গতিশীল পৃথিবী শুরু হতে এখন পর্যন্ত অনেক পথ অতিক্রম করেছে। কত বছর, কত যুগ কতকাল অতীতের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, তার হিসাব পাওয়া মুশকিল। এই পৃথিবীতে মানব জাতির আগমনের পূর্বেই একে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছুর দরকার, তার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। সাজানো গোছানো এবং জীবন ধারণের সম্পূর্ণ উপযোগিতার পর মানুষকে ‘খলীফা’ বা প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মানুষ যেন আল্লাহর পছন্দনীয় ও মনোনীত জীবনব্যবস্থায় অবিচল থাকে, তজ্জন্য যুগে যুগে, কালে কালে প্রেরণ করা হয়েছে বহু নবী এবং রাসূল। আর তাদের কাছে নাজিল করা হয়েছে বৃহত্তর পরিসরের চার খানি কিতাব এবং ক্ষুদ্র পরিসরের একশত খানা সহীফা বা ছোট কিতাব। এই পৃথিবীতে কতজন নবী ও রাসূল প্রেরীত হয়েছেন এতদপ্রসঙ্গে সংখ্যার বিভিন্নতা লক্ষ করা যায়। এক বর্ণনায় এসেছে, তাদের সংখ্যা সর্বমোট এক লক্ষ চব্বিশ হাজার এবং অপর বর্ণনায় দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার পাওয়া যায়।
তবে, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) হলেন সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর পর আর কোনো নবী রাসূলের আগমন পৃথিবীতে ঘটবে না। তিনি হলেন সমগ্র বিশ্ববাসীদের জন্য মনোনীত নবী ও রাসূল। কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ এই পৃথিবীতে আগমন করবে তারা সকলেই তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত বলে পরিগণিত হবে। হযরত আদম (আ.) প্রথম মানুষ এবং প্রথম নবী ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই এই পৃথিবীতে নবী ও রাসূলদের আগমনের দরজা উন্মুক্ত করা হয়েছে। এবং বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে সে দরজা বন্ধ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের সুসংবাদ পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবেও রয়েছে। এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : আর যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল ‘হে বনী ইস্রাঈল’। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আগমন করবেন, যার নাম আহমাদ। অতঃপর সে যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে আগমন করল, তখন তারা বলল, এটাতো প্রকাশ্য যাদু। (সূরা ছফ : ৬)।
প্রিয় নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শেষ নবী হওয়ার ঘোষণাও আল কুরআনে উক্ত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : মোহাম্মাদ (সা.) তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। বস্তুত, আল্লাহ সকল বিষয়েই সর্বজ্ঞ। (সূরা আহযাব : ৪০)। প্রকৃতপক্ষে নবুওতের সিলমোহর হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম (সা.) বলেছেন : আমি আল্লাহর নিকট খাতামুন্নাবিয়্যিন হিসেবে তখনোও লিখিত ও নির্দিষ্ট ছিলাম, যখন আদম (আ.) মাটির গাড়া হিসেবে পড়েছিলেন। (মোসনাদে আহমাদ)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমার ইবনে আস (রা.) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে স্বীয় প্রতিটি সৃষ্টির তাকদির ঠিক করে দিয়েছেন এবং লাওহে মাহফুজে এ কথাও লিখে দিয়েছেন যে, মোহাম্মাদ (সা.) খাতামুন্ নাবিয়্যিন। (সহীহ মুসলিম) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : আমার ও আমার পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরামের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এরূপÑ এক ব্যক্তি একটি সুন্দর সুরম্য অট্রালিকা নির্মাণ করল। কিন্তু এক কোনে একটি ইটের জায়গা খালি রেখে দিলো। অতঃপর লোকেরা এসে অট্টালিকা ঘুরেফিরে দেখতে লাগল। এবং তারা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে বলতে লাগল ওই ইটটি কেন লাগানো হয়নি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : আমিই সেই ইট, আমিই সর্বশেষ নবী। (সহীহ বুখারী ৪/৩৫৩৫)।
হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর খাঁটি উম্মতগণ খ্রিষ্টীয় একবিংশ শতাব্দীর চলমান সময়ে নানা রকম নানাভাবে দুঃখ-কষ্ট, অত্যাচার-নির্যাতন ও প্রাণনাশের ভেতর দিয়ে দুর্বিষহ দিন গুজরান করে চলেছে। ইসলামের শত্রুরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরা এবং আল কুরআনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনকারীরা সর্বাত্মকভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের বিনাশ সাধনে উঠেপড়ে লেগেছে। এহেন সঙ্কময় মুহূর্তে মুমিন-মুসলমানদের করণীয় কী, তা মহান আল্লাহপাক কুরআনুল কারীমে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে : অবশ্যই ধনসম্পদে এবং জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা করা হবে এবং অবশ্যই তোমরা পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছ থেকে এবং মুশরেকদের কাছ থেকে বহু অশোভন উক্তি শুনবে, (এমতাবস্থায়) তোমরা যদি ধৈর্য-ধারণ করো এবং তাকওয়া ও পরহেজগারী অবলম্বন করো, তবে তা-ই হবে একান্ত সৎ সাহসের কাজ। (সূরা আলে ইমরান : ১৮৬)।
তাই, মুমিন মুসলমানদের উচিত ঈমান, আমল ও ব্যবহারিক জীবনে ধৈর্যের বাঁধনকে অটুট রাখা, তাকওয়া ও পরহেজগারীসহ সৎ সাহসকে অগ্রাধিকার প্রদান করা এবং তা জীবন ও জগতের সকল অঙ্গনে বাস্তবায়নের জন্য সুদৃঢ় কর্মপন্থা গ্রহণ করা। আল্লাহপাক আমাদের এহেন তাওফীকে রাফীক এনায়েত করুন, আমীন !
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন