ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) দাওয়া এসোসিয়েশনের কুরআন পাঠ প্রতিযোগিতা-২০২২ এর পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া হাফেজ শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান ‘হাফেজ সম্মেলন’-এর জন্যে পূর্ব নির্ধারিত ও অনুমতি নেওয়া আয়োজন বাতিল করে একই স্থানে ছাত্রলীগকে প্রোগ্রাম করার অনুমতি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
হাফেজ ছাত্রদের নিয়ে পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠানটি কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ বাতিল করা হয়েছে বলে দাবি করেছে দাওয়া এসোসিয়েশন। সংগঠনটির অভিযোগ অনুষ্ঠানটি বাতিল করে সেই জায়গায় ছাত্রলীগকে প্রোগ্রাম করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কুরআনের হাফেজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাওয়া এসোসিয়েশন একটি কোরআন পাঠ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান এবং সভাপতিত্ব করার কথা ছিল ঢাবির আরবী বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. সাইয়েদ আব্দুল্লাহ আল মারুফের। পুরস্কার বিতরণী ও হাফেজ শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদানের এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিস থেকে অনুমতি নেয় সংগঠনটি।
এজন্য ওই অনুষদের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামকে ভেন্যু হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই রোববার বিকেলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. জিয়া রহমান ওই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানটি আয়োজনের অনুমতি বাতিল ঘোষণা করেন। যদিও সেই অডিটোরিয়ামে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আজ বেলা ১১টায়।
কর্মসূচি বাতিলের বিষয়ে দাওয়াহ এসোসিয়েশনের ডিরেক্টর হামিদুর রশিদ জামিল বলেন, আমরা এক সপ্তাহ আগে মারুফ স্যারের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে আমাদেরকে ২ তারিখের জন্যে অডিটোরিয়াম ভাড়া দেয়া হয়। আমাদের পুরষ্কার প্রস্তুত, অতিথি প্রস্তুত কিন্তু হুট করে গতকাল মারুফ স্যার ফোন দিয়ে বললেন যে, জিয়া স্যার বলেছেন, তোমাদের প্রোগ্রামটা করতে দেয়া হবে না, এটা তোমরা ক্যান্সেল করো। যার ফলে আমরা ক্যান্সেল করতে বাধ্য হয়েছি। কোন কারণ না জানিয়েই ক্যান্সেল করতে বলেছে। এই ক্যাম্পাসে সবাই গেট টুগেদার করতে পারে, বাইরে থেকে মানুষ এসে অনুষ্ঠান করে কিন্তু আমরা ক্যাম্পাসের হাফেজরা কেন করতে পারবো না?
এ বিষয়ে প্রফেসর আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, রোববার ডিন স্যার আমায় ফোন দিয়ে বলেন, প্রোগ্রামটা নিয়ে অনেক অভিযোগ এসেছে। আমি দুঃখিত! আমি অডিটোরিয়াম দেয়ার কথা বলেছিলাম কিন্তু এখন আর দিতে পারছি না। কিন্তু কাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ এসেছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হাফেজ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে হাফেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ বরাবরই ইসলামিক কর্মকাণ্ডকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। এবারও তারা সেই কাজটিই করেছে। হাফেজ সম্মেলন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, তবুও এটাকে বাধাগ্রস্ত করা ছাত্রলীগের ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্বেষই প্রকাশ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর জিয়া রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ডিন অফিস চাইলে যেকোন প্রোগ্রাম বাতিল করতে পারে। আমাদের ‹ঘ› ইউনিটের পরীক্ষার কাজ চলতেছে। এই মূহুর্তে আমরা দিচ্ছি না কাউকে। সেখানে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম থাকলে তো আমি জানতাম। আগামীকাল কারো প্রোগ্রাম নেই সেখানে। প্রফেসর জিয়া বলেন, এটা তো আমারই একজন কলিগ (আব্দুল্লাহ আল মারুফ) চেয়েছে। আমি দিব বলেছিলাম কিন্তু অভ্যন্তরিণ কিছু সমস্যার কারণে ওনাকে না করে দিয়েছি এবং তিনি তা মেনে নিয়েছেন।
তবে ছাত্রলীগের কর্মসূচির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন