শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০৭ এএম

দেশে বিদ্যুতের রুটিন লোডশেডিং এবং সম্ভাব্য জ্বালানি সংকটে জনমনে উদ্বেগ বেড়ে চলেছে। সরকার ও পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের তরফ থেকে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা এবং আমদানি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার তথ্য দিয়ে আশ্বস্ত করা হলেও মানুষ পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না। এরই মধ্যে গুজবে কান দিয়ে কিছু কিছু পেট্রোলপাম্পে ৪০০ টাকার বেশি পেট্রোল এবং ৩ হাজার টাকার বেশি ডিজেল-অকটেন না দেয়ার নোটিশ টানানোর খবরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে বিপিসি এবং পেট্রোলপাম্প মালিকদের প্রতিনিধিরা এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের কথা অস্বীকার করেছেন। দেশে সংকট দেখা দিলে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অস্বচ্ছতা থাকলে বিশেষ গোষ্ঠি গুজব ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করতে পারে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ডিজেলের যে মজুদ আছে তাতে ৩২ দিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে দেশীয় গ্যাসের বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে উৎপন্ন পেট্রোল ও অকটেনের উৎপাদন চাহিদার তুনায় বেশি বেল জানা যায়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশে অকটেনের যে মজুদ আছে তা দিয়ে মাত্র ৯ দিনের চাহিদা মিটানো সম্ভব। নিজস্ব উৎস থেকে প্রাপ্ত পেট্রোল ও অকটেনের মজুদ অস্বাভাবিক কম থাকার যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা অনেকটা রহস্যজনক।

খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু। তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ কৃষিব্যবস্থাসহ সব উৎপাদন ব্যবস্থার প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। দেশে ৬ মাস চালিয়ে নেয়ার মতো জ্বালানির মজুদ থাকলে তা নিরাপদ বলে মনে করা হয়। একইভাবে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ৬ মাস আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে দেশে ডলারের যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে ৪ মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব। অর্থাৎ জ্বালানি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উভয় খাতেই নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছি আমরা। দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদার বেশিরভাগই মিটানো হচ্ছে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে। এর মানে জ্বালানি খাতে আমরা পুরোপুরি আমদানি নির্ভর নই। আমাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের সামর্থ্য ও সম্ভাবনার উপর ভর করে এ খাতে আমাদের আত্মনির্ভরতা অর্জন করা সম্ভব। দুই দশক আগেও আমরা শুনেছি, তেল ও গ্যাসের উপর ভাসছে দেশ। সে সময় বিদেশে গ্যাস রফতানির গুজবও শোনা গেছে। কিন্তু গত একযুগে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে বেশকিছু অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও দেশে নতুন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে তেমন কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও উন্নয়নের বদলে আমদানি করা এলএনজি দিয়ে চাহিদা মিটানোর পরিকল্পনা আমাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জ্বালানি চাহিদা পূরণে অতিমাত্রায় আমদানির উপর জোর দিলেও পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন এবং নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গত একযুগে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না। অথচ, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এ সময়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। এর সিকিভাগ অর্থও যদি দেশের জ্বালানি সম্পদ উন্নয়ন ও উত্তোলনে ব্যয় করা হতো তাহলে আজকে আমাদের জ্বালানি খাতে এতটা ঝুঁকি থাকত না। দেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়নে একমাত্র রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম কোম্পানি বাপেক্সের অবদান ও সক্ষমতা অগ্রাহ্য করা যায় না। বাপেক্সকে শক্তিশালী করে তেল ও গ্যাস খাতের উন্নয়নে কাজে লাগানোর প্রস্তাব দীর্ঘদিনের। বাপেক্সের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হলে যে ধরনের এক্সপার্ট, দক্ষ জনবল এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার তা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। ভারত ও মিয়ানমারের সাথে আমাদের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তির পর তারা সমুদ্রের বøকগুলো থেকে জ্বালানি আহরণ শুরু করতে সক্ষম হলেও আমরা এখনো সমুদ্রে প্রয়োজনীয় জরিপকাজ, বøক ইজারার মতো প্রাথমিক কার্যক্রমও সম্পন্ন করতে পারিনি। অথচ, বøু-ইকোনমি নিয়ে আমরা জাতিকে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছি। দেশীয় গ্যাস, কয়লা ও সম্ভাব্য তেলক্ষেত্র অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও উত্তোলন করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে জ্বালানি খাতে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাব্য সব বিকল্প উদ্যোগগুলোতে আরো মনোযোগ ও বিনিয়োগ করতে হবে। পানিবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দূষণসহ ফসিল জ্বালানির নানামাত্রিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতি কমিয়ে আনার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Sheikh Shakib Ahmed ২৯ জুলাই, ২০২২, ১১:০৬ এএম says : 0
আমাদের মাটি ও সমুদ্রের নিচে আরও অনেক গ্যাস মজুত আছে। এর সদ্ব্যবহার করতে প্রয়োজন ছিল অধিক অনুসন্ধান ও উত্তোলন।
Total Reply(0)
হরেশ্বর বাবু ২৯ জুলাই, ২০২২, ১১:০৭ এএম says : 0
আরেকটি বিষয় হলো যেখানে পেট্রোবাংলার গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা আছে, সেখানে বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের প্রয়োজন আছে কি না, তা–ও ভাবতে হবে।
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ২৯ জুলাই, ২০২২, ১১:০৭ এএম says : 0
অনুসন্ধান ও উত্তোলনে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা না গিয়ে এলএনজি আমদানি করার ভুল নীতি নিয়েছেন, যে কারণে দেশে যথেষ্ট গ্যাস সম্পদের মজুতের প্রাক্কলন থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি খাত ক্রমেই পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে এলএনজির দামও বেড়ে গেছে। আজ এলএনজিবাহী জাহাজ বন্দরে আসার কথা আছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো সাময়িক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
Total Reply(0)
মনির হোসেন ২৯ জুলাই, ২০২২, ১১:০৭ এএম says : 0
গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদের নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও গ্যাস উত্তোলনের দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।
Total Reply(0)
মুহাম্মদ আবুল কাশেম ২৯ জুলাই, ২০২২, ১১:০৮ এএম says : 0
গ্যাস-সংকটের কারণে ইতিমধ্যে শিল্প খাতে অভিঘাত শুরু হয়েছে। অনেক কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। রপ্তানিমুখী শিল্প, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প চাহিদামতো পণ্য সময়মতো চালান করতে পারবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
Total Reply(0)
Antara Afrin ২৯ জুলাই, ২০২২, ১১:০৮ এএম says : 0
অনেক দিন থেকেই গ্যাসের সংকট চলছিল। শিল্প খাত, পরিবহন ও বাসাবাড়িতে যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন, আমরা তা উত্তোলন করতে পারছি না, যদিও বহু বছর আগে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ গ্যাস রপ্তানির খোয়াবও দেখিয়েছিলেন। গ্যাসের বাকি চাহিদা পূরণ করা হয় বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করে। সম্প্রতি চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করতে গিয়ে বিপত্তি ঘটে।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ২৯ জুলাই, ২০২২, ১১:১০ এএম says : 0
আকস্মিক দর বাড়ায় বাংলাদেশসহ এলএনজির উদীয়মান বাজারগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সস্তা জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের দিকেই ঝুঁকেছিল দেশগুলো। অদূর ভবিষ্যতে আরো বেশি দামে গ্যাস ক্রয় করতে হতে পারে। জ্বালানি তেলের বাজারের মতো এলএনজির বাজারও অস্থির হয়ে উঠছে। এভাবে এলএনজি বাজার আরো অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে।
Total Reply(0)
মুহাম্মাদ হাবিবুল্লাহ মিসবাহ ২৯ জুলাই, ২০২২, ১১:১০ এএম says : 0
সন্দেহ নেই, গ্যাসের উদীয়মান বাজারগুলো মূলত মূল্যসংবেদনশীল এবং আসন্ন গ্যাসের অস্থির বাজারে পরিণত হতে চলেছে, ভবিষ্যতে যা আরো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। উচ্চ ও অস্থির এলএনজির দাম এলএনজি-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ব্যয়বহুল এবং অনিশ্চিত করে তুলবে। ফলে এলএনজি-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে এবং গ্রাহকদের ওপর গ্যাস ও বিদ্যুতের দামের বোঝা আরো বেড়ে যেতে পারে। গ্যাসের দরবৃদ্ধির এ অনিশ্চয়তা একসময় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়বে। সম্ভাব্য বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশের উচিত দীর্ঘমেয়াদে এলএনজির চেয়ে সস্তা, আরো স্থিতিশীল নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে নজর দেয়া।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন