বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

এই গরমে নিজের ও পরিবারের যত্ন

| প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে দাবদাহ, যাতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গরম যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে ততই বাড়ছে অসুস্থতা। প্রচন্ড গরমে নানারকম অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারন মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে গরমের সময়টা একটু বেশিই বিপজ্জনক। অতিরিক্ত গরমে প্রায়ই দেখা যায় হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারন মানুষ ।

প্রচন্ড এই গরমে প্রায়ই হিট স্ট্রোকের ঘটনা ঘটছে। দ্রুত এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা না পেলে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির ব্রেইনসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গসমূহ পুরোপুরি অকেজো হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই হিট স্ট্রোক সম্পর্কে প্রত্যেকেরই কমবেশি কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাহলে চলুন হিট স্ট্রোক কি, এর লক্ষন এবং হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সর্ম্পকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে তৈরি একধরনের জটিলতার নাম হিট স্ট্রোক। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা গড়ে ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এটি ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি হলেই হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ সমস্যায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। হিট স্ট্রোক হলো এমন একটি চিকিৎসাগত জরুরি অবস্থা যার ফলে শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যায়। একথা কে না জানে যে গরম একা আসে না, সঙ্গে নিয়ে আসে এমন কিছু সমস্যা যা বাস্তবিকই ভয়ের বিষয়। রুগীর যে কোন অঙ্গই এসময় বিকল হয়ে যেতে পারে, সাথে থাকে প্রচন্ড ক্লান্তি এবং পেশিতে ক্র্যাম্প লাগার মতো আসুবিধা।

এই গরমে খোলা জায়গায় এমনকি ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকলেও শরীরের অন্দরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে পানি এবং লবণের পরিমাণ কমে গিয়ে দেখা দেয় সমস্যা। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, বমি ভাব, ত্বক গরম হয়ে যাওয়া, চোখের সামনে বারে বারে অন্ধকার হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি প্রভৃতি লক্ষণগুলির বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে ঠান্ডা জায়গায় বসিয়ে পানি খাওযাতে হবে। প্রয়োজনে সারা গায়ে পানি ঢাললেও আরাম মিলতে পারে। এই অবস্থায় সূর্যের প্রখর তাপ সরাসরি শরীরে লাগার পর, শরীর তার স্বাভাবিক তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। সাধারণত, উচ্চ-তাপমাত্রায় শরীর স্বাভাবিকভাবে নিজেকে ঠান্ডা করে রোমকূপের মাধ্যমে ঘাম বের করে দিয়ে, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে শরীর তার সেই স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে পারে না। তাপজনিত এই সমস্যা গ্রীষ্মকালে খুব সাধারণ ব্যাপার। যা অত্যাধিক তাপের সংস্পর্শে আসার ফলে বাচ্চা ও বয়ষ্কদের উপরেই বেশি প্রভাব ফেলে। যারা বাইরে কাজ করেন, তাঁরাই বেশী হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। যদি হিট স্ট্রোকের পর অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এটা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রতঙ্গকে নষ্ট করে দিতে পারে এবং তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

> করণীয় ঃ-
* ঠান্ডা পরিবেশে থাকুন : ঘরে ভিতরে যথাসম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে অবস্থান করুন। অপ্রয়োজনীয় কারণে দিনে, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাইরে বের না হওয়াই ভালো। বের হলে অবশ্যই ছাতা সাথে নিবেন। গরমে কালো রঙের ছাতা পরিহার করুন।
* প্রচুর পানি ও তরল পান করুন : সারা দিন প্রচুর পানি পান করুন। বাইরে বের হওয়ার সময় পানি সাথে নিন। দিনে কমপক্ষে তিন লিটার পানি পান করুন।

* আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন : গরমে আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। বাচ্চাদের জন্য সুতির হাল্কা রঙের কাপড় নির্বাচন করুন। খুব গরমে কালো রঙ পরিহার করুন।
* মৌসুমী ফল গ্রহণ করুন : প্রচুর পরিমাণে ফল ও ফলের জুস খান। গরমের সময় টক ফল খুবই ভালো। কিন্তু যাদের নিম্ন রক্তচাপ, গরমের সময় তারা অতিরিক্ত টক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

* সবুজ সালাদ বা সবজি খান : প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ সালাদ বা সবজি রাখুন। এতে শরীরে পানি ও খনিজের ঘাটতি হবে না এবং শরীর ঠান্ডা থাকবে।

> বর্জনীয় ঃ-
* সফট অথবা হার্ড ড্রিঙ্কস নেওয়া থেকে বিরত থাকুন : অতিরিক্ত গরমে সফট অথবা হার্ড ড্রিঙ্কস নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ড্রিঙ্কস শরীরের পানিকে নিরূদিত করে যা শরীরে পানি স্বল্পতা তৈরী করে। এছাড়াও ঘন ঘন পানি পিপাসা পায় এবং গলা শুখিয়ে আসে। তাই গরমে সাময়িক তৃষ্ণা মেটাতে অবশ্যই ড্রিঙ্কস না।
* পানি পানের সময় সতর্ক থাকুন : গরমের কারণে যেকোনো জায়গা থেকে পানি পানে বিরত থাকুন। দূষিত পানি থেকে পানিবাহিত রোগ হতে পারে। এজন্য পানি পান করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। বাইরে পানি পান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই মিনারেল ওয়াটার গ্রহণ করুন।

* ফাস্টফুডকে না বলুন : ফাস্টফুড এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবারকে না বলুন। ফাস্টফুড এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবার শরীরের জন্য খারাপ। গরমে তেলে ভাজা বা রিচ ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। গরমে এ জাতীয় খাবার যত বেশী খাবেন, তত বেশী গরম লাগবে। সুতরাং এ ধরনের খাবার না খাওয়াই ভালো। স্ট্রীট ফুড বর্জন করুন অতিরিক্ত এই গরমে।

* স্যালাইন খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন : গরমের কারণে ঘরে থাকতে চাইলেও সবার জন্য তা সম্ভব নয়, অনেকেই আছেন একটু আয়ের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেন। তাদেরকে কাজের জন্য বাইরে যেতেই হয়। অনেকেই আছেন দিন আনেন দিন খান। সেক্ষেত্রে যেন শরীরে পানি বা লবণের স্বল্পতা না হয় এই জন্য স্যালাইন খেতে পারেন। বাইরে চলাচলের সময় কাছে স্যালাইন রাখতে পারেন। যদি শরীর দুর্বল মনে হয়, সেক্ষেত্রে সাথে সাথে স্যালাইন খেয়ে নিতে পারেন। এতে দুর্বলতা কমবে। প্যাকেটের গায়ে নির্দেশিত পরিমাণ পানির চেয়ে কম পানি দিয়ে স্যালাইন খাবেন না। শুধু স্যালাইন গুড়া খেলে বা কম পানি দিয়ে স্যালাইন খেলে লবণের ঘনত্ব বেড়ে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

> পরামর্শঃ- এই গরমে নিজের পাশাপাশি পরিবারের যত্ন নিন। বাইরে চলাফেলার সময় বয়স্ক এবং শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন এবং তাদেরকে অগ্রাধিকার দিন যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে। কেউ অসুস্থ হলে সচেতনতার সাথে সিদ্ধান্ত নিন।

> হোমিওসমাধানঃ রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা করা হয়, তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিট স্ট্রোক রোগীর রোগের পুরা লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে আল্লাহর রহমতে হোমিওতে নিরাময় সম্ভব। বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক বৃন্দ প্রাথমিক ভাবে যেই ঔষধ নির্বাচন করে থাকেন, বেলেডোনা, আর্সেনিক অ্যালম্বা, ব্রায়োনিয়া, কেলকেরিয়া কার্ব, কেলকেরিয়া সালফ, ডালকামারা, হিপার সালফ, কেলি আয়োড, মার্কসল, চায়না, ন্যাট্রাম মিউর, জেলসিয়াম, ন্যাট্রাম সালফ, নাক্স ভম সহ আরো অনেক ঔষধ লক্ষণের উপর আসতে পারে। তাই মেডিসিন নিজে নিজে ব্যবহার না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পরিশেষে বলতে চাই, এই গরমের কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অবহেলা করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এতে যেকোনো খারাপ পরিণতি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সহজ হবে। গরমে নিজেকে সুস্থ রাখার প্রচেষ্টা থাকুক। কারণ সবার আগে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে নিজেকেই।

মুহাম্মদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
ইমেইল: drmazed96@gmail.com
মোবাইল: ০১৮২২- ৮৬৯৩৮৯।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন