স্প্যানিশ লা লিগা বলতেই গত দশকের ফুটবলপ্রেমীদের চোখে ভেসে উঠে লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দ্বৈরথ। সময়ের পরিক্রমায় শুধু ক্লাবই নয় স্পেনই ছেড়েছেন দুই নক্ষত্র। তাতে কিছুটা হলেও জৌলুস কমেছে স্প্যানিশ লিগের। কিন্তু তবুও ইউরোপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ক্লাবটি হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। ঘরের লিগে ৩৫ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া লস ব্ল্যাঙ্কসরা একই সাথে লা লিগারও রাজা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বার্সালোনার ট্রফি ৯টি কম। তবে এবারের দল বদলের বাজারে ছক্কা হাঁকিয়ে জাভি হার্নান্দেসের বার্সা রীতিমতো উড়ছে। অনেক এগিয়ে থাকা এই দুই ক্লাবকে শেষ এক যুগে চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছে কেবল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। তবে রিয়াল বেটিস ও সেভিয়া শেষ দুই মৌসুমে বেশ আলোচনায় আছে তাদের মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে। গতকাল রাতেই অবশ্য মাঠে গড়িয়েছে স্পেনের নতুন ফুটবল মৌসুম। তবে শুরুতেই দেখা নেওয়া যাক ক্লাবগুলোর হালচাল।
রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার কার্লো আনচেলত্তি দল বা একাদশ সাজানোর ক্ষেত্রে বরাবরই খুব অনুমানযোগ্য। উঠতি তারকা বা বেঞ্চের প্লেয়ারদের ধীরে ধীরে খেলিয়ে দলের সাথে রসায়ন তৈরীর সুযোগ তিনি কমই দেন। দুদিন আগে উয়েফা সুপার কাপের ফাইনালে, নতুন দুই সাইনিং চুয়ামেনি ও রুডিগারকে একাদশের বাহিরে রেখে ইতালিয়ান কোচ সেই ধারা বজায় রেখেছেন। অনেক সময় দেখা যায় সিজনের শেষভাগে দলের মূল প্লেয়াররা খুবই পরিশ্রান্ত থাকেন। তখনই পার্থক্য গড়ে উঠে অন্য প্রতিপক্ষের সাথে। এদিকে জোভিক, বেল, মার্সেলো, ইসকো, ময়রাল, কিবোর মতন প্লেয়ারদের ছেড়ে দিয়েছে রিয়াল। মার্সেলো ছাড়া বাকি সবাই আক্রমণভাগের সৈনিক ছিল। কিন্তু সেই অভাব পুরণে একজন ফরোয়ার্ডও কিনেনি ক্লাবটির সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। উল্লেখ্য এমবাপ্পেকে দলে ভেড়াতে ব্যর্থ হয় ক্লাবটি। এই মৌসুমে বেনজেমা যদি চোটে পড়েন বা গোল খড়ায় ভোগেন তাহলে রিয়ালের জন্য নিশ্চিত শনি অপেক্ষা করছে। তবে দলটির ডিফেন্স ও মধ্যমাঠে এখনও ইউরোপের সেরা।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সা এবারের দলবদলের বাজারে সবচেয়ে চমক জাগানিয়া ক্লাব। গাভি, পেড্রি, বুস্কেটস ও ডি ইয়ংকে মধ্যমাঠে সহায়তা করার জন্য ইউরোপের পরীক্ষিত ফ্রাঙ্ক কেসিকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। তাও ফ্রি এজেন্টে। তাছাড়া ডিফেন্স নতুন করে সাজানোর জন্য নিয়ে এসেছে ক্রিশ্চিয়ানসেনকে। একদম বিনা পয়সায়। ধারণা করা হয় এখানেই কাতালান ক্লাবটি প্রায় ৮০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ইউরো বাঁচিয়ে ফেলেছে। ডিফেন্সকে টেকসই করতে কিনেছে জুলেস কুন্দকে। আর দেম্বেলে, ডিপাই ও আবামেয়াংদের সাথে নিয়ে গড়া আক্রমণভাগকে আরও শাণিত করতে দলে টেনেছে লোভান্দোভস্কি ও রাফিনিয়াকে। তাই কৌতিনহো, ত্রিনকাও, ল্যাঙলেট ও রিকি পুসকে ছেড়ে দিয়েও বেশ শক্তিশালী আছে কাতালান জায়ান্টরা। ডেপাই ও ডি ইয়ং যদি গুঞ্জন সত্যি করে বার্সা ছেড়েও যায়, তবুও ক্লাবটির সকল বিভাগ এবং বেঞ্চ দারুণ ব্যালেন্সড থাকবে। এবার তাই মাদ্রিদের দুই ক্লাব রিয়লি ও অ্যাটলেটিকোকে আগেভাগেই হুমকি দিয়ে রাখতে পারে বার্সা সমর্থকরা। শেষ দুই মৌসুমে তারা এই দুই ক্লাবের কাছেই খুইয়েছিল লা লিগার ট্রফি।
দিয়াগো সিমিওনে ২০১১/১২ মৌসুমের মাঝপথে অ্যাটলেটিকোর দায়িত্ব নেন। এরপর তার অধীনে গত এক দশকে আমুলে বদলে গিয়েছে মাদ্রিদের দলটি। রোনালদো-মেসির যুগে তৃতীয় আরেকটি ক্লাব যে স্পেনের সেরা হতে পারে তা করে দেখিয়েছেন সিমিওনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও দুবার উঠিয়েছিলেন ‘কলচোনেরোস’দের, যদিও দুবারই নগর প্রতিদ্বন্দী রিয়ালের কাছে পরাজিত হয়েছিল তারা। সিমিওনি এবার ছেড়ে দিয়েছেন সুয়ারেজ, ব্রেসাল্কো, হেরেরা, ভিতোলো সহ বেশ কজন উল্লেখযোগ্য প্লেয়ারকে। অন্যদিকে ফ্রি এজেন্টে দলে টেনেছেন এক্সেল উইসেলকে। আর ব্রেসাল্কোর জায়গা পুরণ করেছেন আর্জেন্টাইন রাইটব্যাক মোলিনাকে দিয়ে। পুরনো হেমিনেস, হারমোসো, ফিলিপে ও সেবিককে নিয়ে সেন্টারব্যাক লাইন এখনও বেশ শক্তিশালী। কোকে, সাউল, ডি পল, লোরেন্তো ও নতুন উইসেলকে নিয়ে মধ্যমাঠেও ভরসা রাখা যায়। তবে সুরাজে চলে যাওয়ায় এবার গোলের জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে রেকর্ড সাইনিং ফিলিক্সের দিকে। সঙ্গে গ্রিজম্যান ও লোন থেকে ফিরে আসা মোরাতাত আছেই। সবমিলিয়ে এবারো বেশ দারুণ দল এটলেটিকো।
এবারের লা লিগার পর্দা গত রাতেই উঠেছে ওসাসুনা বিপক্ষে সেভিয়ার ম্যাচ দিয়ে। প্রথম ম্যাচে সেভিয়ার ফলাফল নিশ্চয়ই ফুটবলপ্রেমীদের নিকট পৌঁছেছে ইতিমধ্যেই। হুয়ান লপেতেগুইয়ের অধীনে লা লিগায় নিজেদের অবস্থান বেশ মজবুত করেছে সেভিয়া। গতবার চারে থেকে মৌসুম শেষ করে দলটি। সেই সফলতায় দারুণ অবদান ছিল কুন্দে ও দিয়াগো কার্লোসের। তবে এই দুজনকেই বিক্রি করে দেওয়ায় সেভিয়া এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলবে কিছুটা অরক্ষিত রক্ষণ নিয়ে। যদিও তারা ব্রাজিলিয়ান সেন্টারব্যাক মার্কাওকে দলে টেনেছে সেই অভাব পূরণে। তাছাড়া লোনে এনেছে লেফট ব্যাক এলেক্স টেলকে। আর সম্পূর্ণ ফ্রিতে দলে ভিড়িয়েছে ইস্কোকে। ইউসুফ নেসরি,ওক্যাম্পোস, লামেলার ও পাপু গোমেজকে নিয়ে গড়া দলটির আক্রমণভাগ সর্বক্ষণ প্রস্তুত প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের চ্যালেঞ্জ দিতে। আর পাপু গোমেজ, র্যাকেটিচ, ডিলানিদের সঙ্গে ইস্কো যোগ দেওয়ায় মধ্যমাঠ আরো ক্ষুরধার হচ্ছে তাদের।
সেভিয়া শহরের আরেক ক্লাব রিয়াল বেটিস। এই ক্লাবও গত দুই মৌসুমে নিজেদেরকে নতুন ভাবে চেনাচ্ছে। সর্বশেষ মৌসুমে ম্যানুয়েল প্যালেগ্রেনির ছোয়ায় তারা জিতেছে কোপা দেল রে। লুইজ ফিলিপিকে দলে টেনে রক্ষনের ধার বাড়িয়েছে ক্লাবটি। নাবিল ফেকিরের সঙ্গে লুইজ হেনরিকে ও উইলিয়াম জোসে যোগ দেওয়ায় গোল নিয়ে চিন্তা কমবে চিলিয়ান বর্ষীয়ান কোচের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন