শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

যেসব কথা বা কাজে শিরক হয়

এসএম আরিফুল কাদের | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৬ এএম

৮. আল্লাহর ইলম ও ক্ষমতার সঙ্গে অপর কারো ইলম ও ক্ষমতার তুলনা করা। যা তিনি ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তার জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৫)। অপর আয়াতে বলা হয়েছে- তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। (সূরা সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৮৫)। এককথায়, মহান আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের সীমা নেই (অসীম), তুলনা নেই (তুলনাহীন)। তাঁর জ্ঞান নিয়ে লেখাও সাহস জাগে না। তবুও সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের ত্রুটি খুঁজার মানুষ দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাদের বক্তব্য যে শিরক তা প্রমাণ করতে সর্বনিম্ন ২ খানা আয়াত পাঠক সম্মুখে পেশ করা হলো। নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সবকিছুর আধিপত্য মহান আল্লাহরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত ১২০)। তিনি আরো বলেন- নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা তাগাবুন, আয়াত ১)।
হাদীসেও প্রমাণ রয়েছে- ‘হযরত আবূ মূসা আল আশআরী (রা)-এঁর সনদে নবী (সা) থেকে বর্ণিত। তিনি উপরিউক্ত দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন, যার অর্থ- ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপ, আমার অজ্ঞতা ও আমার কাজের সীমালঙ্ঘনকে মার্জনা করে দিন। আপনি এ বিষয়ে আমার চেয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত। হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দিন আমার আন্তরিকতাপূর্ণ ও রসিকতামূলক অপরাধ এবং আমার ইচ্ছাকৃত ও ভুলক্রমে সব রকমের অপরাধগুলো (যা আমি করেছি)। হে আল্লাহ! মাফ করে দিন যা আমি আগে করে ফেলেছি এবং যা আমি পরে করব, যা আমি গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি। আর আপনি আমার চাইতে আমার সম্পর্কে সার্বাধিক জ্ঞাত। আপনিই একমাত্র অগ্রবর্তী এবং আপনিই একমাত্র পরবর্তী। আপনি সব বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।’
(সহিহ মুসলিম, হাদীস ৬৭৯৪)। ক্ষমতার ক্ষেত্রেও সর্বশক্তিমান আল্লাহ। সার্বভৌম সকল ক্ষমতার উৎস তিনিই। তাঁর ক্ষমতার সাথে যে ব্যক্তি তুলনা বা উপমা দেবে সেই শিরক করে বসবে, যা ক্ষমার যোগ্য নয়। ক্ষমতার ক্ষেত্রেও বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে। শুধুমাত্র শিরক বুঝাতে পাঠক সম্মুখে ২ খানা আয়াত ও ১ খানা হাদীস পেশ করা হলো।
৯. আল্লাহ তায়ালাকে জালিম বা অত্যাচারী বলা। আল্লাহ জুলুম করেন না মানুষের উপর, বরং মানুষ নিজেই নিজের উপর জুলুম করে। (সূরা ইউনুস, আয়াত ৪৪)। অন্যত্র ইরশাদ করেন- আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই। (সূরা ক্বফ, আয়াত ২৯)।
মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের পাপের কারণে হোক বা আল্লাহ তাকে নৈকট্য লাভ করাতেই হোক; মুসিবতে পড়লে মুখ ভরে বলে ফেলে- আল্লাহ শুধু জালিমকেই সহযোগিতা করেন, আমাদের মত অসহায়ের কেউ নেই। কিংবা আল্লাহ এত জালিম হলেন কীভাবে যে, আমার মত অসহায়কে সাহায্য না করে তার মত (বিপক্ষ উদ্দেশ্য) শক্তিশালীকে সাহায্য করেন? এসব কথা যদি কখনও মুখ থেকে এসে থাকে তাহলে তা শিরক হবে। মুমিন কখনও এসব কথা বলতে পারে না।
১০. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা)-এঁর কােনো হুকুমকে অসন্তুষ্ট, মন্দ বা বিরুদ্ধাচারণ করা। অতএব তোমার রবের শপথ! তারা কখনই বিশ্বাস স্থাপনকারী হতে পারবেনা, যে পর্যন্ত তোমাকে তাদের সৃষ্ট বিরোধের বিচারক না করে, অতঃপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং ওটা সন্তুষ্ট চিত্তে কবূল না করে। (সূরা নিসা, আয়াত ৬৫)। অপর আয়াতে রয়েছে- ‘যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।’ (সূরা নিসা, আয়াত ১১৫)।
১১. গণক, ভবিষ্যৎ বক্তা বা যার নিকট হামজাদ (খান্নাস) জিন হাছিল আছে তার নিকট থেকে গায়েবের কথা বিশ্বাস করা।
তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে। (সূরা আনআম, আয়াত ৫৯)।
১২. কুফরিকে ও কুফরি কথাকে ভালো জানা। হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিওনা মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি আল্লাহর বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ দিতে চাও? (সূরা নিসা, আয়াত ১৪৪)। অপর আয়াতে রয়েছে- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা জালিম।’ (সূরা তওবা, আয়াত ২৩)।
১৩. পীর পয়গম্বর বা অন্য কারো নামে নামাজ পড়া ও রোজা রাখা। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। (সূরা আনআম, আয়াত ১৬২)। ১৪. কারো নামে কোনো জানোয়ার ছেড়ে দেওয়া।
সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব (রা) বলেছেন, বাহীরা যে জন্তুর স্তন প্রতিমার উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত থাকে কেউ তা দোহন করে না। সায়িবা, যে জন্তু তারা তার উপাস্যের নামে ছেড়ে দিত এবং তা বহন কার্যে ব্যবহার করে না। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রা) বলেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন যে, আমি আমর ইবনে আমির খুযায়ীকে দোযখের মধ্যে দেখেছি সে তার নাড়িভুড়ি টানছে, সে-ই প্রথম ব্যাক্তি যে সায়ীবা প্রথা প্রথম চালু করে। ওয়াসীলাহ, যে উষ্ট্রী প্রথম বারে মাদী বাচ্চা প্রসব করে এবং দ্বিতীয়বারেও মাদী বাচ্চা প্রসব করে, (যেহেতু নর বাচ্চার ব্যবধান ব্যতীত একটা অন্যটার সাথে সংযুক্ত হয়েছে সেহেতু) ঐ উষ্ট্রীকে তারা তাদের তাগুতের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিতো। হাম, নর উট যা দ্বারা কয়েকবার প্রজনন কার্য নেওয়া হয়, প্রজনন কার্য সমাপ্ত হলে সেটাকে তারা তাদের প্রতিমার জন্য ছেড়ে দেয়, এবং বোঝা বহন থেকে ওটাকে মুক্তি দেয়। সেটির উপর কিছু বহন করা হয় না। এটাকে তারা ‘হাম’ নামে অভিহিত করত। আমাকে আবুল ইয়ামান বলেছেন যে, শুয়াইব, ইমাম যুহরী (রহ) থেকে আমাদের অবিহিত করেছেন, যুহরী বলেন, আমি সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রা) থেকে শুনেছি, তিনি তাঁকে এ ব্যাপারে অবিহিত করেছেন। (সহিহ বোখারি, হাদিস ৬৪২৩, সহিহ মুসলিম, হাদিস ৭০৮৫)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Muhammad Shah Jahan ৫ আগস্ট, ২০২২, ১০:০৪ পিএম says : 0
ইয়া আল্লাহ, শিরক করা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমাদের কৃত গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন। আমাদেরকে শরীয়তবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বাঁচান।বিশ্ব মুসলিম ভাই বোনদেরকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন, আমীন।
Total Reply(0)
ক্বারী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান ৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:৪৪ এএম says : 0
আমার দয়াময় প্রিয় রাব্বে কারিম সার্বিক হালতে হেফাজত করে উভয় জগৎ উজালা করে উনার ও হাবীব সায়্যিদুল কাওনাইন রাহমাতে আ-লম আ-লাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম এর পছন্দনীয় বান্দা ও গোলাম ক্ববুল করুন, আমীন ইয়া আরহামার রাহিমীন, ইয়া আরহামার রাহিমীন, ইয়া আরহামার রাহিমীন বিহুরমাতি হাবীবিল মোস্তফা সায়্যিদুল কাওনাইন রাহমাতে আ-লম আ-লাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম, মাওলা ইয়া সাল্লি ওয়া সাল্লিম দা-য়ীমান আবাদান আ-লা হাবীবিকা খাইরিল খালক্বি কুল্লিহীমি।
Total Reply(0)
KHORSHED ১১ আগস্ট, ২০২২, ৫:২২ পিএম says : 0
আল্লাহ, শিরক করা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমাদের কৃত গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন। আমাদেরকে শরীয়তবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বাঁচান।বিশ্ব মুসলিম ভাই বোনদেরকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন, আমীন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন