নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আমি বিএনপি করি না, বিএনপি করবো এমন কোনো কথাও নাই। কিন্তু বিএনপি ছাড়া সরকার পতনের এ লড়াই জেতা যাবে তা মনে করি না। এটা বাস্তব সত্য।
বুধবার (৩ আগস্ট) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত সরকার ইভিএম- এ নির্বাচন করতে চায় কেন? শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি সমালোচনা করতে পারি কিন্তু বিএনপি গত তের-চৌদ্দ বছর লাগাতার সংগ্রাম করছে। যত নেতা কর্মীর নামে মামলা আছে, অতীতে এতো নেতাকর্মীর নামে কোনো মামলা ছিল না। এ জালিম সরকারের চোখে কোনো পর্দা নেই। তারপরও তাদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে পারেনি। তারা লড়াই করছে, জীবন দিচ্ছে। সবকিছু মিলেই আমি মনে করি বিএনপি আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন। তবে আমাদের নিজেদের অনেক ভুলের কারণে ফ্যাসিবাদ শক্তিশালী হচ্ছে, স্থায়ীত্ব পেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, যিনি প্রথম থেকে মাঝেই মধ্যেই এমন একটা ভাব দেখাচ্ছেন যে তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। সর্বশেষ তারা সব দলকে ডেকেছে যারা বেশিরভাগই সরকারি দল। তাদের সঙ্গে কথা বলে সিইসি বলছেন, বেশিরভাগ দলই তো ইভিএমএর পক্ষে না। তাহলে ভোট হবে কী রকম করে? ইভিএম তো হতে পারে না।
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ ইভিএম ছেড়ে দিয়েছে উল্লেখ করে মান্না বলেন, আমেরিকাতে ইভিএম চলে কিন্তু সেখানে পেপার ট্রেইল আছে। কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু বললেন মামলা করবেন। কিন্তু কীভাবে করবেন? তার কাছে তো কোনো কাগজই নাই। সুতরাং কথা খুব সহজ, ইভিএম এর কারিগরি চলবে না। এই ভোট মানবো না। আপনি বললেন, কিন্তু ওরা এভাবেই অগ্রসর হবে। সুতরাং কাজ হচ্ছে আন্দোলন করা।
তিনি আরও বলেন, আমি দুই দশক আওয়ামী লীগ করেছি। ওই দল স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। ভেজাল থাকলেও তা স্বীকৃত। এই দলে শেখ মুজিবের মতন বড় মাপের একজন নেতা ছিলেন, সেই দলের নামে মানুষ এখন থুতু দেয়। তারা ফেয়ার নির্বাচন দেয় না। দিবে কেন তারা জানে ফেয়ার নির্বাচন হলে তারা জিততে পারবে না। সত্যি কথা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে এই দল ধ্বসে গেছে। মানুষ বলে আওয়ামী লীগ এখন পুলিশ লীগ। পুলিশ না থাকলে আওয়ামী লীগ এখন টিকতে পারবে?
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার এখনো ডলারে সমতা আনতে পারেনি। নিজের দেশের টাকার মানও রাখতে পারছে না। দেশে ডলার সংকটের প্রধান কারণ মুদ্রা পাচার। বছরে ৭০ হাজার কোটি ডলার মুদ্রা পাচার হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘কারা মুদ্রা পাচার করে তা আমরা জানি’। সরকার জানে কিন্তু ব্যবস্থা নেয় না, কারণ তাদের লোকজনের নাম চলে আসবে। সরকার এই পাচার বন্ধ করতে পারবে না, কৃচ্ছতাও করতে পারবে না, পারবে শুধু আমদানি বাড়াতে।
তিনি বলেন, ঐক্য দরকার, কিন্তু সেটা হতে যদি দেরি হয় তাহলে দল তাদের মতন এগিয়ে যাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখানে যেন কোন ভুল না হয়। বিএনপি পরাজিত হোক তা আমি চাই না। কারণ আমি মনে করি বিএনপির পরাজয় মানেই আমার পরাজয়। কিন্তু বিএনপির জয় মানেই যে আমার জয় এমনও নয়। আপনারা যখন কথা বলেন তখন আমি শুনি কারণ আপনাদের সঙ্গে লাগবে। কিন্তু আপনাদের বক্তব্য পুরাটা আমার নয়।
মান্না বলেন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশটাকে বদলানোর লড়াই করতে চাই। এমন কর্মসূচি ঘোষণা করা উচিৎ যেটা পালন করা সম্ভব হবে। রাজপথ দখলের ঘোষণা মানে সরকার অচল করে দেওয়া, সরকারকে ফেলে দেওয়ার আন্দোলন। আমি মনে করি যারা এই সমাজ বদলাতে চান, গণতন্ত্র চান তারা সবাই এ আন্দোলনের সাথে থাকবেন।
বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন-অর-রশিদ, বিএনপির ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম, শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, ড. মো. আব্দুস সেলিম, আনোয়ার হোসেন বুলু, কৃষিবিদ শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন