সুনামগঞ্জের ছাতকে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ভেঙ্গে গেছে অনেক পাকা সড়ক। বিশেষ করে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের অস্তিত্বই নেই বললে চলে। পাকা ও মাটি সরে গিয়ে অনেকগুলো রাস্তা বড় বড় গর্ত ও খালে পরিনত হয়েছে। বন্যার পানি নামলেও ছাতকের বিভিন্ন ইউনিয়নের সাথে এখনো সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ছাতকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক বন্যায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। গ্রামঞ্চলের অনেক গুলো কাঁচা সড়ক নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বন্যায় এখানে রাস্তা- ঘাটের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজনরা জানান, ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে ছাতক-দোহালিয়া-সুনামগঞ্জ সড়ক, শ্যামপাড়া-কান্দিগাঁও, মিত্রগাঁও-বঙ্গবন্ধু সড়ক, বুরাইয়া-বসন্তপুর, চরমহল্লা-চাঁনপুর, নোয়ারাই-চৌমুহনীবাজার, মাদরাসাবাজার-নোয়াকোট, বড়কাপন-শ্রীপুর, কালারুকা তাজপুর, ঝাওয়া, হাসনাবাদ, ঝামক, কালারুকা, বাউসাবাজারসহ অসংখ্য সড়কে।
ছাতক-দোয়ারাবাজার, নরশিংপুর, জাউয়াবাজার সড়ক, কৈতক- হায়দারপুর, জাউয়া-ভমভমি, জালালপুর- লামারসুলগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ-লাকেশ্বর, বুড়াইরগাঁও-আলমপুর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা মাটি ভরাট করে দিয়ে কিছুটা যান চলাচলের উপযোগী করেছেন।
উপজেলার কালারুকা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নের প্রায় সব ক'টি কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে। কালারুকা-তাজপুর, মুক্তিরগাঁও-গৌরিপুর, বঙ্গবন্ধু মিত্রগাঁও সড়ক, রাজাপুর-নোয়াগাঁও সড়ক বন্যায় প্রবল স্রোতে প্রায় বিধ্বস্ত।
এছাড়া বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ছাতক-সিলেট রেলপথ। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ থেকে এ রেলপথটিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট-ছাতকবাজার রেলপথটি প্রায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় রেলপথের মাটি ও পাথর ভেসে গিয়ে ঝুলে আছে লাইন ও স্লিপার। লাইনের বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বন্যায় তছনছ হওয়া পুরনো রেলপথটি মেরামত করে পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী আফছর আহমদ জানান, ছাতকে বন্যায় এলজিইডির অধীনে ২০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর ভেঙ্গে গেছে। এতে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। তিনি আরো জানান, ৪-৫ টি সড়ক সাময়িকভাবে চলনসই করতে জরুরি মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ সকল রাস্তার তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দপ্তরে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ছাতকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম আহমেদ সিদ্দিকী জানান, ছাতক ও দোয়ারাবাজার দুই উপজেলায় সওজ বিভাগের ১২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। এরমধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। সড়ক ভেঙ্গে প্রায় ৭৫ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন