শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়

কমলাপুরে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি রেল প্রশাসন নির্বিকার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

 

ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। রেলপথে ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে গত দু’দিনের তুলনায় রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এছাড়া সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সবকটি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে। প্ল্যাটফর্মে ট্রেন এলেই ভিড় ঠেলে কাক্সিক্ষত ট্রেনের দিকে ছুটছেন সবাই। যাত্রীদের ভিড়ে ট্রেনের ভেতরে সামান্য জায়গা নেই। প্রতিটি ট্রেনই যাত্রীতে ঠাসা। প্রতিটি ট্রেনের দরজা মানুষের ভিড়ে বন্ধ। তিল ধরনের ঠাঁই নেই। ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কোনো ট্রেনই সময়মতো ছাড়ছে না। ট্রেনের নির্ধারিত সময়ের পর দুই থেকে তিন ঘণ্টা অতিক্রম করলেও ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসছে না। সিডিউল বিপর্যয়ের মধ্যে সকাল থেকে স্টেশন ছেড়ে যাওয়া প্রত্যেকটি ট্রেনের ভেতরে সাধারণ মানুষে ঠাসা। আসন ভরে যাওয়ার পর দাঁড়িয়েও যাত্রীরা যাচ্ছেন। ট্রেনের ছাদেও অসংখ্য মানুষ উঠছেন ঝুঁকি নিয়ে।
স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে হাজার হাজার যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছেন। কেউ কেউ স্টেশনেই পত্রিকা বিছিয়ে শুয়ে আছেন। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনগুলো ২ থেকে ৩ ঘণ্টা দেরি করছে। প্ল্যাটফর্মগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী দেখা গেছে। গরমে শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের কষ্ট হচ্ছে।
কমলাপুর রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার কথা সকাল ৬টায়। সেটি সাড়ে ৩ ঘণ্টা দেরি করে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্টেশন ছাড়ে। নীলফামারির চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা। এ ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে আসে সকাল সাড়ে ৯টায়। পৌনে ১০টার দিকে ট্রেনটি স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যায়।
একই অবস্থা খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের। এ ট্রেনটির সকাল ৮টা ১৫ মিনিটের স্টেশন ছাড়ার নির্ধারিত সময়। এ ট্রেনটিও দেরিতে ছাড়বে বলে জানিয়েছে কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টায় ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় থাকলেও বেলা ১১টা পর্যন্ত ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায়নি। রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। এ ট্রেনটি ৩০ মিনিট দেরি করে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ে। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে কর্ণফুলী কমিউটার ছাড়ার কথা। এ ট্রেনটি ৩০ মিনিট দেরি করে সোয়া ৯টার দিকে স্টেশন ছেড়ে যায়। আগের রাতে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ৫ ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকা ছেড়ে গেছে। অন্যান্য ট্রেনের একই অবস্থা।
এদিকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কোথাও জায়গা না পেয়ে প্রথম শ্রেণির বিশ্রাম কক্ষের সামনের মেঝেতে পত্রিকা বিছিয়ে শুয়ে পড়েন সায়েদাবাদের বাসিন্দা রূপালি আক্তার। তিনি রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী। তিনি বলেন, ভোর থেকেই রেলস্টেশনে বসে আছি। অসুস্থ হওয়ায় বাসে যেতে পারি না। তাই কষ্ট করে অপেক্ষা করছি। কিন্তু ট্রেনের দেখা নেই। স্টেশনে দু’দিন অপেক্ষা করে ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু যেতেও এমন ভোগান্তি ভালো লাগে না।
রামপুরার বাসিন্দা মো. হাদিউজ্জামান সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে কমলাপুর স্টেশনে আসেন। তিনি যাবেন ঠাকুরগাঁও। তিনি একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী। ট্রেনটি সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারবে না বলে জানিয়েছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। এ ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য নতুন সময় বেলা সাড়ে ১১টা। হাদিউজ্জামান বলেন, ট্রেনে প্রতিবছরই বাড়ি যাই। প্রতিবছরই ট্রেনের টিকিট কাটতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার ট্রেন যাত্রার সময়ও দেরি হয়। এ সিস্টেমের কোনো পরিবর্তন নেই।
রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের ট্রেনের দেরি প্রসঙ্গে যাত্রী সায়েম আহমেদ বলেন, কোন ট্রেন কখন ছাড়বে তা জানতে ১৬৩১৮ নম্বরে মেসেজ করি আমি। কিন্তু ফিরতি কোনো মেসেজ আসেনি। ৪ জুলাই অনলাইনে দু’টি টিকেট কাটি। আমি যেই গন্তব্যে যাব তার টিকিট না থাকায় বেশি দামে দূরের স্টেশনের টিকিট কাটি। এ ট্রেন দেরি হওয়াটা সময়ের অপচয়। সন্তান, পরিবার নিয়ে এক ধরনের শারীরিক ভোগান্তিতে আছি। বাসের টিকিট পাইনি বলে ট্রেনে যাত্রা। তবে কোরবানিতে বাড়িতে ঈদ করতে যেতে পারছি এটাই আনন্দের।
সার্বিক বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত আমাদের ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের কথা ছিল। কিন্তু গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় হঠাৎ চাপ বেড়ে গেছে। এ সময়ে ৬০ হাজারের জায়গায় প্রায় ২ লাখ যাত্রী ট্রেনে যাত্রা করেছেন। তবে যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। যাত্রীর চাপ থাকায় বাড়ি ফেরা মানুষ কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েন। তবে আমরা চেষ্টা করছি ট্রেনের সিডিউল ঠিক রেখে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন