বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য জনগণের সাথে তামাশা

ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুতের দায়মুক্তি আইন বাতিল সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় আমরা সুখে আছি, বেহেস্তে আছি- পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এহেন উক্তি ‘জনগণের সাথে তামাশা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের মানুষ যখন প্রতিমুহূর্তে ভোগান্তি হচ্ছে, কষ্ট করছে এবং হিমশিম খাচ্ছে, জীবন দূর্বিসহ হচ্ছে সেই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেহেস্তে যাওয়ার কথা বললেন, যে বেহেস্তে আছে। বেশিরভাগ মন্ত্রী এখন জনগণের সাথে পরিহাস, তামাশা শুরু করেছেন। গতকাল শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান অবস্থার জন্য সরকারের ‘সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, আত্মঘাতি চুক্তি ও অপরিনামদর্শী পরিকল্পনা’কে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবারহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানির চুক্তি বাতিল করা হবে। ১২ দফা পদক্ষেপ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি আর হরিলুটের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। এখন শহরে দুই-তিন ঘন্টা ও গ্রামাঞ্চলে পাঁচ-ছয় ঘন্টা লোডশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊধর্বগতিতে মানুষের জীবন নাভিশ্বাস উঠেছে, বিদ্যুতের লোডশেডিংজনিত জনদুর্ভোগ মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে যুক্ত হয়েছে। মানুষ দিশেহারা হয়ে উঠেছে, চরমভাবে তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

ব্যর্থতার জন্য সরকারের পদত্যাগের পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদ্যুৎখাতের বিপর্যয়, রিজার্ভের সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাসের দায় নিয়ে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে।

ক্ষমতায় গেলে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বাতিল করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান আমরা করব। আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবারহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনসহ সকল কালা কানুন বাতিল করব। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল করা হবে। স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলত আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা হবে। চাহিদা অনুযায়ী পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করা হবে। উৎপাদনের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন অতিদ্রুত স্থাপন করা হবে। বাপক্সে ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দেশীয় খনিজ ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। একই সাথে দেশীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।

এছাড়া বঙ্গোপসাগরে সম্ভাবনাময় গ্যাস/পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ উত্তোলনে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের সকল দুর্নীতি-অনিয়মের সাথে জড়িতদের শাস্তি, জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে মোট উৎপাদনের ৫০% নবায়নযোগ্য শক্তি নির্ভর জ্বালানি নীতি গ্রহন, বেইস লোড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন গড়ে তোলা, বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সংস্কার এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০-এ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

ক্যাপাসিটি চার্জে ৯০ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টে চালুর ২/৩ বছর পরই বন্ধ হওয়ার কথা থাকলে প্রয়োজন ছাড়াই এখনো চালু আছে। বেশ কিছু রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি ট্যাক্স বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই সরকারকে এই পর্যন্ত ৯০ হাজার কোটি টাকার গচ্ছা দিতে হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটেই গেছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। গত ১২ বছরে ক্যাপাসিটি ট্যাক্স বাবদ গেছে প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। গত তিন বছরেই গেছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে মোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাত্র ৪৩% বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। অবশিষ্ট ৫৭% অলস বিদ্যুৎ বসিয়ে রেখে কেন্দ্রের ভাড়া দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ না কিনে গত অর্থ বছরে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা, তার আগে বছর করা হয়েছে ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরে এই খাতে ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ৬শ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বেড়ে হয়েছে ১৮%। ক্রমেই ক্যাপাসিটি চার্জের বিল বেড়েই যাচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। বর্তমানে বাড়তি উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে আরো বিদ্যুৎ কেন্দ্র আসছে। এতে অলস খরচ আরো বাড়বে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সামিট গ্রুপ, এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল, এরদা পাওয়ার হোল্ডিং, ইউনাইটেড গ্রুপ, কেপিসিএল, বাংলা ক্যাট, ওরিয়ন গ্রুপ, হোসাফ গ্রুপ, মোহাম্মদী গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও এপিআর এনার্জি এই কোম্পানি গুলো কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। এ ছিলো কুইক রেন্টালের নামে কুইক লুটপাট।

ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি কেনো প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারত থেকে বর্তমানে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এ জন্য গত তিন অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে। আদানি গ্রুপের ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কথা রয়েছে। বাংলাদেশে যখন প্রায় ৬০ শতাংশ ওভার ক্যাপাসিটি রয়েছে ঠিক সে সময় ভারত থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আমদানি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ১৬০০ মেগাওয়াটের আদানি গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ বছরে প্রায় ১১.০১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে। এই বিদ্যুৎ আমদানির ৪০% যায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে। বিদ্যুত কম এলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। চুক্তির ২৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে আদানি গ্রুপকে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি পরিশোধ করতে হবে যা দিয়ে ৩টি পদ্মা সেতু, ৯টি কর্ণফুলী টানেল কিংবা ২ টি মেট্রোরেল নির্মাণের এর জন্য যথেষ্ট।

তিনি বলেন, আদানির এই কোম্পানিকে প্রায় ৩ বছরে মোট ভাড়া দেয়া হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।আর পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতিসহ খরচ পড়েছে ৩০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এই অদূরদর্শী পরিকল্পনার টিপ অফ দ্যা আইসবার্গ হচ্ছে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের দৃষ্টান্ত। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদনে গেলেও সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ শেষ না হওয়ায় কেন্দ্রটি সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। কিন্তু কোন বিদ্যুৎ না দিলেও এ পর্যন্ত ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে চীনা ঋণে বাস্তবায়নাধীন পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিশোধ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো সঞ্চালন লাইনের কাজটি সম্পন্ন করা হলো না কেন? বিদ্যুৎ না কিনেও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ৫ হাজার কোটি টাকা কেন পরিশোধ করা হলো? অনেকেই মনে করেন ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুত না কিনেও যোগসাজশে অর্থ লুটের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন