শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তদন্ত প্রতিবেদন এলেই ব্যবস্থা

রোলস রয়েস গাড়িকাণ্ড কাস্টমসের শোকজের জবাব দিয়েছেন আমদানিকারক

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০২ এএম

শুল্কায়ন নিষ্পত্তি এবং কাস্টমস ছাড়পত্র ছাড়াই চুপিসারে বিশ^খ্যাত রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের ২৭ কোটি টাকা দামের একটি গাড়ি সরিয়ে নেয়ার ঘটনায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃক দেয়া শোকজ নোটিশের জবাব দিয়েছে। তাতে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি গাড়িটি তাদের অনুকূলে ছাড় করারও আবেদন করা হয়েছে বলে কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে। গাড়িটি বর্তমানে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের হেফাজতে রয়েছে। তবে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও শুল্ক গোয়েন্দা এবং তদন্ত অধিদফতরের পৃথক দুটি কমিটি কাজ করছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে কাস্টম আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন কাস্টমস কর্মকর্তা গতকাল রোববার ইনকিলাবকে বলেন, গাড়িটি আমদানির ব্যাপারে আমদানিকারকের কাজগপত্রে কি আছে তা খতিয়ে দেখা হবে। এই গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে তারা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে কিনা তাও দেখা হবে। তবে তারা শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই কাস্টমস ছাড়পত্র ছাড়া ইপিজেডের মতো সংরক্ষিত এলাকা থেকে ২৭ কোটি টাকা দামের গাড়ি চুপিসারে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে দৃশ্যমান অপরাধ করেছে। এটি প্রমাণিত, তাই এর সাজা অবশ্যই পেতে হবে।

গত ১৪ জুলাই কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম স্বাক্ষরিত একটি শোকজ নোটিশ পাঠানো হয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-হংকং যৌথ মালিকানাধীন জেড এন্ড জেড ইনটিমেটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। নোটিশে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শুল্কায়ন এবং কাস্টমস ছাড়পত্র ছাড়াই অত্যাধুনিক মডেলের বিশ^খ্যাত ব্র্যান্ডের রোলস রয়েস গাড়ি সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ আনা হয়। গাড়িটি সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে কাস্টম আইনে সংশ্লিষ্ট ধারা লঙ্ঘন, চোরাচালানের অপরাধ সংঘটন এবং শুল্কফাঁকির অভিযোগ আনা হয়। যা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়।

নোটিশে আগামি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে উপযুক্ত জবাব দিতে বলা হয়েছে। আর তা না হলে কাস্টম আইনে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি নোটিশের জবাব দিয়েছে জানিয়ে কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কাস্টমস আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় দেয়া কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে তারা তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি আমদানি সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্রও দিয়েছে। আমরা তাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করছি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া এই ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদন ফেলে সব কিছু যাচাই বাছাই করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃক গঠিত ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক বশির আহমেদ। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি সপ্তাহে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেওয়া যাবে। তবে পুরো প্রতিবেদন দিতে আরো কিছু সময় লাগবে। আলোচিত রোলস রয়েস গাড়িটি ছাড়াও দেশের ইপিজেডগুলোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় এ যাবত যেসব গাড়ি আমদানি করা হয়েছে সে বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ তথা সরকারের যাবতীয় শুল্ক কর পরিশোধ করা হয়েছে কি না তাও দেখা হচ্ছে। ফলে প্রতিবেদন দিতে কিছুটা সময় লাগবে। চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে ছাড়পত্র ছাড়া নিয়ে যাওয়া গাড়ির বিষয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানান তিনি।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহিরের বারিধারার বাড়ি থেকে ৪ জুলাই গাড়িটি আটক করা হয়। রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের ২০২১ সালের কালিনান এসইউভি মডেলের গাড়িটি ছয় হাজার ৭৫০ সিসির বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, গাড়িটি ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ২৭ এপ্রিল আমদানি করা হয়। ১১ মে চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়িটি খালাস করা হয়। পরদিন ১২ মে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চট্টগ্রাম ইপিজেডে তাদের কারখানা প্রাঙ্গণে গাড়িটি নেয়া হয়। সেখানে গাড়িটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। এরপর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শুল্কায়নের জন্য কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়। এরপর শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু তার আগেই ১৭ মে গাড়িটি ইপিজেড থেকে ঢাকার বারিধারায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বিষয়টি কাস্টমস এবং শুল্ক গোয়েন্দা কেউই জানতো না। গাড়িটি ইপিজেড থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এমন খবর পেয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্মপরিচালক মো. শামসুল আরেফিন খানের নেতৃত্বে একটি দল বারিধারায় ওই প্রতিষ্ঠানের এমডির গ্যারেজে গাড়িটির সন্ধান পান।
অধিদফতরের তরফে বলা হয়, গাড়িটি এসআরও এবং কাস্টমস মূসক সিপিসি ১৭০ এর আওতায় আমদানি করা। এই আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুসারে দুই হাজার সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানি শুল্কমুক্ত হবে। গাড়ির বনেটে থাকা স্টিকারে গাড়িটি ছয় হাজার ৭৫০ সিসি বলে উল্লেখ আছে। আটক গাড়িটি ২০০০ সিসি’র বেশি হওয়ায় শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রাপ্য না হলে সরকার ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। এ ধরনের গাড়িতে শুল্ককর দিতে হয় শুল্কায়িত মূল্যের আট গুণ। স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল ধরনের এ গাড়ি উৎপাদনের সাল ২০২১। মডেলের নাম কুলিনান এসইউভি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন