শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ভয়ডরহীন ক্রিকেটের মন্ত্র সোহানের

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

এক সিরিজ আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দলেই জায়গা ছিল না নুরুল হাসান সোহানের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখনো পর্যন্ত তার যা পরিসংখ্যান তাতে দলে জায়গা থিতু হওয়ার অবস্থাও ছিল না। প্রেক্ষাপট বদলে এবার তিনি রীতিমতো অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহকে সরিয়ে নতুন ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টির যে পরিকল্পনা করেছে বিসিবি, তার প্রথম ধাপে সোহান দায়িত্ব নিয়ে অবশ্য খুব বেশি নতুন কথা শোনাতে পারলেন না। তবে আলাদা করার মতো কথা হচ্ছে, নিরাপদ পথে না হেঁটে ঝুঁকি নিতে পরোয়া করবেন না তিনি।
আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক করা হয়েছে তাকে। এই সিরিজের পর বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন পুরনো নেতা সাকিব আল হাসান। সোহানের জন্য তাই এই সিরিজটা ঠেকার কাজ চালানোর মতো। তবে স্টপগ্যাপেও চাইলে নিজের সামর্থ্যরে প্রমাণ দেওয়া যায়, আগামীর বার্তাও দিয়ে রাখা যায়। মাঠের খেলায় বিসিবিরও তার প্রতি সেই প্রত্যাশা। তার আগে গণমাধ্যমে নিজের চিন্তা জানাতে এসে অনেক প্রশ্নের মুখে ঠিক আলাদা করে তার ক্রিকেটীয় গভীরতার পরিচয় পাওয়া গেল না। টি-টোয়েন্টির দুর্দশা কাটাতে আগের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বারবার বলতেন, সাফল্যের জন্য তারা খেলতে চান দল হিসেবে। সোহানের মুখেও এদিন শোনা গেল এই কথাই, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে যখনই অধিনায়কত্ব করেছি, সব জায়গায় দল হিসেবে খেলার চেষ্টা করেছি। এই কালচারটাই ধরে রাখতে চাই। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে আমরা পিছিয়ে আছি। এই মুহূর্তে দল হিসেবে খেলতে চাই।’
ক্রিকেট দলীয় খেলা। দল হিসেবে না খেলে কেবল ব্যক্তিগতভাবে এখানে খেলা যায় না। প্রতিটি দলই তাই দল হিসেবেই খেলে। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ খেলে না। দল হিসেবে খেলার কথা ২০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে এলো আরও একাধিকবার। কিন্তু বাংলাদেশ দলের মূল সমস্যা বোধহয় এখানে নয়। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে যে ধরণের আগ্রাসী মনোভাব ও তীব্রতা থাকা উচিত তার অভাব দেখা যায় বাংলাদেশ দলে। ২৮ পেরুনো সোহানের একটা কথা থেকে অবশ্য বোঝা গেল সেই আগ্রাসনের দিকে ইতিবাচক চোখ আছে তার, ‘ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। রেজাল্ট নিয়ে বেশি চিন্তা করলে হবে না। ভয়ডরহীন থাকলে ভালো কিছুই হবে। যখন ফিয়ারলেস থাকবেন, তখন অনেক অপশন বেরিয়ে আসবে। সেটাই চেষ্টা থাকবে। যেন আমরা দল হিসেবে খেলতে পারি এটা নিশ্চিত করা।’
২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের পর এখনো পর্যন্ত ৩৩টা ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তাতে স্রেফ ১২.৯০ গড় আর ১১১.৯৮ স্ট্রাইকরেটে মোটে ২৭১ রান করতে পেরেছেন তিনি। সর্বোচ্চ ইনিংসটা ৩০ রানের। ৩৩ ম্যাচে ২৯ ইনিংসের মধ্যে ৮বার আবার অপরাজিত ছিলেন, না হলে গড়টা থাকত দশের নিচে। এতে অবশ্য কোন অস্বস্তি নেই তার। কত রান করলেন, তারচেয়ে তিনি দেখতে চান কোন পজিশনে কত রান করতে পারলেন। সংবাদ সম্মেলনে তাই বারবার করে শোনালেন ইমপ্যাক্টের কথা, ‘ইমপ্যাক্ট, হয়তো ১৫-২০ রান করলাম। কিন্তু এই রান সংখ্যাটা খুব কম। কিন্তু সেটা যদি দলের জয়ে অবদান রাখতে পারি।’ মূলত সাত নম্বরে নামা হয় সোহানের। ওই সময়ে কম বলে বেশি রানের দাবি থাকে প্রবল। সেই দাবি যে তিনি হরহামেশা মেটাতে পেরেছেন পরিসংখ্যান সেই সায় দেয় না, ‘আমি যে জায়গায় ব্যাট করি, সেখানে রানের সংখ্যার চেয়ে ইমপ্যাক্টটা জরুরি। এই সিরিজে সেটাই চেষ্টা থাকবে।’
অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচে ১৬ বলে ২৫ রান করেছিলেন। সøগ ওভারে নেমে তিনি যদি সেই দাবিটা মেটাতে পারেন তাহলে বড় চিন্তা দূর হবে বাংলাদেশের। সেটি তিনি ভালোভাবেই করতে পারবেন বলে বিশ্বাস বাংরাদেশ ক্রিকেটের সবচাইতে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসানের। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার বলছেন, নিজের যোগ্যতা নিয়েই পরীক্ষায় পাশ মার্ক তুলবেন কিপার ব্যাটসম্যান। গতপরশু রাতে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক টি-টোয়েন্টি দলের নতুন আদল পাওয়া নিয়ে শোনান আশাবাদী কথা, ‘আমি তো মনে করি, সে (নুরুল হাসান) যোগ্য। বিসিবিও মনে করেছে, সে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিতে পারবে। এ জন্য তাকে অধিনায়কত্ব দিয়েছে। আমি তাকে শুভকামনা জানাচ্ছি। আশা করি, জিম্বাবুয়ে সিরিজ তার জন্য একটা ভালো চ্যালেঞ্জ এবং সেই চ্যালেঞ্জটা সে উতরে যেতে পারবে।’
ভবিষ্যতে হতে পারে অনেক কিছুই। তবে বিসিবি থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে কেবল জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্যই অধিনায়কত্ব পেয়েছেন সোহান। জিম্বাবুয়ের পর এশিয়া কাপের আগে টি-টোয়েন্টি দল পাবে স্থায়ী নেতা। আর সেই নেতা যে সাকিব নিজেই তা অনেকটা ওপেন সিক্রেট ব্যাপার। সাকিবের অধিনায়কত্বে সহ-অধিনায়ক হিসেবে দেখা যাবে সোহানকে। টেস্টের পর টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্বও ফিরে পেতে যাচ্ছেন তিনি। জিম্বাবুয়ে সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে না নিলে সাকিবকে অধিনায়ক হিসেবে দেখে যেত এই সিরিজেই। সেদিক থেকে সোহান উৎরে না গেলেও খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই বিসিবির। সাকিব তো দায়িত্ব নিচ্ছেনই। অস্বাভাবিক কিছু না হলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার অধীনেই খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন