আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে-পড়ে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ১০ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতে রাষ্ট্রীয় সড়ক, নৌ ও আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলোর তেমন কোন তৎপড়তা নেই। ফলে রেল যোগাযোগ বিহীন দক্ষিণাঞ্চলে ঢাকা-বরিশাল নৌ ও সড়ক পথ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেসরকারী পরিবহন মালিকদের নৈরাজ্যের কাছেই জিম্মি থাকতে হচ্ছে ঘর ও কর্মস্থলমুখি যাত্রীদের।
শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা-বিমান ঈদের আগে ও পরের ৩দিন একটি করে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করে দায়িত্ব শেষ করতে যাচ্ছে। অথচ ঈদের পরে টানা ১৬ জুলাই পর্যন্ত যাত্রীদের ভীড় অব্যাহত থাকবে। ফলে বেসরকারী দুটি উড়ান সংস্থা এবারের ঈদের আগে ঢাকাÑবরিশাল ও পরে বরিশালÑঢাকা আকাশ পথে দেশের সর্বনি¤œ দুরত্বের জন্য সাড়ে ১০ হাজার টাকারও বেশী ভাড়া আদায় করছে।
কিন্তু রাষ্ট্রীয় সড়ক ও নৌ পরিবহন সংস্থা দুটি দক্ষিণাঞ্চলের ঈদে ঘরমুখি ও কর্মস্থলমুখি যাত্রীদের জন্য কোন বিশেষ সার্ভিসের ব্যাবস্থা করছে না। ফলে বিগত কয়েকটি বছরের মত আসন্ন ঈদ উল আজহার সময়ও দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত দক্ষিণাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য চরম দূর্ভোগ অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। বিগত দুটি বছর করোনা মহামারীর নানা বিধি নিষেধের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দক্ষিণঅঞ্চলের ঘরমুখি মানুষের চলাচল ছিল সিমিত। এবার অতি সম্প্রতি দক্ষিণাঞ্চলেও করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে শুরু করলেও গত দুটি বছরের তুলনায় ঈদ উল আজহায় ঘরমুখি মানুষের সংখ্যা যথেষ্ঠ বাড়বে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল। করোনা মহামারীর আগে যেখানে ঈদকে কেন্দ্র করে অন্তত দশ লাখ মানুষ দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক ও নৌ পথে যাতায়াত করত, এবার তা আরো বৃদ্ধির আশা করছে পরিবহন ব্যাবসায়ীগন।
কিন্তু করোনা সংকটের আগে পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানীর বেসরকারী অর্ধ শতাধিক বিশাল মাপের নৌযান ডবল ট্রিপে যাত্রী পরিবহন ছাড়াও রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটিসি নিয়মিত রকেট স্টিমারের বাইরেও প্রতিদিন আরো একাধীক নৌযান নিয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রম পরিচালন করত। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হবার পারে নৌ বানিজ্যে কিছুটা বিপর্যয় সৃষ্টি হলেও ঈদকে সামনে রেখে বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকার সাথে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত ২৫টি রুটে শতাধিক নৌযান নিয়ে লক্ষ লক্ষ যাত্রী পরিবহনে তৎপড়। বৃহস্পতিবার থেকেই রাজাধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর হয়ে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে নৌপথ আবার সরগরম হয়ে উঠছে।
কিন্তু গত দু বছর ধরে রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান,বিআইডব্লিউটিসি তার প্যাডেল হুইল ৪টি নৌযান বসিয়ে রেখে ইতোমধ্যে তা যাত্রী পরিবহন থেকে প্রত্যাহার করেছে। উপরন্তু ২০১৪ ও ’১৫ সালে প্রায় ৫৭ কোটি টাকায় সংগ্রহ করা দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযান যাত্রী বান্ধব না হলেও তা দিয়ে সপ্তাহে মাত্র দুদিন যাত্রী পরিবহন করছে। ঈদ উল আজহাকে সামনে রেখেও রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বড়তি যাত্রীর ভীড় সামাল দিতে প্রতিদিনের নিয়মিত স্টিমার সার্ভিস পরিচালনে নুন্যতম কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। অথচ বিদ্যমান দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযানের মাধ্যমেই ঢাকা থেকে চাঁদপুরÑবরিশাল হয়ে দক্ষিণে বাগেরহাটের সণ্যাশীÑবড় মাছুয়া পর্যন্ত নিয়মিত স্টিমার সার্ভিস পরিচালনা সম্ভব ছিল। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল মহলেরও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা- বিআরটিসি’ও ঢাকা সহ দেশের কোন স্থানের সাথেই দক্ষিণাঞ্চলের বিশেষ বাস সার্ভিস চালুর পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হবার পরেও বরিশালে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বাস ডিপোটিতে ১টি যাত্রীবাহী বাস দিতে পারেনি সংস্থাটি। অথচ বিআরটিসি’র সদর দপ্তর থেকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের অর্ধ শতাধিক বাস চালুর ঘোষনা দেয়া হয়েছিল।
তবে বরিশাল ডিপোটিতে বিদ্যমান যে ১৪টি এসি বাস ইতোপূর্বে কাঠালিবাড়ি পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করত, সেগুলোই এখন ঢাকার গুলিস্থানে যাত্রীদের পৌছে দিচ্ছে। ফলে ইতোপূর্বের ৩০ মিনিট অন্তর যেসব বাস উভয়প্রান্ত থেকে ছাড়ত, এখন তা প্রায় দেড় ঘন্টা অন্তর ছাড়ছে। কিছু এসি বাস বরাদ্বের আবেদনের কথা জানিয়ে বরিশাল ডিপোর ম্যানেজার অপারেশন বলেন, এখনো কোন সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি। বাসের বরাদ্ব পেলেই ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন রুটে যাত্রী সেবা সম্প্রসারনের কথাও জানান তিনি। বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ পরিচালন মুনফার বরিশাল বাস ডিপোটির ৭০টি বাসের মধ্যে ৪০টির মত যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন