মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জ্বালানির দাম কমতে পারে

বিতর্কের মুখে উপায় খুঁজছে সরকার

এখলাছ হক | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সারাবিশ্বে জ্বালানির দাম কমার মধ্যেই দেশে বেড়ানো হয়। এতে ব্যক্তি পর্যায়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা দিয়েছে সমাজের সর্বক্ষেত্রে। সাধারণ মানুষ রোজগারের সাথে কোনভাবেই সামঞ্জস্যতা মিলাতে পারছেন না। নুন আনতে পান্তা ফোরানোর মতো অবস্থা দেখা দিয়েছে অধিকাংশ পরিবারে। এরইমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য সমালোচনা শুরু হয়। দেখা দেয় নানা বিতর্ক। আন্দোলনে নামেন অনেক সংগঠন। জ্বালানি তেলের দামের বর্তমান পরিস্থিতি থাকলে অল্পদিনের মধ্যেই সাধারণ মানুষ এই নিত্যপণ্যটির ক্রয় ক্ষমতা হারাবেন। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের মূল্য কমার আশা করছেন অনেকে।

ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রচারে মন্ত্রিসভা নির্দেশ দিলেও সরকার এখন দাম কমানোর উপায় খুঁজছে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি ও পেট্রোবাংলাকে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
তেলের বাড়তি দর সরকারকে রাজনৈতিকভাবেও চাপে ফেলেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমাগত আক্রমণের মুখে সরকারের দৃশ্যত কোনো শক্তিশালী জবাব নেই। এই পরিস্থিতি আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকারকে চাপে ফেলতে পারে-এমন আশঙ্কা করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সতর্ক করে দিয়েছেন, তেলের দাম বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমছে এবং বাংলাদেশ কম দামে কেনা শুরু করেছে।
তেলের দাম বাড়ানোর দুই দিন পরই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে কমলে দেশেও কমবে তেলের দাম। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ অবশ্য জানিয়েছেন, তেলের দাম কমাতে দুই মাস সময় লাগতে পারে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ জানিয়েছে, সব রকমের কর প্রত্যাহার করলে, প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য কম করে হলেও ৩৬ টাকা কমানো সম্ভব। ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, ডিজেল ও অকটেনের আমদানির ওপর কাস্টমস শুল্ক ও অন্যান্য কর বাবদ রাজস্ব কর্তৃপক্ষটি প্রায় ৩৪ শতাংশ কর আদায় করে। এর মধ্যে কাস্টমস শুল্ক হলো ১০ শতাংশ, ভ্যাট বা মূসক ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ২ শতাংশ এবং অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ। এখন ১১৪ টাকার প্রতি লিটার ডিজেল থেকে ৩৬ টাকা কর আদায় করছে সরকার। গত ৫ আগস্ট থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রল ও অকটেনের দাম যথাক্রমে ৪৪ ও ৪৬ টাকা করে বাড়ানো হয়। এতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রস্তাবনা তৈরি করতে এরই মধ্যে বিপিসি ও পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। জ্বালানি বিভাগের দেয়া এই নির্দেশনায় আমদানি খাতে ভ্যাট ও ট্যাক্স কতটা কমিয়ে কীভাবে তা জনগণের সহ্যসীমায় রাখা যায়, তার বিস্তারিত তুলে ধরতে বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবনা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর তিনি তা অনুমোদন দিলে এনবিআরের কাছে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, জ্বালানি বিভাগের এই চিঠির কোনো উত্তরই দেয়নি জাতীয় রাজস্ব বিভাগ। উল্টো বিপিসির হিসাবে জমা থাকা উদ্বৃত্ত টাকা নিয়ে নেয় সরকার। এই টাকা না নিলে অন্তত ২১ মাস লোকসান দিয়ে আগের দামেই তেল বিক্রি করতে পারত বিপিসি’-বলছিলেন তিনি। বিপিসির হিসাব অনুযায়ী ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর থেকে সংস্থাটি শুল্ক, কর ও লভ্যাংশ বাবদ সরকারি কোষাগারে ৫৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। ২০২০ এবং ২০২১ অর্থবছরে সরকারের কোষাগারে ৯ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে বিপিসি।
জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানি বাবদ উচ্চহারের ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ সরকার বড় আকারের রাজস্ব আদায় করে। জ্বালানি আমদানির ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানোর মাধ্যমে বিপিসির লোকসান কমাতে ২০২১ সালেই জ্বালানি বিভাগ এনবিআরকে চিঠি লেখে।
এতে বলা হয়, এনবিআর আমদানি ট্যাক্স কমালে একদিকে যেমন বিপিসির লোকসান ঠেকানো যাবে, তেমনি লোকসান এড়াতে মূল্য বাড়ানোর ঝুঁকিও নিতে হবে না। ফলে জনগণের ওপর বাড়তি দরের চাপ সামলানো যাবে ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে সাত বছর মুনাফা করলেও তার আগের ১৪ বছর টানা লোকসান করেছে বিপিসি। মুনাফার টাকায় সেই সব লোকসান সমন্বয়ও করা যায়নি।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি কোনো স্থায়ী কিছু না। এটা একটি সাময়িক পদক্ষেপ। বিপিসিকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এটা করতে হয়েছে। আমরা এটা সমন্বয় করব। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। সবাই মাথা ঠান্ডা রাখলে, ধৈর্য ধরলে এই সঙ্কট সামলাতে পারব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
এম.জে.এ মামুন ১৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:৫৪ পিএম says : 0
দাম বাড়ানোর সময় কোন উপায় খোঁজার প্রয়োজন হয়নি, রাতের আধারে দাম বেড়েগেলো অথচ কমানোর সময় উপায় খুজতে হয়!!! গরিবরা অধিক ব্যয়ের চাপে দিশেহারা, নির্বাক, দ্রুত জ্বালানীসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে হবে।
Total Reply(0)
Nazmul Hasan Roni ১৩ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
জ্বালানির দাম কমলে বাস ভাড়া সেদিন থেকে কার্যকর হবে নাকি ২মাস পরে থেকে সেটাও খেয়াল রাখা দরকার৷ কারন দেশে যেটার দাম বাড়ে এই অযুহাতে দাম কমলেও সেসবের দাম কমেনা।
Total Reply(0)
Mahabub Rabbani Milon ১৩ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
সুযোগ থাকলেও কমাবে না
Total Reply(0)
Mehedi Hassan ১৩ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪১ এএম says : 0
অন অতি বিলম্বে দাম কমানো হোক
Total Reply(0)
Shamsul Huda ১৩ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
২ টাকা কমানো যেতে পারে। তাতে অন্তত বলা যাবে তেলের দাম কমছে ????
Total Reply(0)
Md Mokbul Hossain ১৩ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
এতে আশান্বিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সমন্বয় হবে। ধর্য্য ধরেন।
Total Reply(0)
Abdur Rahim Pathan ১৩ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
আগের দামে তেল চাই
Total Reply(0)
Md.mohasin mia ১৪ আগস্ট, ২০২২, ৫:১৪ এএম says : 0
এক রাতেই তেলের দাম বাড়ানোর য়ায়। কমতে কেনো এতো দিন লাগে......
Total Reply(0)
Sheikh Md Kamrul Hasan ১৩ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪১ এএম says : 0
গা‌ড়ী ভাড়া আর কম‌বে না, জালা‌নির দাম যতই কমাক!
Total Reply(0)
Md.mohasin mia ১৪ আগস্ট, ২০২২, ৫:১৪ এএম says : 0
এক রাতেই তেলের দাম বাড়ানোর য়ায়। কমতে কেনো এতো দিন লাগে......
Total Reply(0)
A.B.M. Nurun Nabi ১৪ আগস্ট, ২০২২, ১০:৪৮ পিএম says : 0
I am retired private job holder. I have limited source of income. On this situation really paiful for me to maintain my family due to price high everything. More Bangladeshi peoples are suffering as like me.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন