মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

রাশিয়া-চিনের অস্ত্র ব্রিকস, চিন্তা ভারতের

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২২, ১২:৩৫ পিএম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিকস-এর মধ্যে চিড় ধরার সম্ভাবনা বাড়ছে। পাশাপাশি ভূকৌশলগত পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে ২০০৯ সালে তৈরি হওয়া এই গোষ্ঠীর ভরকেন্দ্রও বদলাচ্ছে বলে গত সপ্তাহে ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলির শীর্ষ বৈঠকের পরে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।

২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, চিন এবং ভারতকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল ব্রিক। তার পর দু বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকা যোগ দিলে হয় ব্রিকস। এ বার আর্জেন্টিনা এবং ইরান গোষ্ঠীভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছে, পাশাপাশি চিনও তৎপর ব্রিকস সম্প্রসারণে। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য— যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মঞ্চ হিসাবে তৈরি হয়েছিল এই গোষ্ঠী, তা ক্রমশ নড়ে যাচ্ছে। শেষ ব্রিকস সম্মেলনের পর বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছেন, আমেরিকা তথা পশ্চিম-বিরোধী একটি মঞ্চ হিসাবে ব্রিকস-কে কাজে লাগাতে উদ্যোগী চিন। ভারসাম্যের কূটনীতি নিয়ে চলা ভারতের কাছে আরও সমস্যার বিষয়, চিনের এই উদ্যোগে শামিল রাশিয়াও, জানা গিয়েছে তা।

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ২০০৯ এর পর থেকে ব্রিকস বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে হাতে কলমে কিছুপদক্ষেপ করেছে ঠিকই (ব্রিকস ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক-এর মতো উদ্যোগ), কিন্তু নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক বিষয়ে সে ভাবে কিছুই করা হয়নি। প্রতি বছর ব্রিকসভুক্ত রাষ্ট্রগুলির বিদেশমন্ত্রীরা বৈঠকে বসেন। কিন্তু তাতে এমন কোনও ঐকমত্য গড়ে ওঠে না। গত মাসেই লস্কর-ই-তইবার নেতা আব্দুল রেহমান মাক্কিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবাদীতালিকায় রাখা নিয়ে ভারত এবং আমেরিকার যৌথ প্রস্তাব আটকে দিয়েছে চিন। অথচ তার এক দিন আগেই ব্রিকস-এর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বার্ষিক বৈঠকে সন্ত্রাস দমন বিষয়ে একমত হয়েছিল চিন, ভারত-সহ পাঁচটি দেশই।

তবুও ঠেকা দিয়ে চলছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে এই গোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে সব চেয়ে বড় বিপদের কারণ— চিন এবং রাশিয়া অর্থনীতি এবং নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গিটাই বদলে ফেলতে চাইছে। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁর প্রাথমিক ভাষণে বিশ্বের একটি একপেশে ছবি তৈরি করেছেন, যেখানে পশ্চিমের আগ্রাসনেবাকিরা থরহরি কম্প! ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলির কাছে তাঁর আবেদন, সামরিক জোট এবং একচেটিয়া ক্ষমতার (আমেরিকা ও ইউরোপের) বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। সব চেয়ে বড় কথা, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর যে ‘গ্লোবাল সিকিওরিটি অ্যালায়েন্স’-এর ঘোষণা করেছিল বেজিং, এ বার তাতে শামিল হতে ব্রিকস-কে আহ্বান জানিয়েছেন শি। এই নতুন উদ্যোগটির যে ব্যাখ্যা চিন সরকার দিয়েছে, তা হল, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সমন্বয় তৈরি করা।

স্বাভাবিক ভাবেই চিন এবং রাশিয়ার এই প্রয়াস যদি বাড়তে থাকে তা হলে ভারতের পক্ষে ব্রিকস-এ নিজেদের ধরে রাখা সমস্যার। ভারত এক দিকে যেমন নিজে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে সমস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলির আশা আকঙ্ক্ষার বিষয়ে সতর্ক, তেমনই বহুপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে রাশিয়া এবং আমেরিকার সঙ্গে তার একই ভাবে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। ইউরোপের সঙ্গেও বাণিজ্য এবং কৌশলগত সম্পর্ক বাড়ছে। ফলে ব্রিকস-এর মধ্যে চিনের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতার ও অস্তিত্বের লড়াই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের তরফে মনে করা হচ্ছে, এই লড়াইয়ের জেরেই চিড় ধরতে পারে তেরো বছরের পুরনোএই গোষ্ঠীতে। আনন্দবাজার

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন