শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ডলার সাশ্রয়ে টেলিটকের ফাইভ-জি স্থগিত

একনেক ২ হাজার ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ প্রকল্প অনুমোদন বাঁধে বেশি বেশি ঝাউ গাছ লাগানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

অর্থ সাশ্রয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় টেলিটকের ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুর পরিকল্পনা থেকে আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত ২৩৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সত্যজিৎ কর্মকার প্রমুখ। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, এর ৮০ শতাংশ ইক্যুইপমেন্ট বিদেশ থেকে ডলার দিয়ে কেনার বিষয় ছিল। সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তবে ব্যয় সংকোচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে টেলিটকের ফাইভ-জি দরকার নেই। ফোর-জি গ্রাম ও হাওর এলাকায় সার্ভিস পাচ্ছে না। ফোর-জি আগে আপডেট করবো, তারপর ফাইভ-জি। এই মুহূর্তে ব্যয় সংকোচন করছি।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা কৃচ্ছ্র সাধনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। প্রকল্পের ৮০ শতাংশ ব্যয় ফরেন কারেন্সির (বিদেশি মুদ্রা) মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এতে রিজার্ভ থেকে ব্যয় পরিশোধ করতে হবে। তাই এটা স্থগিত রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা পরে বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য একনেক সভায় বৈদেশিক ঋণ খুঁজতে বলা হয়েছে। সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মামুন আল রশীদ বলেন, টেলিটকের ফোরজি পুরোপুরি সফল হয়নি। তাই আগে ফোর-জি পরে ফাইভ-জি। প্রকল্পের ৮০ শতাংশ রিজার্ভ থেকে দিয়ে আমদানি করতে হবে। তাই বিদেশি সোর্স থেকে নিয়ে আলোচনা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ঢাকা শহরে টেলিটকের বিদ্যমান ২০০টি ফাইভ-জি বিটিএস সাইটে ফাইভ-জি প্রযুক্তিনির্ভর টেলিকম যন্ত্র সংযোজন, টাওয়ার ও কক্ষ অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার, বিদ্যুৎ সংযোগের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, রেকটিফায়ার ও ব্যাটারি ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিকরণ, নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটর হতে ভাড়া ভিত্তিতে প্রস্তাবিত ২০০টি ফাইভ-জি সাইটে উচ্চগতির লাস্টমাইল ট্রান্সমিশন সংযোজন, ৫০টি সাইটে মাইক্রোওয়েভ রেডিও যন্ত্রাংশ স্থাপন এবং এক লাখ গ্রাহক ক্ষমতাসম্পন্ন আইএসএম প্ল্যাটফর্ম স্থাপন এবং বিদ্যমান কোর নেটওয়ার্ক সিস্টেমের প্রয়োজনীয় আপগ্রেডেশন ও সম্প্রসারণের কথা ছিল।

এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় গণভবনসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো, মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা নগর, বনানী, গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট ও উত্তরা থানা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বঙ্গভবন ও সচিবালয়সহ মতিঝিল, রমনা, শাহবাগ ও ধানমন্ডি থানার সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ও বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো ৫-জি-এর আওতায় আসতো। এদিকে সভায় উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবসহ ৭ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৮৩১ কোটি, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৫৩ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ১২৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, উত্তরা লেক সৌন্দর্য বর্ধন করা হবে। লেকটির চারপাশে ওয়ার্কওয়ে এবং বর্জ্য মুক্ত করা হবে। বেশির ভাগ টাকাই ব্যয় হবে রাজউকের নিজস্ব তহবিল থেকে। এ প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কালভার্ট বা ড্রেন যাই তৈরি করা হোক সেগুলোর যেন সেøাপ ঠিক মতো থাকে। যাতে পানি চলাচল সঠিক হয়। সেটি না হলে পানি জমে থাকার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া উত্তরা লেক পরিস্কার রাখতে এসটিপি (স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্রান্ট) বসাতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, তিল গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে কক্সবাজারের নাফ নদী এলাকায় যেসব বাঁধ পুর্নবাসন করা হবে সেগুলোতে বেশি করে গাছ লাগানোর নির্দেশও দিয়েছে তিনি। বিশেষ করে ঝাউ গাছ লাগাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

উত্তরা লেক প্রকল্পের ধীরগতি সম্পর্কে একনেকে আলোচনা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, বাস্তব কারনেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরী হয়েছে। তাই এ নিয়ে কোন প্রশ্ন ওঠেনি একনেক বৈঠকে। পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, প্রকল্পটি আগে নেওয়া হয়েছিল পরবর্তীতে সার্ভে ও জরিপসহ অন্যান্য কাজ করায় বাস্তবায়ন দেরি হয়েছে।

একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্প গুলো হচ্ছেÑকক্সবাজার জেলার বাংলাদেশ-মায়ানমারে সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারগুলোর (৬৭/এ,৬৭, ৬৭বি এবং ৬৮) পুনর্বাসন, এটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৭ কোটি টাকা। এছাড়া বিনার গবেষণা কর্মক্রম শক্তিশালী করণ, ব্যয় ১৬৪ কোটি টাকা। প্রক্রিউরমেন্ট অব ইক্যুইপমেন্ট এন্ড মেশিনারিজ ফ্রোম বেলারুশ ফর সিলেক্টটেড মিউনিসিপালিটিজ এন্ড সিটি কর্পোরেশনস, ব্যয় ১৫০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপুরণ প্রদান ও পুনবার্সন, ব্যয় হবে ১ হাজার ২২৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ঢাকা কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ, ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রাজশাহী, প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২ বছরের জন্য নেয়া হলেও এখন ঠেকছে ৯ বছরে। শুধু সময়ই বাড়েনি, বেড়েছে ব্যয়ও। ৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকার প্রকল্প এখন দাঁড়ালো ৯০ কোটি ৭৩ লাখ টাকায়। এক্ষেত্রে বাড়তি গুনতে হবে ৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা শতাংশের দিক থেকে হয় ১৪৩ শতাংশ। মূল ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরির সময় প্রকল্পের কোনো মাস্টারপ্ল্যান বা স্টাডি রিপোর্ট ছিল না। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পর তৈরি করা মাস্টারুপ্ল্যান, জরিপ এবং বাস্তব প্রয়োজনে বিভিন্ন কার্যক্রম যুক্ত ও বাদ দেয়া হয়েছে। মূল প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয় ২০১৪ সালের ২১ মে। এসময় বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু সময় মতো কাজ শুরু না হওয়ায় পরবর্তীতে দুই দফায় বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন প্রথম সংশোধনীতে ৩ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এদিকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে সাড়ে ৩৩ শতাংশ।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohmmed Dolilur ৩ আগস্ট, ২০২২, ১:৩১ এএম says : 0
সরকারের অফিসের মধ্যে আপাদত যে সমস্ত জিনিস পত্র আছে সে গুলি বেবহার করে এক বসর চললে ,অনেক টাকা বেঁচে যাবে এবং নতুন জিনিস পত্র একেবারেই ক্রয় করা বন্ধ রাখলে দেশে সমস্যা হবে না,পূর্বে আমরা কষ্ট করতে পেরেছি বর্তমানে আমরা সয়ংসমপুণে কিন্তু করনা এবং ইউক্রেন এর যুদ্ধের কারনে সমস্যা,এই জন্য একটু হিসাব করে বললেই ইনসআললাহ দেশে অভাব হবে না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন