ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে শুরু হলো বর্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস। সেক্সপিয়ারের শহর বার্মিংহাম বৃহস্পতিবার রাতে উপহার দিয়েছে ২২তম কমনওয়েলথ গেমসের দারুণ এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাড়ে ৩ ঘন্টার অনুষ্ঠানের পুরোটা জুড়েই ছিল বার্মিংহামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃষ্টি। চোখ জুড়ানো আতশবাজির আলোকরশ্মিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ৩০ হাজার দর্শক। বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বড় চমক ছিল শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া মালালা ইউসুফজাইয়ের উপস্থিতি। যিনি স্টেডিয়ামে থেকে নিজের বক্তব্যে খেলাধুলার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপনের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে খেলাধূলার মাধ্যমে সবাইকে এক ছাদের নিচে অবস্থান করার কথা বলেছেন। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইংল্যান্ডের অলিম্পিকজয়ী ডাইভার টম ড্যালে সমকামিতার প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করে একটি পারফর্ম করে দেখান।
বার্মিংহামের আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে স্থানীয় সময় রাত ৮ টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১ টা) শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। ‘গেমস ফর এভরিওয়ান’ বা ‘সবার জন্য খেলা’-এই শ্লোগানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আলোকিত করেন ১৮ থেকে ৮০ বছর বয়সি প্রায় দুই হাজার নারী-পুরুষ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলা হয়, ‘অন্ধকারের সময়ে আমরাই স্বপ্ন দেখার আলো বহন করবো। যা আমাদের সবাইকে একত্রিত করবে’।
সর্বশেষ গোল্ডকোস্ট কমনওয়েলথ গেমসের চেয়ে এবার বার্মিংহামে ১৮৯ মিলিয়ন পাউন্ড কম খরচ হচ্ছে। গেমসের এবারের আসরের বাজেট ৭৭৮ মিলিয়ন পাউন্ড। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সামগ্রিক আয়োজনের পরিচালক ছিলেন স্টিভেন নাইট। ইংলিশ জনপ্রিয় নাটক ‘পিকে ব্লাইন্ডার’-এর লেখক তিনি। পিকে ব্লাইন্ডারস নামেই তিনি পরিচিত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল স্থানীয় ব্যান্ড ডুরান-ডুরান। সঙ্গে হেভি মেটাল ব্যান্ড ব্ল্যাক সাব্বাথও পারফর্ম করে। এছাড়া ইংল্যান্ডের অলিম্পিকজয়ী ডাইভার টম ড্যালে সমকামিতার প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করে একটি পারফর্ম করে দেখান। যার মাধ্যমে শেষ হয় বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসের ব্যাটন রিলে। যদিও কমনওয়েলথভুক্ত ৫৬টি দেশে সমকামিতা নিয়ে কড়াকড়ি ব্যবস্থা রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আরেক চমক ছিল স্টেডিয়ামে প্রায় ১০ মিটার লম্বা ষাঁড়ের আগমন। তবে সরাসরি জীবন্ত বড় ষাঁড় আসেনি। অনুষ্ঠানের মাঝে কৃত্রিম ষাঁড়ের আগমন ঘটিয়ে বার্মিংহাম ও কমনওয়েলথের বাহারি সংস্কৃতির দিকটি তুলে ধরা হয়। বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সামাজিক পরিবর্তন। মালালা কিংবা ড্যালে ছাড়াও, অন্যান্য ক্রীড়াবিদরা নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাইকে ইতিবাচকভাবে সামাজিক পরিবর্তনের দিকটি বিবেচনার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। মনোমুগ্ধকর আয়োজনের আরেকটি আকর্ষণ ছিল অসংখ্য গাড়ির নাচ। স্টেডিয়ামের চার দিক দিয়ে হঠাৎ প্রবেশ করে অসংখ্য মডেলের গাড়ী। সবাইকে চমকে দিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের প্রায় ৪ মিটার লম্বা পুতুল। এছাড়া আরও তিনটি বিশাল আকৃতির পুতুল নেওয়া হয় স্টেডিয়ামে। যেগুলো আলো-আধারের অদ্ভুত সংমিশ্রণ ঘটায়।
পরে ক্রীড়াবিদদেও মার্চপাস্টে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসকে স্বাদরে স্বাগত জানানো হয়। স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল কনফেত্তির ভেলায় চড়ে মার্চপাস্টে অংশ নেয়। এসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে দর্শকরা কন্ঠ মেলান 'উই উইল রক ইউ' গানে। এশিয়ান ক্রীড়াবিদ দলের মার্চপাস্টে প্রথমেই দেখা যায় বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা বহন করেন দেশসেরা নারী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। তাকে সঙ্গ দেন বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা। যদিও গতকাল শারীরিক অসুস্থতার কারণে রিংয়েই নামতে পারেননি এই বক্সার। সাত ডিসিপ্লিনে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা মিলিয়ে ৫০ জনের বহর এসেছে বাংলাদেশ থেকে। মার্চপাস্টে বাংলাদেশের পরেই ছিল ভারত। ভারতের পতাকা বহন করেন ব্যাডমিন্টন তারকা পিভি সিন্ধু এবং হকি খেলোয়াড় মনপ্রীত সিং। দেশের পতাকা হাতে সবার আগে বার্মিংহামে দেখা গেল ভাংড়া। এই শহরে অনেক ভারতীয় বসবাস করে। তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের সংস্কৃতিও তুলে ধরা হয়। ভাংড়ার তালে নেচে ওঠেন নৃত্যশিল্পীরা। নাচের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। মার্চপাস্ট শেষে ১ হাজার গায়কের সঙ্গে আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে গেমসের ব্যাটন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে তার পাঠানো বার্তা পাঠ করেন প্রিন্স চার্লস। এরই সঙ্গে সূচনা হয় বার্মিংহা কমনওয়েলথ গেমসের। নাচ, গান এবং ঐকের বার্তা দিয়ে উদ্বোধন হয় এই গেমসের। যেখানে মোট ২০ ডিসিপ্লিনে ৭২টি দেশের ৫ হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদরা অংশ নিচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন