লম্বা বিরতির পর সারাদেশে দরিদ্র মানুষের মধ্যে কম দামে নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। শোকের মাস উপলক্ষে সারাদেশে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মধ্যে এই পণ্য বিক্রি করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। টিসিবির কার্ডের বিনিময়ে নিম্ন আয়ের মানুষের থেকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা হারে আদায় করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে টিপু মুনশি বলেন, আমি এ ব্যাপারে জানতাম না। এখনই জানলাম। টিসিবির পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম হলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
চাহিদার তুলনায় পণ্য কম দেওয়ার ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সবকিছুই সাশ্রয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই সরকার সাধ্যমত সারা দেশে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবি পণ্য দিচ্ছে। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল প্রায় তিন মাস পর টিসিবি পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হলেও একই পরিবারের তিন-চার জন ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া প্রথম দিনেই চাহিদার তুলনায় পণ্যের সরবরাহ কম বলে কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন।
সরেজমিনে টিসিবি পণ্য বিক্রির কার্যক্রম দেখতে রাজধানীর বাবার রোডে টিসিবি ডিলারের দোকানে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। বাণ্যিজমন্ত্রী পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করে চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ পণ্য কিনতে লাইন ধরেন ডিলারের দোকানে। কিন্তু অনেকেই ঠিকমত পাচ্ছেন অভিযোগ তুলে বলেন, কার্ড বিতরণে অনেক অনিয়ম হওয়ায় প্রকৃত দরিদ্র লোকজন টিসিবি পণ্য কিনতে পারছেন না। তারা অভিযোগ করেন, দলীয় ছত্রচ্ছয়ায় একই ফ্যামিলিতে তিনটা থেকে চারটা কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
কেউ কেউ অভিযোগ করে বলছেন, কার্ড পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাড়ির মালিক বা কাউন্সিল অফিসে আইডি কার্ড দেওয়ার ১৫ বা ২০ দিন পর কার্ড পাওয়া গেছে। কার্ড পেয়েছেন এমন অনেকেই বলছেন, টাকা ছাড়া কার্ড পেয়েছি, কোন ঝামেলা হয় নাই। আইডি কার্ড দিয়েছি, তারপর কাউন্সিল অফিস থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে, কম দামে পণ্য দেওয়ার কার্ড রেডি হয়েছে, নিয়ে যাও।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদাই জেনারেল স্টোরেও দেখা যায়, সেখানেও দীর্ঘ লাইন। জানতে চাইলে একাধিক কার্ডধারী জানান, আইডি কার্ড জমা দেওয়ার ১০ থেকে ১৫ দিন পরে এ কার্ড পাওয়া গেছে, ঝামেলা হয়নি। কার্ড দিয়েই পণ্য পাওয়া গেছে। তবে পণ্যের পরিমান খুবই কম।
শুধু ক্রেতা নয়, ডিলারদেরও একই বক্তব্য চাহিদা তুলনায় বিতরণকৃত মাল খুবই কম। এটা বেশি হলে আমাদেরও ভালো লাগতো। তারা আরো জানান, সরকার যেভাবে আমাদের দিয়েছে আমরাও সেভাবে গোডাউন থেকে মাল তুলে বিতরণ করছি।
এ দফায় কার্ডধারী ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা ও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ টাকা দরে বিক্রি হবে। তবে পেঁয়াজ বিক্রি হবে শুধু সিটি করপোরেশন এলাকা ও টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে। উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৩টি ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩১টি ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব ওয়ার্ডে দেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন