মোবাইল ফোন অপারেটরদের শুধু গ্রাহক নয়, সেবার মান বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রবণতা হলো তারা গ্রাহক বাড়াতে চায়। কিন্তু সে তুলনায় সেবার মান বাড়াচ্ছে না। তারা মনে করছে যেরকম সেবাই তারা দিক গ্রাহক চিরদিন তাদের কাছে থাকবে। মান না বাড়ালে বিলিন হয়ে যাবে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত 'নেটওয়ার্ক উন্নয়নে অবকাঠামো ভাগাভাগির চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অপারেটরদের নিজেদের স্বার্থে মান বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, সংসদে গেলেই সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন শুনতে হয়- কল ড্রপ কেন? নেটওয়ার্ক থাকে না ইত্যাদি। তিনি বলেন, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সেবার মান উন্নত করা। অপারেটরদের নিজেদের স্বার্থে মান উন্নত করতে না পারলে টিকে থাকতে পারবে না। গ্রাহক দরকার আছে, সাথে সাথে গ্রাহকের সন্তুষ্টিও নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে যদি সেবাদাতারা খাপ খাওয়াতে না পারে তাহলে বিলিন হয়ে যাবে।
অবকাঠামো ভাগাভাগির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, অপ্রয়োজনে একই জায়গায় একাধিক অবকাঠামো গড়ে তোলা সমীচিন নয়। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যে অবকাঠামো আমরা গড়ে তুলছি তা যেন একে অপেরর সাথে ভাগাভাগি করতে পারি। অ্যাকটিভ শেয়ারিংটা জরুরি।
তিনি বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে তাদের হাতে যে টাওয়ারগুলো আছে তা টাওয়ার কোম্পানিগুলোকে দিয়ে দিন। কোম্পানিগুলো সেগুলো শেয়ার করুক, শেয়ার করার ক্ষেত্রে চারটি অপারেটরই যাতে নিতে পারে সে সুযোগ তৈরি করতে হবে। এর ফলে মোবাইল অপারেটরদের বিনিয়োগ কমে যাবে, সেই অর্থ তারা সেবার মান উন্নত করতে বিনিয়োগ করতে পারবে।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, সকলেই শুধু তাদের মার্কেট সাইজ বৃদ্ধি করতে মনোযোগী, সেবার মান বৃদ্ধিতে ততটা মনোযোগী না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগে জনগণের স্বার্থ দেখবে তারপর লাইসেন্সি’র। এজন্য সেবার মান উন্নত করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
ব্যয় কমাতে অবকাঠামো ভাগাভাগি জরুরি উল্লেখ করে বলেন, এখন সর্বত্রই ব্যয় সঙ্কোচনের কথা বলা হচ্ছে। অবকাঠামো শেয়ারিং হলে সকলের ব্যয় কমে যাবে। তবে অবকাঠামো ভাগাভাগিতে গ্যাপ কোথায় তা দেখতে হবে। আমােদর দেশে যারা টেলিকম সেবাদাতা তারা কেউ কেউ মাকের্ট সাইজটা বৃদ্ধি করতে মনেযাগী সেবার মান বৃদ্ধি করতে মনযোগী কম। শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে অপারেটরদের অহীনা আছে, কিছুটা সমন্বয়হীনতাও আছে। বিটিআরসি এ বিষয়ে কাজ করছে । সরকার যে সাশ্রয়ের কথা বলছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, এ সাশ্রয় করতে গেলে শেয়ারিংটা মাস্ট। অনেক কিছুই আছে নতুন কোন নীতিমালা দরকার নেই, কিছু কিছু জায়গায় ভুলবুঝাবুঝি আছে তা সমাধান করতে হবে যা রিভিউ করা দরকার।
টিআরএনবি’র সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল মতিন, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাব উদ্দিন আহমেদ, ফাইবার এট হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনুল হক সিদ্দিকী, বিআইডিএসের গবেষক মঞ্জুর হোসেন, রবি আজিয়াটার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (স্পেকট্রাম অ্যান্ড রেগুলেশন) অনামিকা ভক্ত, গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত, বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, আইএসপিএবি’র সভাপতি এমদাদুল হক, ইডটকোর কান্ট্রি ম্যানেজার রিকি স্টেইন। উপস্থিত ছিলেন-টিআরএনবি’র সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন-টিআইএম নুরুল কবির।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, গত ২৫ বছরে মোবাইল অপারেটর টাওয়ার শেয়ারিং মাত্র ১৭% পৌঁছেছে। টাওয়ার লাইসেন্সিং চালু পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের মে মাসে এ বিটিআরসি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি (মোবাইল অপারেটর-টাওয়ার কোম্পানি- মোবাইল অপারেটর) সম্পাদনের নির্দেশ দিলেও কিছু মোবাইল অপারেটর অন্য মোবাইল অপারেটর নিজস্ব টাওয়ারের শেয়ারিং করতে চাইলেও গত প্রায় ৪ বছরে কোন শেয়ারিং হয়নি।
আলোচকরা বলেন, নেটওয়ার্ক তৈরির প্রতিযোগিতায় অপরিকল্পিতভাবে বিটিএস স্থাপন করেছে সেলফোন অপারেটররা। গত দুই দশকে সারা দেশে অপারেটর নিজস্ব টাওয়ারে বিটিএস বসিয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার। বর্তমানে অপারেটরগুলোর মধ্যে রবি ৩০%, গ্রামীণফোন ১৮%, বাংলালিংক ১৭% শেয়ার করছে। অপারেটরেদের হাতে থাকা ২৪ হাজার ৪২৫ টাওয়ারেরর মাত্র ১৭ % টাওয়ার শেয়ার হচ্ছে।
পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব, ভূমি ও জ্বালানি ব্যয় কমিয়ে এনে টাওয়ারের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ নীতিমালা করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে অবকাঠামো ভাগাভাগি নীতিমালা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)। ২০১১ সালে তা সংশোধনও করা হয়। মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় বিপুল ব্যয়ের পাশাপাশি টাওয়ারের অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যা, ভূমি ও বিদ্যুতের সংকট ছাড়াও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাবসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে টাওয়ারকো লাইসেন্সও দেয় বিটিআরসি। এ লাইসেন্স হওয়ার পর অপারেটররা টাওয়ার তৈরি করতে পারছে না। চার প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল ফোন টাওয়ার শেয়ারিংয়ের লাইসেন্স দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ইডটকো বাংলাদেশ, সামিট টাওয়ারস লিমিটেড, কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড এবং এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন