মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি

সিলেট-সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনায় কমছে পানি হাওর পাড়ের মানুষ বন্যাকবলিত গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে : দু’তিন দিনের মধ্যে আবারো বৃষ্টি বাড়তে পারে : সিলেট শহরে ময়লা আবর্জনার পচা দুর্গন্ধ ছড়া

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দুর্গত এলাকার পানি কমতে শুরু করেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে বানভাসী মানুষের মাঝে। সিলেট সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মানুষ ঈদের আগেই বাড়ি ফিরে যেতে পারবে এমন আশা জেগেছে মনে। তবে আবহাওয়া অফিস থেকে এমন কোন সুখবর পাওয়া যাচ্ছে না। আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপরে এখনো সক্রিয় রয়েছে। এর ফলে আগামী দু’তিনদিন পরে দেশে আবারও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এসব রাজ্যেও প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দেশ সহসা বন্যামুক্ত হবে এমনটা এখনই আশা করা যাচ্ছে না।

পানি কমলেও বানভাসীদের দুর্ভোগ কমছে না। হাওর পাড়ের মানুষ বন্যাকবলিত গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। বরং অনেক স্থানে বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। সিলেটে অনেক স্থানে পানি কমে গেলেও জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। জলাবদ্ধ এলাকার বাসিন্দারা এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঘর থেকে বের হলে এসব ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এ ছাড়া ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগও ছড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৬হাজার ৯৬৩জন। সারাদেশে বন্যায় আরও তিন জন মারা গেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৫ জন। এর মধ্যে সিলেট বিভাগেই ৫৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে গতকাল বন্যাবিষয়ক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বন্যার প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে দেখা যায় সুনামগঞ্জে ৪৫ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। মৌলভীবাজারে বন্যায় ১৬ হাজার ৩৩৯ ঘরে ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে বন্যায় ৪ হাজার ৬৮০ হেক্টর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিপযন্ত সিলেটের বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিনের টানা বৃষ্টিপাত আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। এতে পরিস্থিতির উন্নতিতে স্বস্তি দেখা দিয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে। গতকাল সকালের শুরুতেই সিলেটের আকাশে রৌদ্রোজ্জ্বল অবস্থায় এত দিনের ভুগতে থাকা মানুষের মনে প্রশান্তি উঁকি দেয়। সিলেট নগরীর বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী শাহজাহান আজীজ জানান, গত দুই সপ্তাহে সিলেটের আকাশে এ রকম সূর্যের দেখা মেলেনি। আজকের এই নীল আকাশ ও রোদের প্রখরতা ভালো লাগছে। সকাল থেকেই বাসার ছাদে কাপড়চোপড়সহ অনেক জিনিসপত্র শুকাতে দিয়েছি। সিলেট পাউবো’র তথ্য মতে, বেশীর ভাগ নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ওপরে থাকলেও তা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। কোনো কোনো পয়েন্টে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত দশমিক ২০ সেন্টিমিটার থেকে শূন্য দশমিক ০৩ সেন্টিমিটার কমেছে। এর মধ্যে ধলাই নদে শূন্য দশমিক ২০ ও ফেঞ্চুঞ্জের কুশিয়ারা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ ইনকিলাবকে জানান, বৃষ্টি না থাকায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে না। তবে পানি খুবই ধীরগতিতে কমছে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বৃষ্টিপাত যদি না হয় এবং পাহাড়ি ঢল না নামে, তবে পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতির দিকে যাবে। এদিকে, আপাতত সিলেটে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বন্যার আগাম কোনো সতর্কতা নেই।

সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল দুপুরে মতবিনিময় সভায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, বন্যার পানি কমলেও দুভোর্গ মানুষের পিছু ছাড়ছে না। বাড়ির আঙ্গিনা থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। তবে পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ রয়ে গেছে। অনেক ঘর বাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। আসবাবপত্র ভেসে গেছে। আমরা সিদ্বান্ত নিয়েছে আগামী দুই সপ্তাহ আরো বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাব। আর যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের পূর্ণবাসনের জন্য টিন এবং নগদ টাকা দেওয়া হবে। যে সকল রাস্তা ঘাট ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে সে গুলো অবস্থা বিবেচনা করে দ্রুত মেরামত করা হবে। প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান আরও বলেন, বন্যার ক্ষতিগ্রস্থ সকল বিষয় নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক করব। সেই বৈঠকে মাঠ পর্যায় থেকে যে একটা তালিকা তৈরি করে সুনামগঞ্জসহ সকল বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ যাতে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সদস্য এ বি এম তাজুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক সুনামগঞ্জ-১ সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকনসহ প্রমুখ।

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বিপদসীমার নিচে নেমে গেছে ধরলা ও দুধকুমারের পানি। তবে অর্ধশত চরের নিচু এলাকা এখনও নিমজ্জিত রয়েছে বন্যার পানিতে। নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম সদর ও উলিপুর উপজেলার চরাঞ্চলে পানিবন্দী রয়েছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। প্লাবিত রয়েছে বিস্তৃর্ণ এলাকার পাট, ভুট্রা, বীজতলা ও সবজিসহ ফসলের ক্ষেত। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদী পশুর খাদ্য সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। কাজ করতে না পারায় আর্থিক সংকটে পড়ছে দিনমজুর পরিবারগুলো। এদিকে সদরের ভেলাকোপায় হানাগড়ে কয়েকশত বন্যার্ত অসহায় মানুষের মাঝে বিক্রমপুর বন্ধুমহল মানবতার ফান্ড সিরাজাদিখাঁন মুন্সিগঞ্জের পক্ষে খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ও সংগঠনের সভাপতি কাজী কামরুজ্জামান লিপু। সহযোগিতা প্রদানকালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আশরাফুল হক রুবেল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান কবির লিখন, বিশিষ্ট চিকিৎসক ফয়জার আলম, ডা. নজরুল ইসলাম খাঁনসহ সংগঠনের সদস্যরা।

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নাসিরনগরে ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের উদ্যোগে সিলেটসহ বন্যা কবলিত নাসিরনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৫ শ বন্যার্তদের মাঝে উপহার সামগ্রী করা হয়েছে। গত শুক্রবার বাদ জুমা ফান্দাউক দরবার শরীফের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ আঞ্জুমান ছাত্রমহলের সহযোগিতায় ফান্দাউক মদিনাতুল উলুম মাদরাসা চত্বরে ১৩০টি পরিবারের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ফান্দাউক দরবার শরীফের পীরজাদা মাওলানা মুফতি সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমাদ আল হোসাইন এসব উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় বাংলাদেশ আঞ্জুমানে ইসলামী ছাত্রমহলের সভাপতি মাওলানা সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক আল হোসাইন, সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমাদ শিবলী, সৈয়দ আশরাফ শামীম আল হোসাইন,সৈয়দ বাকের মোস্তাফা আল হোসাইনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এসময় দরবার শরীফের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দেন অত্র দরবারের পীরজাদাগণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
দিশাহারা পতিক ৩ জুলাই, ২০২২, ৯:৩২ এএম says : 0
Masallah khub sundor kobor
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন