শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

অজুহাত নয়, চাই খেলার হাত

দেশের ক্রিকেটে দৈন্যতা

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

হারারেতে দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষ হবার পর কেটে গিয়েছে ৩ ঘন্টা। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া গুটিকয়েক সংবাদকর্মীরা তখনও জিম্বাবুয়ের ড্রেসিং রুম থেকে হইহুল্লোড়ের আওয়াজ পাচ্ছিলেন। তাতে নাকি যোগ দিয়েছিলেন দেশটির ক্রিকেট কর্তারাও। হবে বা-না কেন? র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৫ নম্বরে থাকা দলটিতো নিকট অতীতে ওয়ানডে জেতায় ভুলে গিয়েছিল টেস্ট খেলুড়ে দেশ গুলর বিপক্ষে। সেই জিম্বাবুয়ে যে এবার মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত সিরিজ জয় করে দেশটির ক্রিকেটেকে পুনরায় জীবন দিল। জিম্বাবুয়ে তাদের ইতিহাসের অন্যতম জয় যখন উপভোগ করছে তখন যেন খাদের কিনারায় বাংলাদেশ ক্রিকেট। বাকি দুই সংস্করণে যা-তা করলেও, টানা ৫ ওয়ানডে সিরিজ জিতে জিম্বাবুয়ে গিয়েছিল টাইগার বাহিনী। কিন্তু অপ্রতাশিতভাবে সিরিজ খোয়াতে হয়েছে তামিমদের। সিরিজ হারের পর গণমাধ্যমে বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গ এই হারের ব্যাপারে উল্লেখ করলেন, ‘অনেক কিছুর সংমিশ্রণে ঘটলো এই হার।’ ঠিকই তো। কেবল এক দৃষ্টিকোণ থেকে বা সরলরৈখিক ভাবে এই হারকে তো সঙ্গায়িত করার উপায় নেই। চোট ও মানসিকতার সাথে যুদ্ধ করা টাইগাররা এখন পড়েছে ধবলাধোলাইয়ের চোখ রাঙানির সামনে। আগামীকাল হারারেতে হতে যাওয়া শেষ ওয়ানডের আগে বাংলাদেশ দল তাই বেশ অস্বস্তিতে।

এই সিরিজে খুব বাজে ভাবে চোখে পড়েছে বাংলাদেশের ফিল্ডিং। কিন্তু টাইগারদের ফিল্ডিয়ের এই অবস্থাতাতো বেশ পুরোনো। এশিয়ার বাকি দলগুলো যখন ফিল্ডিংকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে, তখন দিন দিন এই অসুখ প্রকট হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। জঘন্য ফিল্ডিংয়ের পর সিনিয়রাও সব সময় গণমাধ্যমে বলে যান যে এটা খেলারই অংশ! ডাহা সত্য, কিন্তু সেখান থেকে উত্তরণের উপায়ও তাদেরই বের করতে হবে। কথিত আছে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ধোনী ফিটনেস ও ফিল্ডিংয়ের অজুহাতে গাঙ্গুলী, দ্রাবিড় ও লক্ষণের মত মহারথীদের সাদা বলের ক্রিকেট থেকেই দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সেটাও ১৫ বছর আগের কথা। এই সময়ের মাঝে বিশ্ব ক্রিকেটে ফিল্ডিং নতুন শ্বৈল্পিকতার ছোঁয়া পেয়েছে, আর বাংলাদেশের দিন দিন আরও অবনতি হচ্ছে। উইকেটে পরার পর একটু ধীরে ব্যাটে আসে, বাংলাদেশের বোলাররা সেই পিচেই বোলিং করে অভ্যস্ত। টাইগার পেসার বা স্পিনার কারোই তেমন বোলিং বৈচিত্র নেই। ম্যাচ জেতার বা উইকেট নেওয়ার তাদের চিরাচরিত কৌশল হচ্ছে রান আটকানো। তাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা চাপে পড়ে নিজেরাই ভুল করে। বাজে ফিল্ডিয়ে ক্যাচ বা রানআউট মিস হলেও, বোলাররা আবারো সুযোগ তৈরী করে। বাংলাদেশও ম্যাচ জিতে। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বে ব্যাটিং বা স্পোর্টিং পিচে খেলা হচ্ছে। বোলিংয়ে যদি বৈচিত্র না থাকে তাহলে ম্যাচ জেতাটাই কঠিন। হারারেতেই তার জলন্ত উদাহরণ পাওয়া গেল।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সভাপতি থেকে শুরু করে বোর্ডের বেশিরভাগ কর্তারা গণমাধ্যমের সামনে কখনো বনে যান কোচ, কখনো নির্বাচক বা বিশ্লেষক। তারা যদি নিজ নিজ দায়িত্বের জাগায় আরেকটু মনোযগী হতেন তাহলে প্রায় ২২ বছর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোয়াটওয়াশের তীরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো না দেশের ক্রিকেট। কোচিং স্টাফদের কাছে সরাসরি জানতে চাওয়া হোক ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থতার কারণ, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ফিল্ডিং উন্নতি হতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়তো না। বলা হয় ক্রিকেটে রাতারাতি কেবল এই বিভাগেই উন্নতি সম্ভব। আর দেশির ক্রিকেট মাঠের পিচগুলোর উন্নতি সাধিত না হলে সামনে মহাবিপদ। ব্যাটসম্যান বা বোলার, কেউই ঘরের বাহিরে বা বৈশ্বিক আসরে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারবে না। বিপদে পড়ার আগেই রিয়াদ-মুশফিকরা-শান্তরা সাবধানী ব্যাটিং করেছে এই সিরিজে। অথচ ধ্বংসস্তুপের সামনে দাঁড়িয়ে বীরের ন্যায় সাহসী ব্যাটিং করেছে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। ট্রু উইকেটে খেলার অভ্যাস না থাকলে এই ধরণের ব্যাটিং ব্যাক্তিত্বই সৃষ্টি হয় না।
এদিকে ইনজুরির বন্যা বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তৃতীয় ওয়ানডে এবং সামনের এশিয়া কাপের আগে রিগুলার স্কোয়াডের মোট ৭ জন ক্রিকেটার চোটাগ্রস্থ। শেষ ম্যাচের আগে মুস্তাফিজ সেরে উঠবেন কিনা তা জানা যাবে আজ রাতে। শরীফুল ও তাসকিনকে সব সংস্করণেই বিবেচনা করেন নির্বাচকরা। তাই এদের একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করা যেত, তাতে চোতের শঙ্কাও কমে, প্লেয়ার সতেজতাও ঠিক থাকে। দুইজনকেই অসম্ভব ক্লান্ত দেখিয়েছে প্রথম ২ ম্যাচে। প্রথম দুই ম্যাচে হতাশ করেন এই দুইজন। তাই শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে নাসুম ও তাইজুলকে একসাথে দেখলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। তবে পূর্বের ম্যাচ গুলোর মত সুযোগ আসার সাথে সাথেই তা কাজে লাগাতে না পারলে টাইগারদের পুড়তে হবে ধবল ধোলাইয়ের কলঙ্কে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন