শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কোরবানি পশুর প্রতিটি পশমে নেকি রয়েছে

খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০৬ এএম

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬)। কোরবানির জবাইকৃত পশুর প্রতিটি পশমে নেকি রয়েছে। ঈদুল আযহার দিনে একমাত্র রক্ত প্রবাহিত করা (কোরবানি করা) ব্যতীত আদম সন্তানের অন্য কোনো আমল মহান আল্লাহর দরবারে অধিক পছন্দনীয় নয়। যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব তারা অবশ্যই কোরবানি আদায় করবেন। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়েছে।

গুলিস্তানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার খুৎবায় বলেন, জিলহজ অত্যন্ত সম্মানীত একটি মাস। এ মাসেই শুধু ইসলামের সমস্ত মৌলিক ইবাদত করার সুযোগ আছে। যেমন নামাজ, রোজা, হজ, কোরবানি। ১২টি মাসের মাঝে চারটি মাসকে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা সম্মানিত মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে জিলহজ মাস অন্যতম।

খতিব বলেন, এ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। পবিত্র কোরআনের সূরা ফজরের শুরুতে আল্লাহ্ তায়ালা এই জিলহজের প্রথম দশ দিনের শপথ করে বলেন ‘কসম প্রভাতের এবং ১০ রাতের।’ (সূরা : ফজর, আয়াত : ১-২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তায়ালার নিকট জিলহজের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয় আর কোনো ইবাদত নেই। [সহিহ্ বুখারী খণ্ড ২, ৪৫৭] এছাড়াও এ মাসে আছে ‘আরাফাহ্’ এর দিন। যেদিন ইসলাম হয়েছে পরিপূর্ণ। আল্ কোরআনে মহান আল্লাহ্ বলেছেন ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। [সূরা মায়িদা ৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আল্লাহ্ সুবাহনহু তালার কাছে আশাবাদী, আরাফার দিনের রোজা আগের ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।’ (মুসলিম)।

খতিব বলেন, ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে। তাকবীর হলোÑ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জিলহজের চাঁদ দেখে এবং কোরবানির ইচ্ছা করে, সে যতক্ষণ কোরবানি না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন চুল বা নখ না কাটে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৬৫৬)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। [সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬] আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জিলহজ মাসের গুরুত্ব বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব সিফাতুল্লাহ রাহমানি জুমার নামাজের বয়ানে বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে অনেকগুলো ফযিলতপূর্ণ আমলের কথা হাদিসে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কোনো বান্দা যদি একদিন রোজা রাখে আল্লাহ তায়ালা সেই রোজার পরিবর্তে তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছর দূরে সরিয়ে দিবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদতের তুলনায় অন্য কোনো দিনের ইবাদত অধিক প্রিয় নয়। জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিনের প্রতিটি রোজা ১ বছরের নফল রোজার সমতুল্য আর প্রতিটি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমতুল্য।’ (তিরমিজি, ইবনে মাযাহ, মিশকাত শরিফ পৃ:১২৮)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ঈদুল আযহার দিনে একমাত্র রক্ত প্রবাহিত করা (কোরবানি করা) ব্যতীত আদম সন্তানের অন্য কোনো আমল মহান আল্লাহর দরবারে অধিক পছন্দনীয় নয়। কিয়ামত দিবসে কোরবানিকৃত ওই শিং, লোম এবং খুরসহ উপস্থিত হবে আর কোরবানির রক্ত মাটিতে পতীত হওয়ার পূর্বেই মহান আল্লাহর দরবারে বিশিষ্ট স্থান লাভ করে (কবুল হয়ে যায়)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোরবানির জবাইকৃত পশুর প্রতিটি পশমে নেকি রয়েছে।’ (আহমাদ ইবনে মাযাহ, মিশকাত শরিফ ১২৯ নং)।

ঢাকার নীলক্ষেতস্থ গাউসিয়া মার্কেট জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া জুমার খুৎবায় বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলের ফজিলত জিহাদের চেয়েও মর্যাদাবান। হাদিসে এসেছে হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এ দিনগুলোর (জিলহজের প্রথম ১০ দিনের) আমলের তুলনায় কোনো আমলই অন্য কোনো সময় উত্তম নয়। তারা বলল : জিহাদও না? তিনি বললেন : জিহাদও না, তবে যে ব্যক্তি নিজের জানের শঙ্কা ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে, অতঃপর কিছু নিয়েই ফিরে আসেনি।’ (বুখারি)

ঢাকা লালবাগ চৌধুরী বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আ ফ ম আকরাম হুসাইন বলেছেন, হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাবে, এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন চুল, নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, ইবনে হিব্বান)। জিলহজ মাসের প্রথম দশদিন কোরবানি করার আগ পর্যন্ত রোজা পালনসহ যেকোনো নেকির কাজ অধিক সাওয়াব ও ফজিলতপূর্ণ। সে হিসাব ১ থেকে ৯ জিলহজ পর্যন্ত রোজা রাখা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এ দিনগুলোতে রোজা রাখতেন।’ খতিব বলেন, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজা রাখা বিশেষ মর্যাদার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিনের রোজা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার এক বছর আগের এবং এক বছর পরের সব ছোট গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম, মিশকাত)। আল্লাহ জিলহজ মাসের নেক আমলগুলো সবাইকে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন