মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

টাংগাইলে চলন্ত বাসে হাত-মুখ বেঁধে শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণ করে তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২২, ১:৫৯ পিএম

বহুল আলোচিত টাঙ্গাইলের মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনসহ ডাকাত চক্রের ১০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‍্যাব বলছে, ডাকাত দলের সদস্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদেরকে হাত মুখ বেঁধে সীট কভার দিয়ে মুখে মুখোশ পড়িয়ে মুখমন্ডল ঢেকে দেয় এবং যাত্রীদের সাথে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়।

র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১২, ও ১৪ যৌথ অভিযানে রোববার রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মূল পরিকল্পনাকারী মো. রতন হোসেন (২১), তার সহযোগী মো. আলাউদ্দিন (২৪), মো. সোহাগ মন্ডল (২০), খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু (২৩), মো. বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস (২১), মো. জীবন (২১), মোঃ আব্দুল মান্নান (২২), মো. নাঈম সরকার (১৯), রাসেল তালুকদার (৩২), মো. আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান (১৮)।

এ সময় ডাকাতিতে ব্যবহৃত ২০টি মোবাইল, ১৪টি সিম, ক্ষুর উদ্ধার করা হয়। লুট হওয়া দুটি রূপার চুড়ি উদ্ধার করা হয়।


সোমবার দুপুরে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন রাজধানীর কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার রতন মিয়া উক্ত বাস ডাকাতির ৩ দিন আগে তার সহযোগী ডাকাত রাজা মিয়াকে বাস ডাকাতির প্রস্তাব দিলে রাজা মিয়া দলের অন্যান্য ডাকাতদের সংঘটিত করার কথা বলে। পরে গ্রেপ্তার রতন, মান্নান, জীবন, দীপু, আউয়াল ও নুরনবীকে ডাকাতির পরিকল্পনার কথা জানায় এবং ডাকাত মান্নান তার সহযোগী সোহাগ, আসলাম, রাসেল, নাঈম ও আলাউদ্দিনকে নিয়ে ডাকাতিতে যোগ দেয়।


র‍্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, ডাকাতিতে রতনের নেতৃত্বে মোট ১৩ জন ডাকাত অংশ নেয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রতনের নেতৃত্বে গত ২ আগস্ট দুপুরবেলা গাজীপুরের জিরানী বাজার এলকায় সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। মূল পরিকল্পনাকারী রতন ডাকাতি কাজে যাবতীয় প্রস্তুতির আর্থিক খরচ বহন করে।


তিনি বলেন, চক্রের সদস্যদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে প্রত্যেকের কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রতন ডাকাত ২ আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ৪টি চাকু, ২টি ধারালো কাঁচি ও ১টি ক্ষুর সংগ্রহ করে।


খন্দকার মঈন বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতির রাতে ডাকাত রাজাসহ চক্রের অন্যান্য সদস্যরা সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে। রাত প্রায় ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় পৌছালে ডাকাত রাজা বাসটিকে থামার সংকেত দেয় এবং যাত্রীবেশে প্রথমে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহন বাসটিতে উঠে।

র‍্যাব জানায়, পরবর্তীতে আরো দুই দফায় ডাকাতচক্রের অন্য সদস্যরা বাসটিতে যাত্রীবেশে ওঠে। বাসটিতে ২৪ জন সাধারণ যাত্রী থাকায় ডাকাত চক্রের অধিকাংশ সদস্য বাসের পিছনের দিকে বসে। বাসটি বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এলাকা অতিক্রম করলে রতন ডাকাত দলের সদস্যদেরকে চাকু ও ধারালো কাঁচি প্রদান করে। আউয়াল ধূমপানের কথা বলে বাসের গেটের কাছে যায় এবং অন্যান্যদের ইশারা দিলে রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী ড্রাইভিং সীটের কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে মারধর করে এবং ডাকাত রতন বাসের ড্রাইভিং সীটে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

র‍্যাব মুখপাত্র জানান, ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদেরকে হাত মুখ বেঁধে সীট কভার দিয়ে মুখে মুখোশ পড়িয়ে মুখমন্ডল ঢেকে দেয় এবং যাত্রীদের সাথে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়।

কমান্ডার মঈন বলেন, পরবর্তীতে টাঙ্গাইলের হাটুভাঙ্গা মোড় হয়ে মধুপুরে যাওয়ার পথে মধুপুরের রক্তিপড়া এলাকায় গ্রেপ্তার রতন গাড়ি চালনার সময় লুট করা মালামাল নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে বাক-বিতন্ডার কারণে রতন পিছনে তাকালে বাসটি রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুটি ও বালুর সাথে বাসের সংঘর্ষ হলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একপাশে হেলে পড়ে। তৎক্ষনাৎ ডাকাতদলের সবাই লুট করা মালামালসহ বাস থেকে নেমে পালিয়ে যায়।


তিনি আরও বলেন, দূর্ঘটনার পর ডাকাত দল বাস থেকে নেমে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাসে করে ডাকাত চক্রের সদস্যরা টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় যায় এবং অটোরিক্সাযোগে মধুপুরের কুড়ালিয়া এলাকায় রতনের নিকটাত্মীয়ের ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে লুন্ঠিত মালামাল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে। এরপর ডাকাত রতন গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় আত্মগোপন করে।


র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার মান্নান, আলাউদ্দিন ও বাবু পৃথকভাবে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকায় আত্মগোপন করে। ডাকাত আসলাম, নাঈম, রাসেল প্রথমে নিজের এলাকায় ও পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকায় আত্মগোপন করে। ডাকাত জীবন কোনাবাড়ীতে আত্মগোপন করে। ডাকাত দীপু প্রথমে টাঙ্গাইলের পিরোজপুর গ্রামে ও পরবর্তীতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় আত্মগোপন করে। ডাকাত সোহাগ প্রথমে জিরানী বাজার ও পরবর্তীতে জামালপুর জেলায় এবং পুনরায় জিরানী বাজারে আত্মগোপন করে।

জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার রতন হোসেন উক্ত ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী। সে পেশায় গাড়ীর হেলপার। তার বিরুদ্ধে আগেও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে।

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার রতন ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার নূরনবী, জীবন ও অন্যান্য কয়েকজনকে নিয়ে রোড ব্লক করে সাভার পরিবহনের একটি বাস ডাকাতি করে। ঐ বাস ডাকাতির ঘটনায় রতন গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দেড় বছর কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে ২০২০ সালে পুনরায় গ্রেপ্তার নূরনবী, জীবন ও আউয়ালকে নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি অটোরিক্সা ছিনতাই করে। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা জীবনকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে।


উক্ত ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রতন প্রায় ১ বছর কারাভোগ করে। কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে সে তার সিন্ডিকেট নিয়ে সাভার, গাজীপুর বা সিরাজগঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে আরো বেশ কয়েকটি ডাকাতি করে।

গ্রেপ্তার জীবন পেশায় গাড়ির হেলপার। হেলপার পেশার আড়ালে সে বেশ কয়েকটি পরিবহন ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে।

গ্রেপ্তার মান্নান গাজীপুরের একটি গার্মেন্টস এ চাকরি করত। তার নেতৃত্বে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টসে চাকরিরত আলাউদ্দিন, সোহাগ, বাবু, দীপু, রাসেল, রায়হান, নাঈম উক্ত ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

টাঙ্গাইল মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় একাধিক ধর্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের মূখপাত্র জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার অনেকেই ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। মামলার এজাহারেও গণ ধর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ আছে।

মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসে কাউন্টার ছাড়া যাত্রী তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পথিমধ্যে যাত্রী তোলা ঝুঁকিপূর্ণ। যাত্রীদের সঙ্গে থাকা ব্যাগে অস্ত্র থাকতে পারে। এমন কি তারা কাউন্টার থেকে টিকিট ছাড়াই তোলা হচ্ছে। মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন