বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দোনেৎস্কের অর্ধেক এলাকা মুক্ত করেছে মিত্রবাহিনী

পূর্বাঞ্চলীয় শহর পিস্কিতে লড়াই চলছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৩ এএম

২৪ ঘণ্টায় ২০ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে
ন্যাটো জোট পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে : রাশিয়া
ইউরোপে রাশিয়ার কয়লা আমদানি বন্ধ
বন্দি বিনিময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করছে রাশিয়া

ডিপিআর প্রধান ডেনিস পুশিলিন বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সমর্থনে ডনবাস প্রজাতন্ত্রের মিত্রবাহিনী দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা মুক্ত করেছে। এদিকে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর পিস্কির চারপাশে প্রচÐ লড়াই শুরু হয়েছে। শিল্পোন্নত ডনবাস অঞ্চল সম্পূর্ণ মুক্ত করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া। তার জন্য এ শহরটি কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

‘আজ পর্যন্ত ২৬৬টি আবাসিক বসতি মুক্ত করা হয়েছে। যদি আমরা শতাংশের অঙ্কের কথা বলি তবে এ অঞ্চলে এটি অর্ধেকের বেশি,’ তিনি বলেন। ‘তবে, যদি আমরা জনসংখ্যার পরিসংখ্যান এবং এসব অঞ্চলে বসবাসকারী লোকদের কথা বলি, তবে আমার বলা উচিত যে, আমরা অর্ধেকের থেকেও অনেক বেশি অগ্রসর হয়েছি,’ ডিপিআর প্রধান উল্লেখ করেছেন যে মিত্র বাহিনী বিভিন্ন দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ‘আভদেয়েভকা দিকনির্দেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমরা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর পিস্কিকে আমাদের অগ্রগতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসাবে দেখি, যেখানে আলাদাভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে,’ তিনি বলেন, ‘শত্রæ পিছু হটেছে এবং এখন পারভোমাইস্কের আশেপাশে ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করছে।’

পুশিলিন যোগ করেছেন যে, মিত্রবাহিনী উত্তর দিকেও অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে আর্টিওমভস্ক এবং সোলেদারের জন্য লড়াই ইতোমধ্যেই চলছে। তিনি যোগ করেছেন যে, এই দিকে সামরিক বাহিনীর অগ্রগতি জটিল কারণ গত আট বছরে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে শক্ত দুর্গ তৈরি করেছে এবং আশেপাশের অঞ্চল জুড়ে মাইন স্থাপন করেছে। পূর্বাঞ্চলীয় শহর পিস্কিতে লড়াই চলছে : রাশিয়া সমর্থিত দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের দানিল বেজসোনোভ নামের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পিস্কি রুশ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা শহরটি পতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। টেলিগ্রাম পোস্টে দানিল বলেন, পিস্কিতে উত্তপ্ত অবস্থা। শহরটি আমাদের কিন্তু উত্তর ও পশ্চিমের কিছু অংশ তাদের (কিয়েভের সেনাদের) দখলে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ২৪ তম সপ্তাহ শুরু হওয়ার সাথে সাথে উভয় পক্ষই একটি সামরিক অচলাবস্থায় আটকে আছে। দক্ষিণ খেরসন অঞ্চলে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ কোনো আঞ্চলিক অগ্রগতি করেনি এবং পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলে রাশিয়াও ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জন করছে।

২৪ ঘণ্টায় ২০ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে : রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের সীমান্ত বিভাগ গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছে, গত দিনে ২৪ ঘন্টায় দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের ২০ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা রোস্তভ অঞ্চলে রাশিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করেছে। ‘গত দিনে, ২০,৫০০ এরও বেশি নাগরিক রোস্তভ অঞ্চলের চেকপয়েন্টের মাধ্যমে রাশিয়ায় প্রবেশ করেছে,’ প্রেস সার্ভিস বলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেব্রæয়ারী থেকে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের প্রায় ২৫ লাখ নাগরিক রোস্তভ অঞ্চলে রাশিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করেছে।

ন্যাটো জোট পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে : পরমাণু শক্তির অধিকারী নয় এমন দেশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে ন্যাটো, যা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি বা এনপিটির লঙ্ঘন। তাছাড়া এর মাধ্যমে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ দাবি করা হয়েছে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সম্প্রতি জাতিসংঘের উদ্যোগে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ পর্যালোচনাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিনিধিদল মূলত এ বার্তা তুলে ধরেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক ইগর ভিশনেভেটস্কি বলেন, ন্যাটো জোট প্রকাশ্যে নিজেকে একটি পরমাণু জোট বলে ঘোষণা দিয়েছে। জোটের প্রধান সদস্য যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু অস্ত্র নেই এমন দেশগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করছে।

রাশিয়ার এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এনপিটির এক ও দুই নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে পরমাণু অস্ত্রের বাস্তব পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এই ধরনের তৎপরতা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ও ইউরোপীয় নিরাপত্তার ওপর উল্লেখযোগ্যভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বরং এটি পরমাণু সঙ্ঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, মস্কোর অবস্থান হচ্ছে মার্কিন পরমাণু অস্ত্রগুলো অবশ্যই তার নিজস্ব ভ‚খÐের ভেতরে সরিয়ে দিতে হবে, পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের জন্য ইউরোপে যেসব অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে তা ধ্বংস করতে হবে ও নাটোর যৌথ পরমাণু মিশন বাতিল করতে হবে।

ইউরোপে রাশিয়ার কয়লা আমদানি বন্ধ : ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানোর শাস্তি হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। নিজস্ব স্বার্থেই সেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করা সম্ভব না হলেও ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বুধবার দিনগত রাত থেকে রাশিয়া হতে কয়লা আমদানি বন্ধ করা হল।

রাশিয়ার ওপর পঞ্চম দফার নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে ১২০ দিন আগে ইইউ সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইইউ কমিশনের হিসেব অনুযায়ী এর ফলে রাশিয়া বছরে প্রায় ৮০০ কোটি ইউরো হারাবে। রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করলেও পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের ক্ষেত্রে ইইউ দ্রæত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। নীতিগতভাবে পেট্রোলিয়াম আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত সেই সরবরাহে কোনো বাধা দেবে না ব্রাসেলস। তাছাড়া হাঙ্গেরির মতো দেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে ইইউ। উপক‚লবিহীন দেশ হিসেবে হাঙ্গেরি পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানি করে। প্রসঙ্গত, গত বছর পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন আনুমানিক ৪১০ কোটি ইউরো মূল্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ কয়লা রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে।

বন্দি বিনিময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করছে রাশিয়া : রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র ইভান নেচায়েভ গতকাল এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য বন্দি অদলবদল নিয়ে আলোচনা করছে। ‘আমরা বারবার এই বিষয়ে মন্তব্য করেছি। ৫ আগস্ট, রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ নিশ্চিত করেছেন যে, রাশিয়া বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে শুধুমাত্র রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট (ভ্লাদিমির পুতিন) এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট (জো বাইডেন) দ্বারা আলোচনার চ্যানেলের মধ্যেই। আমরা নিশ্চিত করছি যে, সংশ্লিষ্ট উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপযুক্ত এজেন্সিগুলো আলোচনায় আছে,’ বলেছেন রাশিয়ান ক‚টনীতিক।

তিনি ওয়াশিংটনের কাছে মস্কোর অনুরোধের কথাও স্মরণ করেন ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে এমন সংবেদনশীল ইস্যুতে অনুমান না করার জন্য।’ ‘আমরা আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টির নিরর্থক প্রচেষ্টা ত্যাগ করার সুপারিশ করব এবং আমরা তাদের উপলব্ধ চ্যানেলগুলির সাথে ব্যবহারিক কাজে মনোনিবেশ করার জন্য আহŸান জানাচ্ছি। অন্য কোন উপায় নেই,’ নেচায়েভ উপসংহারে বলেছিলেন। ক‚টনীতিক জোর দিয়েছিলেন, ‘আমরা এই সত্য থেকে এগিয়ে যাচ্ছি যে, আলোচনায় উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় নেয়া উচিত।’

এর আগে, ওয়াশিংটন মস্কোকে অস্ত্র পাচারের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারাগারে দÐিত রাশিয়ান ব্যবসায়ী ভিক্টর বাউট, মাদক পাচারের দায়ে কারাগারে দÐিত বাস্কেটবল খেলোয়াড় ব্রিটনি গ্রিনার এবং রাশিয়ায় গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দোষী সাব্যস্ত পল হুইলানের বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। জুলাইয়ের শেষের দিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøঙ্কেন-এর মধ্যে টেলিফোন কথোপকথনে বন্দীদের বিনিময় একটি বিষয় ছিল। আমেরিকান মিডিয়া পরে, অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে, রাশিয়া পশ্চিমের কারাগারে থাকা আরও একজন রাশিয়ান বন্দিকে বন্দী বিনিময়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল। সূত্র : তাস, আল-জাজিরা, ডয়েচে ভেলে, বিবিসি নিউজ, রয়টার্স।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Shaheen Rahman ১২ আগস্ট, ২০২২, ৭:১১ এএম says : 0
সার্বভৌমত্ব,অস্তিত্ব ও নিরাপত্তার স্বার্থে আরো দশ বছর আগেই রাশিয়ার ইউক্রেন দখল করে নেয়া উচিত ছিলো। যদিও অনেক দেরীতে তা শুরু করেছে রাশিয়া। শুভ কামনা রইলো রাশিয়ার জন্যে।
Total Reply(0)
Shaheen Rahman ১২ আগস্ট, ২০২২, ৭:১১ এএম says : 0
সার্বভৌমত্ব,অস্তিত্ব ও নিরাপত্তার স্বার্থে আরো দশ বছর আগেই রাশিয়ার ইউক্রেন দখল করে নেয়া উচিত ছিলো। যদিও অনেক দেরীতে তা শুরু করেছে রাশিয়া। শুভ কামনা রইলো রাশিয়ার জন্যে।
Total Reply(0)
Ak Mondal ১২ আগস্ট, ২০২২, ৭:১২ এএম says : 0
রাশিয়া কে কেন্দ্র করে পুরো ইউরোপ আমেরিকার নতুন কলোনি হয়ে যাবে। এটা শিগ্রম।
Total Reply(0)
Mahbub Hassan ১২ আগস্ট, ২০২২, ৭:১২ এএম says : 0
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শেষ হবে
Total Reply(0)
Nazmul Islam Shahin ১২ আগস্ট, ২০২২, ৭:১২ এএম says : 0
যুদ্ধটা শেষ পর্যন্ত হয়তো পারমানবিক যুদধে পরিনত হবে । কারো থামার কোন পরবনতা নাই । কেউ মধ্যস্থতাও করছে না ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন