শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ত্যাগ চাই মার্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:২৩ এএম

এই পৃথিবী পরিবর্তনশীল। দিন, মাস, বছর, যুগ, সাল এবং কালান্তরের সর্বত্রই এই পরিবর্তনের খেলা চলে আসছে। এর কোনো বিরাম নেই। বিশ্রাম নেই। চলছে তো চলছেই। আল কোরআনে এই বিষেশত্বই অত্যন্ত চিত্তাকর্ষকভাবে হৃদয়কাড়া ভাষায় এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে স্বীয় প্রতিনিধি (খলিফা) করেছেন। অতএব, সে কুফুরী করবে, তার কুফুরি তার ওপরই বর্তাবে। কাফেরদের কুফর কেবল তাদের পালন কর্তার ক্রোধই বৃদ্ধি করে এবং কাফেরদের কুফর কেবল তাদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।’ (সুরা ফাতির : আয়াত-৩৯)।

আরবী খলিফা শব্দটির অর্থ প্রতিনিধি, স্থলাভিষিক্ত, প্রতিনিধিত্বশীল, দায়িত্ব পালনকরী। এর বহু বচন হলোÑ খালাইফ। সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক মানুষকে এই ভূমণ্ডলে প্রতিনিধি করেছেন এবং পৃথিবীর যাবতীয় কাজে-কর্মে একের পর অন্যকে দায়িত্ব প্রদান করছেন। এই ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে উম্মতে মোহাম্মাদীর আবির্ভাব ঘটেছে এবং তাদের আল কোরআন প্রদান করা হয়েছে, যাতে তারা বিশ্বময় আল্লাহর আইন বলবৎ করতে সম্মত হয় এবং বিশ্ব জাতিসমূহের অবনতি ও ধ্বংস প্রত্যেক্ষ করে হেদায়াতের পথে চলতে পারে এবং মুত্তাকীন বান্দাহদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। অন্যথায় তাদের পরিবর্তে অন্য এক নতুন শ্রেণীকে দিয়ে আল্লাহ পাক কার্য সম্পাদন করবেন। তারা অতীত জাতিদের মতো বিস্মরণের খেয়াঘাটে হারিয়ে যাবে না। কারণ আল্লাহ পাকের নীতি ও আদর্শে কোনই পরিবর্তন হয় না। এই চিরন্তন ঘোষণা আল কোরআনে এভাবে ঘোষিত হয়েছে। এরশাদ হয়েছে : (ক) “আল্লাহ নবীর জন্য যা নির্ধারণ করেন, তাতে তাঁর কোনো বাধা নেই। পূর্ববর্তী নবীগণের ক্ষেত্রে এটাই ছিল আল্লাহর চিরাচরিত বিধান (সুন্নাতুল্লাহ), আর আল্লাহর আদেশ নির্ধারিত অবধারিত।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৩৮)। (খ) “পৃথিবীতে ঔদ্ধত্যের কারণে এবং কুচক্রের কারণে কুচক্র কুচাক্রিরেদকেই ঘিরে ধরে। তারা কেবল পূর্ববর্তীদের দশারিই অপেক্ষা করছে। অতএব, হে রাসূল! আপনি আল্লাহর বিধানে (সুন্নাতুল্লাহ) পরিবর্তন পাবেন না। আল্লাহর রীতি-নীতিতে কোনো রকম বিচ্যুতিও পারেন না।” (সূরা ফাতির : আয়াত ৪৩)। (গ) “এটাই আল্লাহর রীতি, যা পূর্ব থেকে চালু আছে। তুমি আল্লাহর রীতিতে (সুন্নাতুল্লাহ) কোনো পরিবর্তন পাবে না।” (সূরা আল ফাতহ : আয়াত-২৩)।

এই নিরীখে অতি সহজেই বলা যায় যে, হিজরী ১৪৪৪ সালের পৈঠায় দাঁড়িয়ে শেষ উম্মতের তকমা আটা জনসমুদ্র আজ একান্তই ঢুকতে বসেছে। কারণ দিন ঈমান ও আল কোরআনের দৈহিক ও আত্মিক শক্তির লেশমাত্রও তাদের মাঝে অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। পৃথিবীর অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর তুলনায় তাদের অবস্থান একেবারে তলানিতে এসে ঢেকেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। তাদের মতিগতি, চলাফেরা, স্বভাব-চরিত্র, লক্ষ্যমাত্রা ও উদ্দেশ্যের মাঝে কোরআন ও সুন্নাহ্র অনুসরণ ও অনুকরণের স্থিরতা ও একাগ্রতার বড়ই অভাব। তারা বর্তমানে আল কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে কারিমায় বর্ণিত শ্রেণীর বাস্তব উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এরশাদ হয়েছে : ‘মানবকুলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মতো আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য বস্তু। অবশ্যই আল্লাহর নিকট হলো উত্তম আশ্রয়।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৪)।

মোটকথা, জগতের সুস্বাদু ও মোহনীয় এ সকল বস্তু লাভ করার পর যদি মানুষ মহান স্রষ্টা ও মালিক আল্লাহ পাককে স্মরণ করে এবং এই বস্তু সামগ্রীকে তাঁর মারেফাত ও মহব্বত লাভের উপায় হিসেবে ব্যবহার করে, তাহলে বলা যাবে যে, সে দুনিয়াতেও লাভবান হয়েছে এবং পরকালেও মুক্তি এবং নিষ্কৃতি লাভে সফলকাম হবে। এতে করে জগতের লোভনীয় বস্তু তার চলার পথে প্রতিবন্ধক হওয়ার পরিবর্তে তার পথপ্রদর্শক এবং সহায়ক হয়েছে বলে স্থিরীকৃত হবে। অপরদিকে এ সকল বস্তু লাভ করার পর যদি মানুষ এগুলোর মধ্যেই আপাদমস্তক। নিমজ্জিত হয়ে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে পরকাল এবং হিসাব-নিকাশকে ভুলে যায়, তাহলে বুঝতে হবে যে, এ সকল বস্তুই তার পারলৌকিক জীবনের ধ্বংস ও বরবাদীর এবং অনন্তকাল আজাব ও শাস্তি ভোগের মূল কারণ হয়েছে। (তফসিরে মাআরেফুল কোরআন : ১/১৬৬)।

আর এ কথাও স্মরণ রাখা দরকার যে, আল্লাহ পাক যে সকল বস্তুকে মানুষের দৃষ্টিতে কাক্সিক্ষত ও সুশোভিত করে দিয়েছেন, ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক সেগুলো হালাল পন্থায় পরিমিত উপার্জন করলে এবং যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু সঞ্চয় করলে ইহকাল ও পরকালের কামীয়াবী হাসেল হবে, এতে কোনোই সন্দেহ নেই। পক্ষান্তরে অবৈধ পন্থায় সেগুলো ব্যবহার করলে এবং পরকাল বিস্তৃত হয়ে এগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত নিমজ্জিত হয়ে গেলে ধ্বংস ও চিরশাস্তি অনিবার্য হয়ে পড়বে। এ কারণেই আলোচ্য আয়াতের মধ্যে আল্লাহ পাক স্পষ্টরূপে উল্লেখ করেছেন যে, এ সকল বস্তু হচ্ছে পার্থিব জীবনে ব্যবহার করার জন্য, এতে মম-মগজ বসাবার জন্য নয়। আর আল্লাহ পাকের কাছে রয়েছে উত্তম ঠিকানা। অর্থাৎ সেখানে চিরকাল অবস্থান করা যাবে এবং যার নেয়ামত কোনো কালেই ধ্বংস হবে না, হ্রাসও পাবে না। যা হবে চিরস্থায়ী ও অবিনশ্বর। এমনটাই মোমিন-মুসলমানদের কাম্য হওয়া উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন