শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

ভোজ্যতেলে ভ্যাট সুবিধা বাড়ল

আমদানিকারকরা লাভবান হলেও বঞ্চিত ভোক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

 নিত্যপণ্যের বাজারে এখনও বেশ চড়া ভোজ্যতেলের দাম। সবশেষ প্রতি লিটারে ৬ টাকা দাম কমলেও তা কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এমন বাস্তবতা মাথায় রেখে সয়াবিন ও পাম তেলে বিদ্যমান ভ্যাট সুবিধার মেয়াদ ৩০ জুন থেকে আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। এতে বাজার সহনীয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গতকাল রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোজ্যতেলে ভ্যাট সুবিধার সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তে প্রকৃতপক্ষে ক্রেতারা কি সুবিধা পাবেন তা অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। এর আগেও যখন ভোজ্যতেলে ভ্যাট সুবিধা দেয়া হয়েছিল সেই সুবিধা সাধারণ মানুষেরা পায়নি। ব্যবসায়ীরাই বরং লাভের পাল্লা ভারী করেছেন দিনের পর দিন। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দরবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মানের পতণ ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে বারবার তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। অথচ বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়াকে ইস্যু করে দাম বাড়ানো হলেও কমলে তখন দেশের বাজারে দাম কমছে না। সবশেষ গত ২৬ জুন দেশের বাজারে লিটার প্রতি ৬ টাকা কমিয়ে সয়াবিনের দাম ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে তেল। লিটারপ্রতি ক্রেতাদের কাছ থেকে রাখা হচ্ছে ২০৫ টাকা।
বিশ্ববাজারের দর বিশ্লেষণে দেখা যায়, টনপ্রতি ১১ জুন সয়াবিনের দাম ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৭৮১ ডলার। ২২ জুন অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম নেমে আসে ১ হাজার ৬১৭ ডলারে। চারদিনের ব্যবধানে ২৬ জুন শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে সয়াবিনের বুকিং আরো ৮০ ডলার কমে লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ৫৩৭ ডলারে। আর সবশেষ গতকালের বাজারদর ছিল ১ হাজার ৪৪৮ ডলার। অন্যদিকে ১১ জুন বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত পাম অয়েলের দাম ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৩৬০ ডলার। এরপর ২২ জুন দাম নেমে আসে ১ হাজার ২৭১ ডলারে, ২৬ জুন লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ২৪৫ ডলারে। সবশেষ গতকাল এই দর ছিল ১ হাজার ৬৬ ডলার। এর আগে গত ১৪ মার্চ সরকার উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের ওপর ২০ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনা করে এ সুবিধার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
বর্তমানে ভোজ্যতেলে শুধু আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ আছে। বাকি দুই স্তরে অর্থাৎ উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে কোনো ভ্যাট নেই। এই দুই স্তরে মোট ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে যা এ বছরের মার্চ মাসে প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সুবিধা দেওয়া হয়। এখন নতুন করে বর্তমান সুবিধার মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হলো।
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চলতি বছরে ফেব্রæয়ারি থেকে ৯ জুন পর্যন্ত তিন দফায় লিটারপ্রতি ৫৫ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তবে গত কয়েক দিন থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ায় দাম কমানোর বিষয়টি আলোচনায় ছিল। তিন দফায় ৫৫ টাকা বাড়ানোর পর সবশেষ গত ২৬ জুন সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ছয় টাকা কমানোর ঘোষণা দেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের কাঁচামালের দাম এখনো অস্বাভাবিক। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সয়াবিনসহ ভোজ্যতেলের দর বিশ্ববাজারে চড়তে থাকায় রমজানের ঈদের পর ৫ মে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়ানো হয়। এর আগে দাম বাড়ানো হয়েছিল ৬ ফেব্রæয়ারি। সেদিন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১৪৩ টাকা এবং পাম তেল লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম এখনো অনেক চড়া। এই মুহ‚র্তে কর সুবিধা না দিলে ভোজ্যতেলের বাজারে আবার অস্থিরতা দেখা দেবে।
তবে ভোজ্যতেলে ভ্যাট সুবিধা প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের পাওয়া উচিত বলে মনে করেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, এনবিআরের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলের উপর ভ্যাট সুবিধা যেহেতু আবার বাড়ানো হয়েছে, এটা বিবেচনায় নিয়ে ট্যারিফ কমিশনকে সঙ্গে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হিসাব নিকাশ করে তেলের দামটা সমন্বয় করবে-এটাই আমরা আশা করি। বর্তমান বাজারে তেলের দর ১৯৯ টাকা থেকে আরও কমানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। সেই সঙ্গে নজরদারি বৃদ্ধির পরামর্শ তার।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন