ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একের পর এক সংলাপের আয়োজন করা হলেও সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দিনের পথ ধরেই হাঁটছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন
দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট বৈশ্বিক কারণে হলেও রাজনৈতিক সঙ্কট দেশজ কারণে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কার অধীনে হবে তা নিয়েই মূলত সঙ্কট। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চাচ্ছে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ক্ষমতায় থেকে ভোাট করতে। আর বিএনপিসহ অপরাপর দলগুলো চায় নিরপেক্ষ বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। নির্বাচনী সরকার পদ্ধতি নিয়ে বৃহৎ এই দুই শক্তির বিপরীতমুখী অবস্থানে রাজনৈতিক সঙ্কট আরো ঘনীভ‚ত হচ্ছে। দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিদেশি ক‚টনীতিক চায় সব দলের অংশগ্রহণে ভোট হোক। এ জন্য তারা নির্বাচন কমিশনকে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু নতুন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল যেন আগের সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দিনের পথে হাঁটতে শুরু করেছেন। এরোই মধ্যে তিনি নিজেকের ‘আনপ্রেডিক্টেবল ম্যান’ উপাধি পেয়েছেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হয় এ দাবি দেশ-বিদেশ সর্বোত্রই। ফেব্রæয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন পেশাজীবী, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের একধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশি ক‚টনীতিক এবং দাতা দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরাও ইসির সঙ্গে সংলাপ করে সব দলের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছেন। গত ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদ, ২৬ মার্চ সুশীল সমাজ পরবর্তীতে সিনিয়র সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফা ইভিএম ইস্যুতে বৈঠক এবং দ্বিতীয় দফা বৈঠক করছেন ‘নির্বাচন পদ্ধতি’ ইস্যু নিয়ে। এর মধ্যে বিএনপি, সিপিবিসহ কয়েকটি দল নির্বাচন কমিশনের সংলাপ বর্জন করেছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং বিদেশি ক‚টনীতিকদের সঙ্গে ইসির যতগুলো সংলাপ হয়েছে সবগুলোতেই পরিষ্কার দেশে এখন মূল সঙ্কট নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে। দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। দাতা দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সরাসরি কোনো দাবি না করলেও তারা পরামর্শ দিয়েছেন ‘নির্বাচন হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণমূলক আন্তর্জাতিক মানের’। নির্বাচন কমিশনের সংলাপ বর্জন করলেও বিএনপি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে দাবি করছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নয় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ চায় সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধানের জন্য মানুষ নয়; মানুষের জন্য সংবিধান। যে প্রক্রিয়ায় ’৯৬ সালে তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছে সে প্রক্রিয়ায় এবারও হতে পারে। অথবা যে প্রক্রিয়ায় সংবিধান থেকে তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দেয়া হয়েছে, সে প্রক্রিয়ায় আবার জনগণের স্বার্থে সংযোজন হতে পারে। এটা নির্ভর করছে সরকারি দল কি চায় তার উপর।
জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমরা ইসিকে জানিয়েছি ‘রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়টি প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। ভোটাররা নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছেন। ইসি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অতীতের ভুলভ্রান্তি স্বীকার করে এগিয়ে নিতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
মাঠের বিরোধী দল বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য ‘বিএনপি আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না; নির্বাচন হতে দেবেও না’। দলটির প্রায় অর্ধশত নেতা এবং শরীক দলগুলোর নেতারা একই বক্তব্য দিচ্ছেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সমাবেশে ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘গণভবন ঘেড়াও করতে গেলে তিনি বাঁধা দেবেন না এবং বিএনপি নেতাদের চা খাওয়াবেন’। এর জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগে ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন’ দাবি মেনে নিন তারপর চা খাওয়া যাবে। ২৫ জুলাই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশে কোনো সঙ্কট নেই। সঙ্কট আছে বিএনপিতে এবং তাদের নেতৃত্বে ও সিদ্ধান্তে। বিএনপি নেতাদের চাওয়া আর আবদারের কোনো শেষ নেই। তারা কখনো নিরপেক্ষ সরকার, কখনো নির্বাচনকালীন সরকার, আবার কখনো তত্তাবধায়ক সরকার এবং মাঝেমধ্যে কখনো জাতীয় সরকারের দাবি করেন।’ কিন্তু বিশিষ্টজনরা বলছেন, দেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে তা মূলত নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে। কোন পদ্ধতির সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে এ সঙ্কটের তৈরি হয়েছে।
দেশের বড় দুই দল যখন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন যেন বিভিন্ন সংলাপের আয়োজনের নামে সাংবিধানিক পদ ‘সিইসি’ উপভোগ করছেন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিদেশি ক‚টনীতিক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন, সেগুলো ফাইলে চাপা রেখে সরকারের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছেন সিইসি।
জানা যায়, ইসির সঙ্গে এক সংলাপে আওয়ামী লীগের অনুগত বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন বলেছেন, ‘ভোটের আগে ও পরে ৬ মাস নির্বাচনকালীন কর্তৃত্ব কমিশনের কাছে থাকা উচিত। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে একাদশ সংসদের অধিবেশন থাকবে না। এজন্য ভোটের আগে ৪ মাস এবং ভোটের পরে ২ মাস- এই ৬ মাসের জন্য ক্ষমতা ইসির হাতে থাকতে পারে। আস্থা অর্জন করতে পারলে সবাইকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট করা সম্ভব’।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ফেব্রæয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই ৫ মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিদেশি ক‚টনীতিকদের সঙ্গে ইভিএম ও নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বৈঠক করেন। গণমাধ্যমে সেসব বৈঠকের খবর ফলাও করে প্রচার হয়। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘সকালে এক কথা বিকেলে অন্যকথা’, ‘আউলফাউল কথাবার্তা’ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সুরে কথা বলে নিজেকে বিতর্কিত করে তুলছেন।
নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি আয়োজিত সংলাপ চলছে। আগামী ৩১ জুলাই শেষ হবে এই সিরিজ সংলাপ। বিএনপি, সিপিবি, এলডিপি, জাসদ (রব), জাগপাসহ কয়েকটি দল সংলাপ বর্জন করলেও অনেকগুলো দল সংলাপে অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাবি জানিয়েছে। আগের ইভিএম ইস্যুতে আয়োজিত সংলাপেও আওয়ামী লীগসহ ৪টি দল ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নিলেও অন্য সব দল ইভিএমের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছে। তারপরও সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ইভিএমের পক্ষ্যে অবস্থান নিয়েছেন। ২৭ জুলাই ইভিএমের গুণগান করতে গিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর চ্যালেঞ্জে মুখে পড়েন।
এর আগে গত ৪ জুলাই ঢাকায় কর্মরত বিশ্বের ১৪টি দেশের ক‚টনীতিক নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান এবং মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন। অরগানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) ১৪টি দেশের ক‚টনীতিকরা বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাইকমিশনার চার্লস হোয়াইটলের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকের ওইসিডি প্রতিনিধি দলের পক্ষে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, তারা বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে চান। এজন্য নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত, দেশের গণতন্ত্র আরো কার্যকর ও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে যে কোনো সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস, কানাডার হাইকমিশনার লিলিও নিকলস, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইননি এস্ট্রপ পিটারসেন ও ফ্রান্সের সহকারী রাষ্ট্রদূত গুইলাম অড্রেন ডি কেরড্রেল, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম স্ট্রোস্টার, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়েন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন, স্পেনের ফ্রান্সিসকো ডি এস-এস বেন-তেজ সালাস, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান এবং জাপানের হেড অব মিশন ইয়ামায়া হিরোয়ুকি। বিদেশি ক‚টনীতিকদের মতোই দেশের বেশির ভাগ দল নিরপেক্ষ নির্বাচন চাচ্ছে। কিন্তু কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের গত কয়েক মাসের কর্মতৎপরতা দেখে ‘নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন আয়োজনের কোনো কার্যকর পদক্ষপ দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য পরাশর্ম দিয়ে বলেছিলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা ইসির চ্যালেঞ্জ হবে। এ জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করা আবশ্যক। নির্বাচনকালীন আইন-বিধির যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে। সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন, প্রতিবন্ধকতা এলে পদত্যাগের সাহস রাখবেন।’
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব। নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্রের ধরন কেমন হবে, এ নিয়ে বিদ্যমান আইন বিধিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আইনে কোনো পরিবর্তন করা যায় কি না, ইসিকে তা চিহ্নিত করতে হবে।’
গতকালও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সুরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, সঠিক, অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।
জানতে চাইলে গণফোরাম একাংশের সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, ইসি সংলাপের নামে যে সাজানো নাটক মঞ্চস্থ করছে জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। জনগণের ক্ষমতা রাতের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে দখল করে কখনোই রাষ্ট্রের কল্যাণ তথা জনকল্যাণ সম্ভব নয়, তার সবচেয়ে কলঙ্কিত উদাহরণ বর্তমান অবৈধ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। দল-মত নির্বিশেষে সব গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনতার আশা-আকাক্সক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
ফিরে দেখা নির্দলীয় সরকার : ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর ১৯৯৩ সালে প্রথম তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বপ্রথম জামায়াত এবং তারপর আওয়ামী লীগ ১৯৯৩ সালে তত্তাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিল সংসদ সচিবালয়ে পেশ করে। ১৯৯৪ সালের ২৭ জুন সংসদ ভবনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ, জামায়াত তত্তাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করে। দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। বিএনপি তত্তাবধায়ক সরকার দাবি মেনে না নেয়ায় ২৮ ডিসেম্বর বিরোধী দলের ১৪৭ জন সংসদ সদস্য পদত্যাগপত্র পেশ করেন। ২৩ ফেব্রæয়ারি স্পিকার তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণযোগ্য নয় রুলিং দিলেও ১৯৯৫ সালের ১৯ জুন আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দলের সদস্যদের পরপর ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিতি পূর্ণ হয়। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে ১০৯৫ সারের ২৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয় এবং ১৯৯৬ সালের ১৮ জানুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। পরে তারিখ পরিবর্তন করে ওই বছরের ১৫ ফেব্রæয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টির অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয় এবং ষষ্ঠ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে সরকার ২১ মার্চ তত্তাবধায়ক সরকারের বিল সংসদে উত্থাপন করে। ২৬ মার্চ তত্তাবধায়ক সরকারের বিধান সংবলিত বাংলাদেশের সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আইন, ১৯৯৬ সালের সংসদের প্রথম অধিবেশনে ২৬৮-০ ভোটে পাস হয়। অতপর প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে ৩০ মার্চ প্রেসিডেন্ট ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়।
আওয়ামী লীগের দাবিতে সংবিধানে তত্তাবধায়ক এলেও তাদের উদ্যোগেই বিলুপ্ত হলো তত্তাবধায়ক সরকার পদ্ধতি। ২০১১ সালের ১০ মে অন্য একটি মামলায় বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্ট তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেয়। অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হলেও পরবর্তী দুটি নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকারের অধীনে হতে পারে বলে মত দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই সংবিধান সংশোধন করে তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে আওয়ামী লীগ। সংবিধান সংশোধনে ওই বছরের ২১ জুলাই সংসদীয় বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ মতবিনিময়ের পর গত ৮ জুন কমিটি প্রতিবেদন আকারে সুপারিশগুলো সংসদে উপস্থাপন করে। ২০ জুন তা বিল আকারে উপস্থাপনের জন্য অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। তত্তাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপ করে ২৫ জুন সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ বিল সংসদে উত্থাপন ও পাস করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন