বে। তবে লঞ্চ ব্যবসায়ীদের অনেকেই মনে করছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর অনেকেই শখ করে পদ্মা সেতু দেখতে যাচ্ছেন। সামনে ঈদ আছে। ঈদের পরে বোঝা যাবে পদ্মা সেতু এই সেক্টরে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
আজাদ ৪ জুলাই, ২০২২, ৭:৪০ পিএম says : 0
অনেক জালাইছো, কেবিনের জন্য গেলে ভাবের শেষ থাকতো না, কেবিন নাই, পড়ে আইসেন, কেবিন যেন সোনার হরিন ছিল।
Total Reply(0)
GM Sohan ২ জুলাই, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
চাকা লাগিয়ে পদ্মার উপর দিয়ে চালালেই হয়।জনগনরে বহুত জালাইস
Total Reply(0)
Jafrin Mou ২ জুলাই, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
ক্ষমতা এবং দাপট সব সময় থাকে না
Total Reply(0)
Abu Hanif Molla ২ জুলাই, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
পদ্মাসেতু নিয়ে সরকার বেশী প্রোচারনা করছে তাই এখন প্রোভাব পরছে কিন্তু ভবিষ্যতে কিন্তু সামনে ঈদ এই সময়ে ভাড়া নিয়ন্ত্রনে রেখে ভালো সাপোর্টদিলে জনগনের কাছে পজেটিভ ম্যাসেজ যাবে তাতে ভালো হবে মালিকদের জন্য
Total Reply(0)
MD MAIN UDDIN ২ জুলাই, ২০২২, ৬:৫৫ পিএম says : 0
সদরঘাট দিয়ে যাত্রীদের উপর অনেক অন্যায় অত্যাচার করা হয়েছে বিশেষ করে কুলিদের খবলে যারা পড়েছে একমাত্র তারাই জানে এবং নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে যাত্রীদেরকে
Total Reply(0)
Khan Badru ২ জুলাই, ২০২২, ৯:৫২ পিএম says : 0
সল্প মূল্যে আবাসিক মোটেল বা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোষ্টেল হিসাবেও ব্যবহৃত হতে পারে! তবে লাভজনক হবে কিনা সেটা অন্বেষণ করে দেখতে হবে!
Total Reply(0)
ABDUL KAIUM ৩ জুলাই, ২০২২, ১০:১১ পিএম says : 0
অনেক অত্যাচার করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে! সলারা নাখেয়ে মরবে, ইনশাআল্লাহ!!
Total Reply(0)
Ahnaf Mosaddek ৪ জুলাই, ২০২২, ১:২৫ এএম says : 0
Munshiganj to dhaka er jonno launch chalu kora jete pare. Sathe turag root use kore bosila hoye root chalu korle gulistan jamer dhokol bondho kora jabe
Total Reply(0)
Gazi Hafizur Rahman ৩ জুলাই, ২০২২, ৩:৫২ পিএম says : 0
ঢাকা ঝালকাঠি নৌরুটে ২টা কোম্পানি অনেক সেচ্চাচারিতা করেছে। চাঁদপুর থেকে ঝালকাঠি তে যাওয়ার জন্য সুন্দরবন বা ফারহান চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে যাত্রী নেয় না অন্য কোন লঞ্চ কেও ঝালকাঠি লঞ্চ ঘাটে যাত্রী নামাতে দেয় না।এমন সেচ্চাচারিতার জবাব এখন তারা পাবে। বরিশাল থেকে ঝালকাঠির দূরত্ব ১৬/১৭ কিলোমিটার সুন্দরবন লঞ্চে একদিন বরিশাল থেকে উঠে ১০০/ ভাড়া দিতে হয়েছে। তাদের দাবি ছিলেন ৪০০/ ঢাকার ভাড়া।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন