এখন থেকে ঋণের ভালোমন্দের দায় ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, যে গ্রাহককে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ঋণ দিয়েছে সেটি ভালো হলেও পরিষদের, খারাপ হলেও তার দায় পরিষদের ওপর পড়বে। যেহেতু ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকেই স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, খেলাপি সুবিধা পরিষদ দেবে, রিশিডিউলও তারা করবে। তাই ঋণের ভালোমন্দের দিকটাও তাদের নিতে হবে।
গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজেমি সেন্টারে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ঋণ নিয়মিত করার ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে দেয়ায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত টাকা ফেরত দেবেন। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই বলেছিলেন সেন্ট্রাল ব্যাংক অ্যাপেক্স বডি হিসেবে কাজ করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার গ্রাহককে চেনেন। ব্যাংকগুলো রিশিডিউল কীভাবে করবে তা তারা ঠিক করবেন, যেহেতু গ্রাহককে তারা চেনেন। কোনো খেলাপিকে কী সুবিধা দেয়া হবে এটা ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ খেলাপিকে সুবিধা দেয়া না, আবার ব্যাংকের গ্রাহককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেনে না। বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি করবে, অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেবে। মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত সোমবারের সার্কুলারে ঢালাওভাবে খেলাপিকে সুযোগ দেয়া হয়নি। একটা পেক্ষাপটের কারণে সার্কুলার হয়েছে, আবার পুনরায় সার্কুলারও হয় অনেক সময়। তবে অপারেশনাল কাজটা ব্যাংকগুলো নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে করবে। এটা তাদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এতে জবাবদিহি বাড়বে, খেলাপি কমবে। এ স্বাধীনতা ব্যাংকগুলোর ওপর দেয়ার ফলে এখন থেকে ব্যক্তি ও বোর্ডের ওপর দায়ভার চলে যাচ্ছে।
নতুন ওই সার্কুলার কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান গভর্নর খাঁটি মানুষ, তিনি ব্যাংককে ওন (ধারণ) করেন। নিজ উদ্যোগে তিনি কাজ করছেন। কারও চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। এই সার্কুলারের পরে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত টাকা ফেরত দেবেন এবং খেলাপি ঋণ কমে আসবে। এখানে ঋণ বিতরণকারী জুনিয়র কর্মকর্তাদেরও দায়ী করা হবে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যাংকের পরিষদকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা জারি করে। ওই নির্দেশনা মতে, এখন থেকে খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেয়া হবে তা নির্ধারণ করতে পারবে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পরিষদ। ব্যাংক মালিকরাই এখন ঋণখেলাপিদের কী সুবিধা দেয়া যাবে তা ঠিক করে দেবেন। এতদিন বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগতো। সেই ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে থাকছে। নতুন ওই নির্দেশনা মতে, এখন থেকে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে আড়াই থেকে সাড়ে চার শতাংশ অর্থ জমা দিলেই হবে। এর আগে নিয়মিত করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় পেলেও এখন পরিশোধ করা যাবে ৫ থেকে ৮ বছরে। একই সঙ্গে নতুন করেও ঋণ পাওয়া যাবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, করোনার দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব, বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে উদ্ভূত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। নতুনভাবে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন