গত মার্চেই করাচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার ম্যাচ বাঁচানো ১৯৬ রানের ইনিংসটি এখনো চোখে লেগে আছে। মাস তিনেক যেতে না যেতেই গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে গতকাল আবার বিস্ময়ে মুগ্ধ করে রেখেছেন বাবর আজম। ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি পেয়েছেন, তাতে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে ২২২ রানের জবাবে পাকিস্তান ইনিংস শেষ করতে পেরেছে ২১৮ রানে। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরিটা করেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক, সেটি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা গল্প হয়েই থাকবে। তা-ও এমন দিনে সেঞ্চুরিটা এল, যেদিনে ইনিংসে ২১ রান করার পথেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন বাবর, সেটিও রেকর্ড গড়েই। মাইলফলকটাতে পাকিস্তান তো বটেই, এশিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যেই দ্রুততম বাবর (২২৮ ইনিংস), সব মিলিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে পঞ্চম দ্রুততম।
ক্রিকেট ইতিহাসে অবশ্য এর চেয়েও বড় দাগ রেখেছেন প্রবাত জয়াসুরিয়া। এদিন তার দাপটেই ৮৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল পাকিস্তান। এর পাঁচটিই জয়াসুরিয়ার। টেস্ট ইতিহাসে নিজের প্রথম তিন ইনিংসেই পাঁচ উইকেট পাওয়া তৃতীয় বোলার এই বাঁহাতি স্পিনার। তার আগের দুজন অস্ট্রেলিয়া ক্ল্যারি গ্রিমেট ও ইংল্যান্ডের টম রিচার্ডসন। সেটিও ৯৬ বছর আগে!
কিন্তু বাবরের অবিশ্বাস্য সেঞ্চুরির পর সব মাইলফলক যেন আড়ালেই পড়ে গেছে। শেষ ৬৪ রানই যে বাবর করেছেন ১১তম ব্যাটসম্যান নাসিম শাহকে সঙ্গী করে! নাসিম দারুণ সঙ্গ দিয়ে গেছেন বাবরকে। শেষ পর্যন্ত নাসিম অপরাজিত ছিলেন ৫২ বলে ৫ রানে। শেষ জুটিতে ৭০ রানই পাকিস্তানের ইনিংসে সর্বোচ্চ, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি চতুর্থ উইকেটে বাবর-রিজওয়ানের ৪০ রানের।
জুটিতে রানের হিসাবে নাসিমের অবদান দিয়ে কিছু আসে-যায় না, রাজিতাকে চার মেরে ইনিংসে প্রথম রানই নাসিম করেছেন ৩৯তম বলে। রানটা করে যেভাবে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন, সেটিও দারুণ লাগার কথা সবার কাছেই। কিন্তু যেভাবে একের পর এক বল খেলে লঙ্কান বোলারদের হতাশ করেছেন, বাবরকে সময় আর নির্ভরতা জুগিয়েছেন, সেটিও মুগ্ধতা ছড়ানোর বিবেচনায় বাবরের সেঞ্চুরির চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে থাকবে না।
তবু দিন শেষে সব আলো তো বাবরের দিকেই থাকবে! আগে দিনের শেষ ভাগে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছিল, বাবর দিন শেষ করেছিলেন ১ রানে অপরাজিত থেকে। গতকাল দিনের তৃতীয় বলেই সঙ্গী আজহার আলীকে হারালেন, এরপর তাঁকে এক প্রান্তে অসহায় দর্শক রেখে রিজওয়ান, নওয়াজরা যেন বিদায়ের মিছিলে নেমেছেন। ৮৫ রানেই ৭ উইকেট হারায় পাকিস্তান। মধ্যাহ্নবিরতিতে যাওয়ার সময় রান ৭ উইকেটে ১০৪, বাবরের রান তখন ৩৪। ঠিক সেখান থেকেই নাসিমকে নিয়ে বাবরের অসাধারণ লড়াইয়ের শুরু!
ইনিংসের ৬০তম ওভারের শেষ বলে হাসান আলী আউট হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই ফিফটি পেয়েছেন বাবর (৯৮ বল, ৫ চার)। সেখান থেকে শেষ জুটিতে মূলত ওভারের শেষের দিকের এক-দুটি করে বলই দিয়েছেন নাসিমকে, তা না হলে শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রেখেছেন। ৮৪ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় পাকিস্তান। ওভারের শেষ বলটি নাসিম ঠেকিয়ে দিতেই বাবরের কী চাপা উচ্ছ্বাস! তার সেঞ্চুরি তখন মাত্র ৫ রান দূরে, বিরতিটা তখন না এলেই হয়তো ভালো হতো তার জন্য। কিন্তু সেদিকে যেন ভ্রুক্ষেপ নেই বাবরের! শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পাকিস্তান ব্যবধান যে তখন মাত্র ২৮ রানের, নবম উইকেট পড়ার সময়ও যেটি ছিল ৭৪ রানের!
চা বিরতির পর অবশ্য বাবরের সেঞ্চুরি পেতে সময় লাগেনি। বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় বলেই চার মারলেন তিকশানার বলে, তার ইনিংসের দশম চার। এর পরের বলেই সিঙ্গেল। সেঞ্চুরি! এরপর বেশিক্ষণ অবশ্য আর টিকতে পারেননি। জয়াসুরিয়ার দুই ওভারে একটি করে চার ও ছক্কা মেরেছেন, আগ্রাসনের ইঙ্গিত ছিল তার ব্যাটে। কিন্তু ৯১তম ওভারের পঞ্চম বলে তিকশানাকে লেগ সাইডে ঠেলে সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টাতেই আউট। বল ব্যাটেই লাগেনি, প্যাডে লেগেছে। এলবিডব্লু। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি বাবর। কিন্তু ২২৪ বলে ১১৯ রানের ইনিংসটিই যে ম্যাচে ভালোভাবে ফিরিয়ে এনেছে পাকিস্তানকে। দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে দিমুথ করুণারত্নের উইকেট হারিয়ে ৩৬ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা : ২২২ ও দ্বিতীয় ইনিংস ১১.৫ ওভারে ৩৬/১ (ওশাডা ১৭*, করুনারত্নে ১৬, রাজিতা ৩*; নওয়াজ ১/১২)।
পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ২১৮/১০ (বাবর ১১৯, রিজওয়ান ১৯, ইয়াসির ১৮, হাসান ১৭, শফিক ১৩, নাসিম ৫*; জয়াসুরিয়া ৫/৮২, মেন্ডিস ২/১৮, তিকশানা ২/৬৮, রাজিতা ১/৪২)। দ্বিতীয় দিন শেষে
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন