শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রকেট স্টিমার আজ থেকে চালু হলেও ব্যয়ের কারণে স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়

ঢাকা-বরিশাল-খুলনা নৌপথ

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দীর্ঘ ৬১ মাস পর ঢাকা-বরিশাল-খুলনা নৌপথে পুনরায় ঐতিহ্যবাহী রকেট স্টিমার সার্ভিস চালু হতে চললেও কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তা বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়বে। ফলে শুরুতে সপ্তাহে একদিনের এ সার্ভিসটি বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়ে কতদিন টিকে থাকবে সে ব্যাপারে সন্দিহান যাত্রীসাধারণ। মংলা-ঘসিয়াখালী নৌপথে নাব্যতা সঙ্কটে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর থেকে রকেট স্টিমার খুলনায় যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। এর পরিবর্তে সার্ভিসটি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত সীমিত করে বিআইডবিøউটিসি।
তবে অতিসম্প্রতি ঐ চ্যানেলটির নাব্যতা উন্নয়নের ফলে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিআইডবিøউটিসি আজ থেকে প্রতি বুধবার ঢাকা থেকে এবং শুক্রবার রাত ৩টায় খুলনা থেকে এ সার্ভিসটি পরিচালনা করার কথা জানিয়েছে। তফসিল অনুযায়ী আজ (বুধবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে সংস্থাটির নৌযান ‘এমভি মধুমতি’ চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী ও পিরোজপুরের কয়েকটি স্টেশনসহ খুলনার উদ্দেশ্যে ছাড়বে। নৌযানটি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে খুলনা পৌঁছার কথা। কিন্তু দ্বিগুণ জ্বালানি ব্যয় ও যাত্রী সুবিধাবিহীন এ নৌযানে প্রতি ট্রিপে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা লোকসান হবার আশঙ্কা করছেন ওয়াকিবহাল মহল। এর পরিবর্তে ‘পিএস অস্ট্রিচ’ বা সমমানের কোনো প্যডেল নৌযান খুলনা পর্যন্ত পরিচালনা করলে এত বড় লোকসান এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন মহলটি। গত দু’বছরে সংগৃহীত ‘এমভি মধুমতি’ ও ‘এমভি বাঙালী’তে প্রতি ঘণ্টায় জ্বালানি ব্যায় প্রায় ২০০ লিটার। অথচ প্যাডেল জাহাজগুলোতে তা ৮৫ লিটার থেকে ৯৬ লিটারের মধ্যে। এরপরও সংস্থাটির একটি মহল অধিক পরিচালন ব্যয়ের নৌযানগুলো চালাতেই আগ্রহী বলে অভিযোগ রয়েছে।
১৮৮৪ সালে বৃটিশ-ইন্ডিয়ার আইজিএন ও আরএসএন কোম্পানি নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর-বরিশাল ও ঝালকাঠী হয়ে খুলনা পর্যন্ত রকেট স্টিমার সার্ভিস চালু করে। দেশ বিভাগের পর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত প্যাডেল স্টিম নৌযানগুলো নিয়ে ‘পিআরএস কোম্পানি’ সার্ভিসটি অব্যাহত রাখে। স্বাধীনতার পর পিআরএসসহ বেশ কয়েকটি পরিত্যক্ত কোম্পানি নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডবিøউটিসিও জনগুরুত্বপূর্ণ এ সার্ভিসটি চালু রাখে। তবে গণদাবির প্রেক্ষিতে সার্ভিসটি নারায়ণগঞ্জের পরিবর্তে ঢাকা থেকে পরিচালনা শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ যুগের বাষ্পীয় প্যাডেল হুইলের ৩টি নৌযান, ‘পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস মাহসুদ’কে আধুনিকায়ন ও মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন সংযোজন করে এ রুটে পরিচালনা শুরু হয়। ২০০২ সালে অনুরূপ ‘পিএস টার্ন’ জাহাজটিতেও নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। তবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে এসব নৌযানের এখন বেহাল দশা। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ করলে ব্যয় সাশ্রয়ী এসব প্যাডেল জাহাজ নির্বিঘেœ আরো অন্তত কুড়ি বছর সাচ্ছন্দ্যে যাত্রী পরিবহনে সক্ষম বলে জানিয়েছেন কারিগরি বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে মংলা-ঘাসিয়াখালী চ্যানেলটির নাব্যতা উন্নয়নসহ লুপ কাটিং করে সম্প্রতি চালু করা হয়েছে। চ্যানেলটি চালু করতে প্রায় এক কোটি ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ ঐ চ্যানেলটির ২টি লুপ কাটিং করায় এর দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার হ্রাস পেয়েছে।
তবে বিআইডবিøউটিসি আজ থেকে খুলনা পর্যন্ত রকেট সার্ভিসটি চালু করায় বরিশাল, ঝালকাঠী ও খুলনার সাধারণ মানুষ যথেষ্ট খুশি হলেও তা সপ্তাহে অন্তত তিন দিন চালানোর দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ রুটের জন্য ব্যয় সাশ্রয়ী নৌযান পরিচালনের মাধ্যমে সার্ভিসটি টেকসই করারও দাবি যাত্রীসাধারণের।
তবে এ ব্যাপারে গতকাল বিআইডবিøউটিসির পরিচালক-বাণিজ্য জানান, আমরা পরীক্ষামূলকভাবে সার্ভিসটি চালু করছি। জনগণের চাহিদার নিরিখে প্রয়োজনে সবকিছু করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ফোরকান ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৯ এএম says : 0
জনগণের চাহিদার নিরিখে প্রয়োজনে সবকিছু করা হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন