পৃথিবীতে যত সৃষ্টি আছে সব সৃষ্টিরই জৈবিক চাহিদা আছে। আছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। তাদের বংশ রক্ষা ও বিস্তারের জন্য এর বিকল্পও নেই। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর তিনি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একাকী জীবনযাপন করেছিলেন। জান্নাতে তার জীবনযাপন সুখশান্তিতে পরিপূর্ণ থাকার পরও তার মধ্যে এক ধরনের নির্জনতা ও একাকিত্ব পরিলক্ষিত হয়। তার প্রকৃতি ও স্বভাবের মধ্যে একজন সাথী বা সঙ্গীর অভাব টের পাওয়া যায়। পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা হযরত হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করেন।
হযরত আদম (আ.) একজন জীবনসাথী পেয়ে অত্যন্ত খুশি হন এবং অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম ও হাওয়া (আ.) উভয়কেই জান্নাতে বসবাসের অনুমতি দেন। ইরশাদ হয়েছে : আর হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বাস করো। (সূরা আ’রাফ : ১৯)। বিভিন্ন ঘটনার পর তারা দু’জন পৃথিবীতে পা রাখেন, একত্রিত হন। তাদের বংশধারাতেই আজকের পৃথিবীতে বসবাসকারী ৭০০ কোটি আদম সন্তান। এ ব্যাপারে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন : হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। (সূরা নিসা : ১)।
আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ সৃষ্টি করে একে অপরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ দিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের মাধ্যমে একে অপরের জৈবিক চাহিদা বৈধভাবে পূরণ করার ব্যবস্থা করেছেন। নারী-পুরুষ আলাদাভাবে সৃষ্টি করা ও মানুষের জৈবিক চাহিদা থাকার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে পৃথিবীতে মানবসভ্যতা টিকে থাকা। নারী ব্যতীত যেমন পৃথিবীতে বংশবিস্তার সম্ভব নয়, তেমনি সম্ভব নয় পুরুষ ব্যতীতও (হযরত ঈসা (আ.) আল্লাহর কুদরতে ব্যতিক্রম)।
কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে হযরত লূত (আ.)-এর সম্প্রদায় ছিল আল্লাহর সৃষ্টির উদ্দেশ্যের বিপরীত। সম্প্রদায়ের পুরুষেরা তাদের স্ত্রীদের রেখে পুরুষে পুরুষে জৈবিক চাহিদা মেটাতো। তারা আল্লাহর সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায় হিসেবে পরিণত হয়েছিল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন : আর (প্রেরণ করেছি) লূতকে। যখন সে তার কওমকে বলল, ‘তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সৃষ্টিকুলের কেউ করেনি? তোমরা যৌন তাড়নায় স্ত্রীদের বাদ দিয়ে পুরুষদের নিকট গমন করছ, তোমরা হচ্ছ এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা আ’রাফ : ৮০-৮১)।
যেই কাজটির জন্য পবিত্র কোরআন কওমে লুতকে সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করেছে। সেই কাজটি বর্তমান পৃথিবীতে একটি মহামারির রূপ ধারণ করেছে। দুনিয়া যার নাম দিয়েছে হোমোসেকসুয়ালিটি বা সমকামিতা। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী সমকামিতা একটি জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ। আধুনিক বিশে^র সবচেয়ে বড় ফেতনা এই সমকামিতা। আল্লাহ তায়ালা যেই অপরাধে একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, সেই অপরাধকে দেশে দেশে এখন যৌন স্বাধীনতার নামে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। উন্নত বিশে^র কোনো কোনো দেশে সমলিঙ্গের বিবাহের আইন চালু করা হচ্ছে।
যেই অপরাধের শাস্তির চিহ্ন এখনো পৃথিবী বয়ে বেড়াচ্ছে, যৌন স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে সেই কাজটিকে বৈধতা দেয়ার পক্ষে সাফাই করার লোকও দুনিয়াতে অভাব নেই। নিঃসন্দেহে তারা সীমালঙ্ঘনকারী ও আল্লাহর সাথে বিদ্রোহকারী। তাদের উচ্চকণ্ঠ শুনে মনে হয়, তারা যেন সেই সম্প্রদায়, যারা লূত (আ.)-কে আল্লাহর আযাবের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল। পবিত্র কোরআন বলছে : ‘ তোমরা তো পুরুষের ওপর উপগত হও এবং রাস্তায় ডাকাতি করো; আর নিজদের বৈঠকে গর্হিত কাজ করো!’ তার কওমের জবাব ছিল কেবল এই যে, তারা বলল, ‘তুমি আল্লাহর আযাব নিয়ে আস যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও’। (সূরা আনকাবুত : ২৯)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন