শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দীর্ঘ হচ্ছে চলমান বন্যা

ঈদুল আজহা পর্যন্ত স্বল্প বৃষ্টিতে পশুহাটে কম ভোগান্তিÍ বর্ষার মৌসুমী বায়ুর জোর কমে এখন স্বাভাবিক মাসের মাঝামাঝি উজানে ও অভ্যন্তরে ভারী বর্ষণের আভাস

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

আবারো ধেয়ে আসছে ঢল-বন্যা। চলতি জুলাই মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দু’টি মৌসুমী লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি মৌসুমী নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এরফলে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল রোববার আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এই পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতি আরও দীর্ঘস্থায়ী বা প্রলম্বিত হতে চলেছে।

সিলেট-সুনামগঞ্জ-নেত্রকোণাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলে এবং মধ্যাঞ্চলেও বন্যার পানি পুরোপুরি না নামতেই চলতি মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে আবারও বন্যার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। উজান থেকে ভারতের ঢলে গত এপ্রিল মাসের গোড়াতে দেশের হাওর অঞ্চলে প্রথম বন্যা শুরু হয়। এরপর থেকে উত্তর-পূর্ব, উত্তর-মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা এলাকাভেদে এক থেকে তিন দফায় বন্যা কবলিত হয়েছে। এখনও বন্যায় পানিবন্দী হাজারো মানুষ। অনেক জেলা-উপজেলা-জনপদে বানের পানি নামছে ধীরে। নদ-নদী রয়েছে উত্তাল। ভাঙছে নদীতীরের অনেক গ্রাম-জনপদ।

এদিকে বর্ষার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু এবার জুনের গোড়াতে আগমনের সাথে সাথেই সক্রিয় ও জোরদার হয়। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকাবস্থায় গত সপ্তাহে কিছুটা দুর্বল হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় পরিবর্তিত হয়েছে। এর ফলে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বিক্ষিপ্ত ও কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আষাঢ়ের উটকো বৃৃষ্টিতে কাদা-পানির বিড়ম্বনা থাকবে কম। এতে করে কোরবানীর পশুহাটে বেচাকেনায় ভোগান্তি কম থাকতে পারে। তবে ভ্যাপসা গরমে আবহাওয়ায় অস্বস্তি বিরাজমান থাকবে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের উপর একটি ঘূর্ণি বায়ু প্রবাহের চাপ বলয় বিরাজ করছে। তাছাড়া উত্তর উড়িষ্যা উপকূল অবধি একটি লঘুচাপের বলয় তৈরি হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে মৌসুমী মেঘ-বৃষ্টিপাতের ঘনঘটা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে পারে। এ মাসের মাঝামাঝি থেকে উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতে এবং এর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও ভারী বর্ষণের আভাস রয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গতকাল আবহাওয়া বিভাগের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান। বৈঠকে দেয়া পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, চলতি জুলাই মাসে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২ দিন বিদ্যুৎ চমকানোসহ মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় সংঘটিত হতে পারে। তাছাড়া, সারাদেশে ২ থেকে ৩ দিন বজ্রঝড় হতে পারে। এ মাসে বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। গেল জুন মাসে দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিক (৩.৬ শতাংশ বেশি) বৃষ্টিপাত হয়েছে।

পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গত শনিবার বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে জানানো হয়, আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুই সপ্তাহে বিশেষ করে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে উজানের নদ-নদী অববাহিকাসমূহের অনেক স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। বাংলাদেশের এবং উজানের অববাহিকায় ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের উপর বর্ষার মৌসুমী বায়ু সক্রিয় অবস্থা থেকে বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় পরিবর্তিত হয়েছে। এরফলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে।

জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে। এ সময়ে এই অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা নেই। আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত ভারতের মেঘালয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি সময় বিশেষে অপরিবর্তিত থাকতে পারে। উজানে হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে স্বল্পমেয়াদী ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তখন বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। পদ্মা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মধ্য-জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।

এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ুর একটি বলয় ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেটের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন