শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

স্থবির উৎপাদনের চাকা বিপর্যস্ত জনজীবন

চট্টগ্রামে বাড়ছে বিদ্যুৎ সঙ্কট

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২২, ১২:১৩ এএম

চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ সঙ্কট বাড়ছে। ঘাটতি সামাল দিতে রাতে-দিনে দফায় দফায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এতোটাই নাজুক ঘোষণার চেয়ে বেশি সময় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে ক্ষুদ্র, মাঝারি থেকে শুরু করে ভারী শিল্প কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

বিকল্প জ¦ালানিতে কারখানা সচল রাখতে গিয়ে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। লোডশেডিংয়ের ধকল ইপিজেডগুলোতেও পড়ছে। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় দেশের প্রধান বাণিজ্যিক নগরীর সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি তরফে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে সুফল মিলছেনা।
গ্যাস, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির কর্মকর্তারা।

পিডিবির হিসাবে বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ মেগাওয়াট। পিক আওয়ারে তা বেড়ে হয় ১৫শ’ মেগাওয়াট। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি দিনে দিনে নাজুক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। কারণ চট্টগ্রামের চাহিদা জানা থাকলেও সরবরাহ কত মেগাওয়াট পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না। ক্ষণে ক্ষণে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাতে কোনো কোনো এলাকায় দফায় দফায় এমনকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। নগরীর চেয়ে শহরতলী এবং উপজেলায় লোডশেডিং বেশি দেয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্ধ গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, গ্রামে এখন বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মধ্যে আসে।

বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে নগরীর শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ছোট ছোট কলকারখানা অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। রাতে দিনে কয়েক দফায় উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে উৎপাদনশীলতা অর্ধেকে চেয়ে বেশি কমে গেছে। এতে কারখানা মালিকেরা লোকসান গুনছেন। চাকরি হারানোর ভয়ে শ্রমিকেরা।

বিদ্যুৎ সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে তৈরি পোশাক শিল্প খাত। পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিংয়ে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পোশাক কারখানা। বিকল্প ব্যবস্থায় তথা জেনারেটর দিয়ে কারখানা সচল রাখতে গিয়ে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে। তাতে লোকসানে পড়ছেন মালিকেরা। সময় মতো উৎপাদন না হওয়ায় অনেক কারখানা পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারছে না।

তাতে বিদেশে বাজার হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, বিশ^ব্যাপী মূল্যস্ফীতির কারণে অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। বিদেশে তৈরি পোশাকের চাহিদাও কমছে। সব মিলিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সরকারের উচিত পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের শিল্প কারখানাকে লোডশেডিং মুক্ত রাখা। তা না হলে দেশের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নগরীর ইপিজেডগুলোতে লোশেডিংয়ের প্রভাব পড়ছে। দেশের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম ইপিজেডে দুই শতাধিক কারখানায় উৎপাদন চলছে। কর্ণফুলী ইপিজেড এবং দেশের প্রথম বেসরকারি ইপিজেড কোরিয়ান ইপিজেডেও বেশ কয়েকটি কারখানা উৎপাদনে গেছে। এসব কারখানাগুলোকেও বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিষয়টি স্বীকার করে কর্ণফুলী ইপিজেডের জিএম এনামুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বিশেষ এরিয়া হিসাবে ইপিজেডগুলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ার কথা থাকলেও এখন কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ইপিজেড দুটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার রাত ৮টার মধ্যে মার্কেট, বিপণিকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে তাদের ব্যবসা লাটে উঠার উপক্রম হয়েছে। কারণ দিনের বেলায় তাদের দফায় দফায় লোডশেডিং মোকাবেলা করতে হচ্ছে। জেনারেটর চালাতে গিয়ে ব্যবসার খরচ রাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় মার্কেটে কেনাবেচা নেই। মার্কেটগুলোতে ক্রেতার খরা চলছে। ব্যবসায়ীরা পুঁজি ভেঙ্গে খাচ্ছেন।

বিদ্যুৎ সঙ্কট জনজীবনেও দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে। দফায় দফায় লোডশেডিং, সেইসাথে বৃষ্টিহীন শ্রাবণের অসনীয় গরমে অতিষ্ট মানুষ। বিশেষ করে বয়ষ্ক এবং শিশুরা গরমে কাহিল। বিদ্যুতের সাথে পাল্লা দিয়ে নগরীতে পানি সরবরাহও বিঘ্নিত হচ্ছে।

পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, চাহিদা চেয়ে সরবরাহ কমে যাওয়ায় লোডশেডিং বাড়ছে। আগে থেকে সরবরাহ কত হবে না জানা না থাকায় এলাকাভিত্তিক আগাম লোশেডিংয়ের ঘোষণা দেওয়া যাচ্ছে না। ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে ক্ষণে ক্ষণে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ পরিবর্তনের কারণে কোনো পরিকল্পনা কার্যকর করা যাচ্ছে না। তবে আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চট্টগ্রামে গড়ে আড়াইশ থেকে তিনশ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামের বিশেষ বিশেষ কিছু এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হচ্ছে। এই কারণে অনেক এলাকায় লোডশেডিংয়ের সময় বাড়ছে। পিডিবির হিসাবে চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে প্রায় ১২৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। যদিও এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২৫০১ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১০৯২ মেগাওয়াটের বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ২১০ মেগাওয়াট। আর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১৪০৯ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১০২৪ মেগাওয়াট। ডিজেল, গ্যাস ও ফার্নেস অয়েল চালিত বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন