শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভারত কি বাংলাদেশকে গুরুত্বহীন মনে করছে?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

ভারতের কাছে কি বাংলাদেশের গুরুত্ব কমে গেছে, এমন একটি প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। মুখে মুখে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ককে ‘সোনালি সময়’, ‘বন্ধুত্বের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়’সহ আরও নানা বিশেষণে অভিহিত করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে কার্যক্ষেত্রে ভারতের আচরণে তার প্রতিফলন ঘটছে না। বাংলাদেশকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না ভারত। এক ধরনের অবহেলা ও শীতল আচরণ করছে। বিশেষ করে গত মাসের ১৮ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জয়েন্ট রিভার কমিশনের (জেআরসি) মিটিংয়ে যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন অংশগ্রহণ করেন, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার সাক্ষাৎ হয়নি। মোদি তার সাথে দেখা করার সময় বের করতে পারেননি বা দেখা করেননি। অথচ, এই এ কে আবদুল মোমেনই বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে ‘স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। সেই তিনিই মোদির সাক্ষাৎ পাননি। এ ঘটনা থেকে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত বাংলাদেশকে এখন খুব একটা আমল দিচ্ছে না। ভারতের জন্য বাংলাদেশ কী না করেছে! ভারতের কোনো কিছু চাইতে দেরি হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের দিতে দেরি হয়নি। উচ্চারণ মাত্রই দিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার চাওয়ার মধ্যে একটি জিনিসই ভারতের কাছে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে চেয়েছিল। সেটি হচ্ছে, তিস্তা চুক্তি। ভারত তা নানা টালবাহানায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। এ চুক্তি এখন সুদূরপরাহত।

দুই.
ভারত যে বাংলাদেশকে এখন ‘দাম’ কম দিচ্ছে, তা ভারতের মিডিয়ার চোখ এড়ায়নি। বিশেষ করে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সাথে মোদির সাক্ষাতের সময় বের করতে না পারা থেকেই বিষয়টি নিয়ে তারা নড়েচড়ে বসেছে। তারা বিষয়টিকে বাংলাদেশকে ভারতের কম গুরুত্ব দেয়া হিসেবে মনে করছে। মোমেনের সফরের আগে ৮ জুন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় মোদি যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে সাক্ষাৎ দিয়েছেন, তার সাথে তুলনা করে বাংলাদেশকে কম গুরুত্ব দেয়ার প্রসঙ্গটি আনা হয়েছে। দেশটির একটি গণমাধ্যম ‘ইরানের মন্ত্রীর নয়াদিল্লীর সময় ছিল কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য নয় কেন?’ এমন শিরোনাম দিয়ে গত মাসের শেষের দিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে সৌজন্য দেখিয়েছেন, তার খানিকটাও যদি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের প্রতি দেখাতেন, তাতে কি আকাশ ভেঙে পড়ত? ৮ থেকে ১০ জুন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফরের সময় মোদি তার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বের করেছিলেন। মোমেনের ১৮ থেকে ২০ জুন নয়াদিল্লী সফরের সময় তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সময় ছিল না। প্রতিবেদনে বলা হয়, কোন দেশকে ভারত গুরুত্ব দেয় তা বিচারের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে, মোদির সাথে সেই দেশের প্রতিনিধির সাক্ষাৎ এবং একটি ফটোসেশন। সেই মাপকাঠিতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারে বাংলাদেশের স্থান কোথায়? ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মোদির সাক্ষাতের সময় ঠিক করার পেছনে ছিলেন স্বয়ং মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। মোমেনকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল শুধু ভারতের উপরাষ্ট্রপতি এম. ভেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে বৈঠক করে। সত্যি বলতে এটা বৈষম্যমূলক এবং ভয়ংকর। অন্য কিছুর জন্য না হলেও নুপূর শর্মা-নবীন জিন্দালের মহানবী (স.)কে নিয়ে জঘন্য মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো থেকে বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে মোমেনের সাথে মোদির দেখা করা উচিত ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা সারাবিশ্বের একটি প্রধানতম ইসলামী দেশের রাজধানী যা রক্ষণশীল দেশটিকে বিদ্রোহের মধ্যেও নীরব থেকে নয়াদিল্লীকে লজ্জা থেকে রক্ষা করেছে। ভারত যখন কোনঠাসা অবস্থায় ছিল, তখন শেখ হাসিনা সরকার সহানুভূতিশীল এবং অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সাথে কাজ করেছিল। অথচ ভারতের জন্য বাংলাদেশ যা করে চলেছে, দিল্লী তা স্বীকার করছে না। নয়াদিল্লী গোপনে বাংলাদেশকে কি বলল তা যথেষ্ট নয়, তবে তারা প্রকাশ্যে ঢাকাকে মুক্তকণ্ঠে কখনোই ধন্যবাদ জানায় না। প্রতিবেদনে প্রশ্ন করা হয়, ভারত কি তার প্রতিবেশীকে (বাংলাদেশ) খুব হলকাভাবে নিচ্ছে? এর কারণ কি এটির কোনো তেলক্ষেত্র নেই, পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা নেই, পশ্চিমের মতো বিশ্ব শক্তির সাথে পারমাণবিক আলোচনায় জড়িত নয় বলে? প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা শীঘ্রই ভারতে সফর করবেন। দেখা যাক, নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা যেভাবে অসামান্য উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন, শেখ হাসিনা তা পান কিনা। ভারতের গণমাধ্যমের এ প্রতিবেদন থেকে পুরোপুরি না হলেও ভারত বাংলাদেশকে কী চোখে দেখে, বাংলাদেশ ভারতের জন্য কী করেছে এবং ভারত তার মূল্যায়ন কীভাবে করছে, তার একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। এটা নতুন কিছু নয়। ভারতের আচরণে বরাবরই এটা প্রতিফলিত হয়, বাংলাদেশ ভারতের প্রতি আনুগত্যশীল থাকবে এবং সে যা বলবে বা চাইবে, সেভাবেই হবে। এর নজির বহু দেখা গেছে। ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বাংলাদেশ কোনো ধরনের দর কষাকষি ছাড়াই যেভাবে দিয়েছে, তার জন্য ভারত কখনোই সৌজন্য স্বরূপ ‘ধন্যবাদ’টুকু দেয়নি। তার আচরণে এটাই প্রকাশিত হয়েছে, বাংলাদেশ তাকে এসব সুবিধা দিয়ে উল্টো ‘ধন্য’ হয়েছে কিংবা তা দিতে বাধ্য। অবশ্য আমরা সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে নেতা-কর্মীদের তরফ থেকে ‘ধন্য’ হওয়ার মতো কথাবার্তা শুনেছি, এখনও শুনছি। ভারতের কাছ থেকে কিছু না পেলেও তারা একপাক্ষিকভাবে রক্তের সম্পর্ক, রাখীবন্দনের সম্পর্ক, যেকোনো দেশের চেয়ে অনন্য উচ্চতার সুসম্পর্ক ইত্যাদি নানা অভিধায় অভিহিত করেছেন ও করছেন। এক দেশ আরেক দেশের সাথে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দেনদরবার, লেনাদেনা করবেÑ এটাই স্বাভাবিক। উভয় ক্ষেত্রে ভারসাম্যমূলক সন্তুষ্টি ও সম্পর্কের প্রকাশ থাকে। ভারতের প্রতি আমাদের এমন নিঃস্বার্থ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বিশ্বের আর কোনো দেশে দেখা যায় না। একপাক্ষিক এই ‘ধন্য’ হয়ে যাওয়া যে, দেশের মানুষ কখনোই ভালভাবে নেয়নি, তা সরকার বুঝতে চায়নি। এমনকি ভারতের সচেতন মহলও যে ভারতের একতরফা আচরণে লজ্জা পাচ্ছে, তা উল্লেখিত প্রতিবেদন থেকেই বোঝা যায়। বাংলাদেশের সাথে ভারতের এই আচরণ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাংলাদেশকে তার এখন গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। আবার যখন প্রয়োজন হবে তখন দেয়া হবে। এর জন্য ভারতকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কেউ যদি গুরুত্ব পাওয়ার সব উপাদান স্বেচ্ছায় হারিয়ে ফেলে, তখন অন্য কেউ কেন গুরুত্ব দেবে? আজ নেপাল ভারতের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে এ কারণে যে, তার কাছে গুরুত্ব পাওয়ার এমন কিছু আছে বা এমন আচরণ করে, তাতে ভারতের গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই।

তিন.
আমাদের সরকারের মধ্যে এমন একটা প্রবণতা রয়েছে, শুধু ভারত আমাদের পাশে থাকলে আর কারো প্রয়োজন নেই। এটা এক ধরনের কূপমুন্ডুক মানসিকতা। এখন ভারত যে আমাদের গুরুত্ব দিচ্ছে না, তাতে এ প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে বিশ্বে বাংলাদেশর অবস্থান কোথায়? আসলে সরকার যতই গলা চড়িয়ে বলুক না কেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে আমরা উদীয়মান শক্তি, উন্নয়নের রোল মডেলÑ এসব কথার মূল্য খুব কমই রয়েছে। উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে প্রতিবেশী দেশগুলোও তা ভালো করে জানে। বিশ্বের কোন দেশ নিদেনপক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশ বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল গ্রহণ করেছে, তার খবর আমরা পাই না। কূটনৈতিক ভাষায় উন্নত বিশ্ব ও বিভিন্ন সংস্থা প্রশংসা করলেও, তার পেছনে তাদের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। তারা উপমহাদেশে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূরাজনৈতিক কারণে ব্যবহারের জন্য প্রশংসা করে থাকে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে প্রশংসা তারা করে, তা ছোট শিশুর হাঁটা শুরুর চেষ্টার সাথে তুলনা করা ছাড়া কিছু নয়। এই যে কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এটা মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা নয়, সেটা তারা দেখবেও না। কারণ, আমরা কোনো দিক দিয়েই তাদের সমকক্ষ নই। সমরশক্তি, অর্থনীতি, বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব, গণতন্ত্র-এসব দিক থেকে আমরা তাদের ধারে কাছেও নেই। সে সমমর্যাদা দেবে তার সমতুল্য কাউকে। তার বাইরের দেশের ওপর ছড়ি ঘোরাবে, প্রভুত্ব দেখাবে কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে। এ বাস্তবতা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এজন্য আমাদের দেশের সরকারের কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্র যায়, বিমানবন্দরে তাদের কারা রিসিভ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বা ব্যক্তিদের সাথে দেখা করার চেষ্টা এবং চেষ্টা করেও সাক্ষাৎ না পাওয়া থেকে বোঝা যায়, তারা আমাদের মতো দেশকে কোন দৃষ্টিতে দেখে। এমন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তি যখন বলে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ, তখন বুঝতে হবে, তার স্বার্থেই এ কথা বলেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে মোকাবেলায় দীর্ঘদিন ধরেই এশীয় প্রশান্ত মহাসগরীয় জোটে বাংলাদেশকে নিতে চাচ্ছে। তার মানে এই নয়, সে বাংলাদেশের কাছে অর্থকড়ি কিংবা সামরিক সহায়তা চাচ্ছে। বাংলাদেশকে তার প্রয়োজন। ‘প্রয়োজন’ আর ‘গুরুত্ব’ এক জিনিস নয়। বরং বাংলাদেশকে চাচ্ছে, ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় এবং দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি দেশ যুক্ত করে জোটের পরিধি বৃদ্ধির জন্য। এর বাইরে কিছু যে নয়, তা নানা বিষয়ে তার খবরদারি থেকে বোঝা যায়। মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্রের সংকোচন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তারা অনেকটা ধমকের সুরে কথা বলে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এতে বাংলাদেশ অবাক হয়েছে বলে সে আরও বেশি অবাক হয়েছে। কারণ, তার কাছে নিষেধাজ্ঞা অবাক করার বিষয় নয়। বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এ নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই তার বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বলে বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিষয়টি বাংলাদেশ জেনেও কেন অবাক হচ্ছে, তাতেই সে অবাক হয়েছে। বিগত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া নিয়ে তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে সরকার প্রশ্নও তুলছে। তারপরও তারা বলছে এ কারণে যে, তাদের ক্ষমতা এবং বিশ্বরাজনীতিতে আমরা তাদের ধারে কাছে নেই। অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা তার ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কথার বাইরে গেলে আমাদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এ কথাও সত্য, আমরা মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত ও নিশ্চিত করতে পারিনি। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এসব নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও কথা বলতে পারছে। আমাদের সরকারই তাদের এ সুযোগ করে দিয়েছে। বলা বাহুল্য, বিশ্বে মর্যাদা পেতে হলে উল্লেখিত মৌলিক অধিকারগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আভিজাত্যের প্রতীক।

চার.
পুরো বিশ্বের কথা বাদ দেয়া যাক, উপমহাদেশে আমাদের অবস্থান কতটা মজবুত বা মর্যাদাকর, তাই এখন বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর কথা যদি ধরা হয়, তাহলে সাতটির মধ্যে প্রথম সারির তিনটির মধ্যে যদি আমরা পড়ি, তাহলে দেখা যাবে, ভারত এখন আমাদের খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না, পাকিস্তানের সাথে তো শীতল সম্পর্ক বহু আগে থেকে। তাহলে বাকি চারটি দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থান কী? শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক শোচনীয় অবস্থা বাদ দিলে সে বরাবরই আমাদের থেকে এগিয়ে ছিল, মালদ্বীপও এগিয়ে, নেপাল ও ভুটান অনেকটা নীরব অবস্থানে থাকে। এখন অবশ্য নেপাল ও ভুটান ভারতের সাথে সমানতালে কথা বলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধমকও দেয়। আমাদের সরকার ভারতের প্রতি এতই অনুরক্ত যে, সীমান্তে সে আমাদের রক্ত ঝরিয়ে, হত্যা করে, পানি না দিয়ে শুকিয়ে এবং বাঁধ খুলে দিয়ে ভাসিয়ে দিয়ে, এমনকি স্বাধীনতা নিয়ে কটাক্ষ করলেও তা নিয়ে টুঁ শব্দ করেনি, করছেও না। চীনের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক। এ সম্পর্কও আবার চীনের স্বার্থে। তার ব্যবসা-বাণিজ্য, দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশকে তার প্রয়োজন। এটা সমমর্যাদা পর্যায়ের নয়, স্বার্থের প্রয়োজনীয়তা পর্যায়ের। মুসলমান দেশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের সবচেয়ে বেশি মর্যাদা পাওয়ার কথা, অথচ সেভাবে দেশগুলো আমাদের খুব একটা মূল্যায়ন করে না। এটা তাদের আচরণ থেকে বোঝা যায়। ইউরোপ বা উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মতোই আচরণ করে। আর ইদানিং সবচেয়ে কাছের বন্ধু ভারত, যার চেয়ে অর্থনীতির দিক থেকে আমরা কোনো অংশে কম নই, সে-ই এখন খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছি এবং উন্নতি করছি, এ বিষয়টি হয়তো ভারতের খুব একটা পছন্দ হচ্ছে না। আমাদের উন্নতি তাদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই হয়তো সে আমাদের এভয়েড করতে চাচ্ছে। এ বিষয়টি আমাদের সরকারকে বুঝতে হবে। সরকারের উচিত হবে, ভারত যাতে আমাদের গুরুত্বহীন ভাবতে না পারে, এমন অবস্থান তৈরি ও আচরণ করা। অন্যদিকে, কীভাবে বিশ্বে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা যায়, এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া। অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে আমাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন, বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উন্নতি করতে হবে। বিশ্বে মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোর উন্নতি খুব বেশি প্রয়োজন। এসবের উন্নতির জন্য শুধু প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা।


darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Subhasish ৮ জুলাই, ২০২২, ২:০১ পিএম says : 0
Love you Bangladesh ... from New Delhi, India.
Total Reply(0)
ইমরান ৮ জুলাই, ২০২২, ৬:০৬ এএম says : 0
পৃথিবীর নিকৃষ্ট একটা জাতি ভারত। তারা কখনো অন্য দেশের ভালো চায় না। বিশেষ করে ভারত সব সময় আমাদের ক্ষতি করেছে।
Total Reply(0)
ইমরান ৮ জুলাই, ২০২২, ৬:০৫ এএম says : 0
ভারত বাংলাদেশকে সব সময় গুরুত্বহীন মনে করে। তারা আমাদের কোনো সময় ভালো চায় না।
Total Reply(0)
ইমরান ৮ জুলাই, ২০২২, ৬:০৯ এএম says : 0
আমাদের সরকার ভারতের প্রতি এতই অনুরক্ত যে, সীমান্তে সে আমাদের রক্ত ঝরিয়ে, হত্যা করে, পানি না দিয়ে শুকিয়ে এবং বাঁধ খুলে দিয়ে ভাসিয়ে দিয়ে, এমনকি স্বাধীনতা নিয়ে কটাক্ষ করলেও তা নিয়ে টুঁ শব্দ করেনি, করছেও না। এর মূল কারণ আমাদের এ সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারত সহযোগিতা করে। এজন্য তারা ভারতের কাছে মাথা নত করে চলে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন