বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ডিজেল-গ্যাসের পর নিত্যপণ্যের দাম কমালো শ্রীলঙ্কা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২২, ৭:৪১ পিএম

স্বাধীনতার সাত দশক পর ক্ষমতাসীনদের ভুল নীতিতে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট এমন আকার ধারণ করেছে যে, অনেকেই তিনবেলা খাবার থেকে শুরু করে প্রাণরক্ষাকারী জরুরি ওষুধও কিনতে পারছেন না।
তবে দেশটির সরকার বিশ্বের বৃহৎ ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে থেকে বেলআউট পেতে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝেই বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায়ও এর সুফল পেতে শুরু করেছে জনগণ।
ডিজেলের দাম কমে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে দেশটির সরকার বাসভাড়া আগের তুলনায় ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ কমিয়েছে। ডিজেল সংকটের কারণে এর আগে ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ন্যূনতম বাসভাড়া ৩৮ রুপি করা হয়েছিল। জ্বালানির দাম কমে যাওয়ায় এখন ন্যূনতম ভাড়া ৩৮ রুপি থেকে কমিয়ে ৩৪ রুপি করা হয়েছে।
এছাড়া আগামী সোমবার থেকে এলপি গ্যাসের দামও কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তাবিষয়ক কর্তৃপক্ষের নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২০০ রুপির বেশি কমতে পারে।
শনিবার শ্রীলঙ্কার ইংরেজি দৈনিক শ্রীলঙ্কা মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বাজারে নিত্য-প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামও কমানো হয়েছে। দেশটির রাজধানী কলম্বোর ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আলু, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, মরিচের মতো জিনিসপত্রের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
অল সিলন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বলছে, আগামী সোমবার থেকে এক প্যাকেট চালের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমানো হবে। তবে দেশটির মাছের বাজার এখনও চড়া। তবে জেলেদের পর্যাপ্ত জ্বালানি দেওয়া হলে মাছের দাম কমে যাবে বলে আশা করছেন দেশটির মাছ ব্যবসায়ীরা।
অত্যধিক মুদ্রাস্ফীতি শ্রীলঙ্কায় খাদ্যপণ্যের দাম এত বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে যে অনেক পরিবার এখন নিজেদের খাবারের জন্য কার্যত লড়াই করছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তথ্য অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার প্রায় ৫০ লাখ মানুষের— মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটির প্রতি ছয় পরিবারের মধ্যে পাঁচটির বেশি পরিবার উপবাস অথবা কম খেয়ে অথবা নিম্নমানের খাবার কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে বর্তমানে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বলতে প্রায় কিছুই নেই। এ কারণে বিদেশ থেকে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো জরুরি পণ্যও আমাদানি করতে পারছে না দেশটি।
শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অব্যাবস্থাপনা, অযৌক্তিক কর কাটছাঁট, করোনা মহামারির কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস ও ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা না ভেবে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় দেশটির দুরবস্থার প্রধান কারণ।
বর্তমানে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও বিভিন্ন দেশের কাছে শ্রীলঙ্কার দেনা রয়েছে ৫১০ কোটি ডলার। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়ায় গত মাসের শুরুতে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।
বর্তমানে এই অচলাবস্থা কাটাতে জরুরি ঋণের জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সংলাপ করছে শ্রীলঙ্কা। তবে এই সংলাপ শেষ হতে আরও দুই থেকে তিন মাস লেগে যেতে পারে।সূত্র : শ্রীলঙ্কা মিরর

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন