শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অর্থনৈতিক উন্নয়নে এশিয়া একত্রে কাজ করতে পারে

প্রধানমন্ত্রীর সাথে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ বঙ্গমাতার জীবন থেকে বিশ্বের নারীরা শিক্ষা নিতে পারবে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীন একসাথে কাজ করতে পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-অবরোধ ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা-অবরোধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব কারণে সারা বিশ্বের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীন একসাথে কাজ করতে পারে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
বৈঠককালে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে সমর্থন দেবে এবং একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই সংকট নিরসনে বাংলাদেশ চীনের সহযোগিতা চায়। চীনা মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছ, রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হবে।
তিনি আরো বলেন, তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন হলে চীন তার ভূমিকা পালন করবে। তিনি উল্লেখ করেন, তারা এখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাসস্থান নির্মাণ করছে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নেও চীন বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। ওয়াং ই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাইওয়ান ইস্যুতে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এ সময় শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ‘এক চীন নীতিতে’ বিশ্বাসী এ কথা পুনব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ চীনের সাথে তার বন্ধুত্বকে মূল্যায়ন করে। যে সব বাংলাদেশী শিক্ষার্থী কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে চীন থেকে দেশে ফিরে এসেছে প্রধানমন্ত্রী তাদের পড়াশুনার জন্য ফিরে যাওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্যও ওয়াং ইকে অনুরোধ করেন যাতে করে তারা তাদের শিক্ষা সম্পন্ন করার সুযোগ পায়।

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালের চীন সফরের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু পিপল’স রিপাবলিক অব চায়নার প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুংয়ের গুণমুগ্ধ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ে তা উল্লেখ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভিডিও বার্তা দেয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানান।
ওয়াং ই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান।
কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বার্তা পাঠানোর জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
বিশ্বের নারীরা শিক্ষা নিতে পারবে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহিয়সী নারী বঙ্গমাতার জীবন থেকে শুধু আমাদের দেশেরই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নারীরাও এই শিক্ষা নিতে পারবে যে, কিভাবে একটি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তিনি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি আমাদের দেশের মেয়েরা শুধু নয়, পৃথিবীর অনেক মেয়েরাই তার জীবনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারবে।

গতকাল আরেকটি অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গমাতা এ প্যারাগন অব ওমেন্স লিডারশিপ এন্ড ন্যাশন বিল্ডিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি একইসঙ্গে সেখানে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমমেন্ট স্টাডিজেরও উদ্বোধন করেন।

আজ ৮ আগস্ট বঙ্গমাতার জন্মদিনকে সামনে রেখে বঙ্গমাতার অবদান এবং জীবন দর্শন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমমেন্ট স্টাডিজ’ দুই দিন ব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবার পাশে থেকে আমার মা এই সাহস দেখিয়েছেন যে, একজন মানুষ কিভাবে তার জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন একটি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, বঙ্গমাতা সংসারের বিষয়ে, রাজনীতির বিষয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই যখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা আমাদের দেশের জন্য সবসময় সঠিক ও সময়োপযোগী প্রতীয়মান হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর জীবনটাও দিয়ে গেলেন।

তার অত্যন্ত সাদাসিদে জীবন-যাপনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা’র জীবনে কোন চাওয়া-পাওয়া ছিলনা। তিনি নিজের জন্য কোনদিন কিছু চাননি। আমরা শুনিনি তিনি কোন আবদার করেছেন। তার নিজের যেটুকু ছিল সবই তিনি বিলিয়ে দিতেন। দলের জন্য, মানুষের জন্য, গরীব আত্মীয় পরিবার-পরিজনের জন্য।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. আখতারুজ্জমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মুহম্মদ সামাদ এবং কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। বিশিষ্ট কথা সহিত্যিক এবং বাংলা একাডেমীর সভাপতি ড. সেলিনা হোসেন অনুষ্ঠানে ‘জেন্ডার প্রেক্ষিতে বঙ্গমাতার জীবন দর্শন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক প্রফেসর ড. তানিয়া হক স্বাগত বক্তৃতা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও স্বাধীনতার জন্য আমার বাবার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের সারথি ছিলেন আমার মা। সবসময় আমার মা সাহস যুগিয়েছেন। তবে দেশ ও মানুষের জন্য আমার মায়ের যে আত্মত্যাগ, তা খুব কমই উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য বাবা বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকলেও কখনই বিরক্ত করতেন না। মা বলতেন, আমি দেখবো তুমি চিন্তা করো না। সংসার সামলানোর পাশাপাশি জাতির পিতার অনেক সময়োচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও বঙ্গমাতার পরামর্শ নিতেন। এতে আন্দোলন-সংগ্রামে গতির সঞ্চার করেছিল।

তিনি বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বা মুচলেকা দিয়ে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিলে যোগ দেয়া সর্ম্পকিত দলের কতিপয় নেতার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বঙ্গবন্ধুর কাছে বার্তা পাঠিয়ে অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেন বঙ্গমাতা।
৬ দফা ঘোষণার পর জাতির পিতা কারাগারে গেলে দাবী ৮ দফা করার জন্যও দলের ভেতরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, কিন্তু তার মা’ ৬ দফাতেই অটল ছিলেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, যে ভাষণ আজকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে ইউনেস্কোর প্রামান্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে এবং বাঙালি তাঁর মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই ভাষণ প্রদানের সময়ও তাঁর মা’র সুচিন্তিত পরামর্শ এবং জাতির পিতাকে আস্থা ও ভরসা প্রদানের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তাঁর মা সে সময় তাঁর বাবাকে বলেছিলেন,‘তুমি সারা জীবন সংগ্রাম করেছ, এদেশের মানুষ কি চায় তুমি জান, কাজেই তোমার মনে যেটা আসে তুমি সেটাই বলবা। কারো কথা শুনতে হবে না,’ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

নবগঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ উদ্বোধনকালে সরকার প্রধান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার মায়ের জন্য যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে, সেজন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের এ উদ্যোগ সফল হোক। আশ্বাস দিচ্ছি, আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Mahabub Alam ৮ আগস্ট, ২০২২, ৪:৪৩ এএম says : 0
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ সকল মা যারা বেছে আছে এবং চিরো বিদায় নিয়েগেছেন সবার জন্য দোয়া
Total Reply(0)
Mahabub Alam ৮ আগস্ট, ২০২২, ৪:৪৩ এএম says : 0
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ সকল মা যারা বেছে আছে এবং চিরো বিদায় নিয়েগেছেন সবার জন্য দোয়া
Total Reply(0)
Mohidul Islam Munna ৮ আগস্ট, ২০২২, ৪:৩৯ এএম says : 0
বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার কাতারে নিয়ে যেতে আইছে
Total Reply(0)
Elias Tuhin Reza ৮ আগস্ট, ২০২২, ৪:৪২ এএম says : 0
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সকল লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনের নেপথ্যের প্রেরণাদায়ী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব-এর ৯২ তম জন্মবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা।
Total Reply(0)
Abdullahil Mamun ৮ আগস্ট, ২০২২, ৪:৪৪ এএম says : 0
বিনম্র শ্রদ্ধা, আল্লাহ উনাকে এবং পরিবারের সকল সদস্যদের জান্নাতুল ফেরদৌস কবুল করুন ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন