শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

কটুক্তিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই কাম্য

ড. মুহাম্মাদ আসাদুলাহ আল-গালিব | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে অবস্থিত প্রাচীন ‘জ্ঞানবাপী মসজিদটি’ শিব মন্দির ভেঙ্গে করা হয়েছে বলে কিছুদিন পূর্বে মিথ্যা গুজব সৃষ্টি করা হয়। অতঃপর এর উপরে ‘টাইম্স নাউ’ টেলিভিশন চ্যানেল আয়োজিত একটি টকশোতে অংশ নিয়ে গত ২৬ মে ২০২২ বৃহস্পতিবার ভারতের শাসক দল বিজেপির রাষ্ট্রীয় মুখপাত্রী নূপুর শর্মা (জন্ম ১৯৮৫) ও বিজেপির দিল্লি শাখার মিডিয়া ইনচার্জ নবীন কুমার জিন্দাল (জন্ম ১৯৭০) শেষনবী মুহাম্মাদ সা. ও তাঁর স্ত্রী উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) স¤পর্কে কটূক্তি ও কুরুচিকর মন্তব্য করে। তাতে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওআইসি এই ঘটনার নিন্দা জানায়। সউদী আরব, কুয়েত, জর্ডান, লিবিয়া, ওমান, কাতার, বাহরাইন, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ বহু মুসলিম দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় এবং ভারতকে অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার আহŸান জানায়। সেইসাথে তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ঘোষণা দেয়। অতঃপর প্রচÐ চাপ ও ব্যবসায়িক ক্ষতির বিষয় চিন্তা করে ভারত গত ৫ জুন নূপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালকে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক ৬ জুন বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতাকে উৎসাহিত করি।’ ঘটনার ২০ দিন পর গত ১৬ জুন রাতে যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনার নিন্দা জানায় এবং ঐ দু’জনকে বরখাস্ত করায় ভারতকে ধন্যবাদ জানায়। ঘটনার জেরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে। হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে এখনো উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। সবচাইতে মর্মান্তিক হ’ল, সহিংসতা দমনের নামে উত্তর প্রদেশে বেছে বেছে মুসলমানদের বাড়ীঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে হিন্দু সন্ত্রাসীরা উৎসাহিত হয়ে মুসলিম নিধনে ও মুসলিম বিতাড়নে মত্ত হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতির এহেন প্রেক্ষিতে ভারতের প্রসিদ্ধ হিন্দু লেখিকা অরুন্ধতি রায় বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, আমরা এখন হিন্দু ধর্মাবলম্বী গুÐাদের দ্বারা শাসিত বলে মনে হচ্ছে এবং ভারত একটি হিন্দু ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে (দৈনিক ইনকিলাব ১৯.৬.২০২২)। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এটা দুঃখজনক।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, দুনিয়া যখন এই ঘটনার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত, তখন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ষাটোর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ আইনজীবী সাইফুর রেজা (সদস্য নং ৬৫১০) তার ফেসবুক পেজে রাসূল (সা.)-এর বিরুদ্ধে কট‚ক্তিমূলক পোস্ট দিয়েছেন। এতে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে তার চেম্বারের চেয়ার-টেবিল-ডেস্ক ভাঙচুর করা হয়। অতঃপর ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি’ জরুরি সভা ডেকে উক্ত আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত করে। একইভাবে ‘খুলনা আযম খান কমার্স কলেজে’র এম.এ ক্লাসের ছাত্র ডুমুরিয়া উপজেলার কিঙ্কর কুÐু (২৩) ফেসবুকে কট‚ক্তিমূলক পোস্ট দিয়েছে। ফলে শত শত গ্রামবাসী ১৬ জুন বৃহস্পতিবার রাতে এর বিরুদ্ধে মিছিল করে।

পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ এবং শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিমের এই স্বাধীন বাংলাদেশে বারবার রাসূল (সা.) ও কুরআনের বিরুদ্ধে কটূক্তির ঘটনা ঘটছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রাসুল সা., পবিত্র কোরআন ও ইসলাম সম্পর্কে যে সব কটূক্তি করা হয়েছে, তার বিবরণ দিতে গেলে একটি গ্রন্থ হয়ে যাবে। এখনো এ ধারা চলছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল কটূক্তি ও কুৎসাকারী শিখÐীদের বিরুদ্ধে কোন সরকারই দৃষ্টান্তমূলক কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে মুসলিম জনগণ স্বাভাবিকভাবেই ক্ষিপ্ত হয় ও তার প্রেক্ষিতে অনেক সময় তিক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অতঃপর তা নিয়ে দেশে-বিদেশে বহু রাজনীতি হয়। অথচ শুরুতেই যদি সরকার এদের শাস্তি দিত, তাহ’লে এ নোংরা কাজে কেউ সাহসী হ’ত না।

তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া সরকারের কর্তব্য। আমরা ইসলাম ও ইসলামের নবী এবং তাঁর পরিবারের প্রতি কটূক্তিকারী ভারত ও বাংলাদেশের সংশি¬ষ্ট সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করি এবং এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করার আহŸান জানাই।

লেখক: আমীর, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ ও সাবেক শিক্ষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন