বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শিশুদের করোনা টিকা আগস্টে

ঢাকায় পৌঁছেছে ফাইজারের ১৫ লাখ ২,৪০০ ডোজ টিকা জন্মনিবন্ধন থাকতে হবে, করতে হবে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন :: প্রাথমিকভাবে কর্মসূচির আওতায় আসবে সারা দেশের ১ কোটি শিশু

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২২, ১২:১১ এএম

করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রমে সাফলের পর সরকার পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের করোনা প্রতিরোধী টিকাদানের উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক জাানিয়েছেন, আগস্ট মাস থেকেই শিশুদের টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। দেশে পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু আছে দুই কোটির বেশি। এদের মধ্যে এক কোটি শিশুকে প্রথমে টিকার আওতায় আনা হবে। এদিকে শিশুদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত ফাইজার টিকার প্রথম চালান এরই মধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে। গতকাল হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৫ লাখ ২ হাজার ৪শ’ ডোজ টিকা এসে পৌঁছায়। পরে সেই টিকা বুঝে নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইপিআই বিভাগ। ইপিআই বিভাগের পরিচালক শামসুল হক বলেছেন, এরই মধ্যে টিকা প্রয়োগ নিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগস্টেই পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের করোনা টিকা কার্যক্রম শুরু করতে চায় ইপিআই বিভাগ। শামসুল হক জানান, পাঁচ থেকে ১১ বছরের শিশুদের টিকা প্রয়োগে কয়েক দফা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই স্থান ও সময় জানানো হবে। তিনি জানান, শিশুদের এই ফাইজার টিকা বাংলাদেশ ও ইউএস সরকারের মাধ্যমে কোভ্যাক্স থেকে নেয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে এই মুহুর্তে পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ। সেই হিসেবে প্রায় সাড়ে চার কোটি ডোজ ফাইজার টিকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। ইপিআই পরিচালক বলেন, নির্দিষ্ট বয়সী শিশুদের এই ফাইজার টিকা মাত্রা ও পরিমাণ হিসেবে বড়দের টিকার আলাদা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মত পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদেরও স্কুলগুলোতে কেন্দ্র করে ফাইজারের এই বিশেষ টিকা দেয়া হবে। তাই শিশুদের জন্মসনদ দিয়ে সুরক্ষা এ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের তাগিদ দেন তিনি। এরই মধ্যে ১৫ লাখ ডোজের প্রথম চালান দেশে এসে পৌঁছেছে। পর্যায়ক্রমে বাকি টিকাও সময়মত এসে পৌঁছাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম ইনকিলাবকে বলেছেন, ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুদের করোনার টিকা আগস্টেই শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকাতে, পরবর্তীতে সারা দেশে এ কার্যক্রম চলবে। শিশুদের যে টিকা দেয়া হবে, সে ডোজগুলো আলাদা। বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রফেসর ডা. খুরশিদ আলম বলেন, শিশুদের টিকার বিষয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করেছি। এছাড়া, এই কার্যক্রমের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, সবাইকে নিয়ে একটা সমন্বয় সভা করবো। তারপর সারা দেশে শিশুদের এই টিকা কার্যক্রম শুরু করবো।

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীর সই করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, পাঁচ থেকে ১২ বছরের নিচের শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা নিতে জন্মনিবন্ধন থাকতে হবে। ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান ও অভিভাবকরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

৫ থেকে ১২ বছর বয়সি শিশুদের করোনার টিকা দেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বারডেম হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা ইনকিলাবকে বলেছেন, এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে শিশুরা টিকা পেয়েছে এবং টিকার কারণে বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যায়নি। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এখনো আমাদের সঙ্গে আছে এবং মাঝেমধ্যে আমরা সবাই সংক্রমিত হচ্ছি। শুধু তাই নয়, বড়দের পাশাপাশি এখন ছোটরাও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই শিশুদের জন্য টিকার ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সিডিসি’র ২০২২ সালের সর্বশেষ সুপারিশ অনুযায়ী, ছয় মাস ও তদূর্ধ্ব সব শিশু এমনকি যাদের ইতিমধ্যে করোনা হয়েছে, তাদের সবাইকে এই টিকার আওতায় আনা হবে।

ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, করোনার টিকা শিশুদের সংক্রমণ ও আক্রান্ত শিশুদের দ্রুত মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিসহ নানা রকম জটিলতা এবং করোনা পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে। এছাড়া যেসব বাচ্চার আগে থেকেই স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন Ñহাঁপানি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ইত্যাদি থাকে, তাদের জন্য করোনার টিকা নেয়া খুবই জরুরি। কারণ, করোনার সংক্রমণ হলে তাদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এমনকি শিশুর আগে করোনা হলেও এ টিকা নেয়া যেতে পারে এবং তাতে কোনো অসুবিধা নেই। এছাড়া একই সময়ে অন্য টিকার শিডিউল থাকলেও কোভিড টিকা নিতে সমস্যা নেই।

উল্লেখ্য, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে প্রায় দেড় বছর আগে টিকাদান শুরু করে সরকার। পরে সেটি কমিয়ে ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এরই মধ্যে প্রায় ১৩ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। পরিধি বাড়াতে প্রাপ্ত বয়স্কদের পাশাপাশি ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের পর এবার ৫ থেকে ১১ বছর বয়সীদেরও টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাঁদের ক্ষেত্রেও ফাইজারের টিকা ব্যবহার করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন