শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

সঙ্কট মোকাবিলায় নমনীয় ও বাস্তবমুখী থাকতে হবে : আতিউর রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৮ পিএম

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও নমনীয় এবং বাস্তবমুখী থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, এসব নীতি নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। রোববার (১৪ আগস্ট) ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনের চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কাঠমুন্ডুতে আয়োজিত ‘নেপাল ইকোনমিক আউটলুক ২০২৩ অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

নেপালের ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ড. বিশ্বনাথ পৌডেল সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার পর পরের অধিবেশনে ড. আতিউর রহমান একটি মূল নিবন্ধও উপস্থাপন করেন।

বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমনটি বলেছেন সেভাবে ‘অ্যাডভেঞ্চারাস’ না হয়ে, বড় বড় লাফ না দিয়ে চলমান সংকট মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমানে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশীদারত্ব বৃদ্ধি করে নিজেদের সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ধীরে-সুস্থে এগোনোই সঠিক পথ। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে আর্থিক ও জ্বালানি বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কী কী উদ্যোগ নিয়েছে সে সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।

ড. আতিউর রহমান বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুদের হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় রাখার যে সিদ্ধান্ত নেপালের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক নিয়েছে তাকে স্বাগত জানান। নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই হারগুলো বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি এবং এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ দেওয়ার জন্যও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. আতিউর স্মরণ করিয়ে দেন, করোনাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকও তুলনামূলক ছোট উদ্যোক্তাদের রক্ষা করার জন্য একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল।

বর্তমানে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোর কারণে পুরো অর্থনীতি ও আর্থিক সেবাখাতের ডিজিটাইজেশনের নতুন সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ড. আতিউর।

 

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক সেবাখাতের নিয়ন্তাদের প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করতে হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা চালু করতে যাচ্ছে। বাকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করতে পারে। তবে ডিজিটাইজেশন হলেও একেবারে মাঠ পর্যায়ে আরও অনেক দিন নগদে লেনদেন চলবে। ডিজিটাইজেশনে আরও সময় দরকার হবে। তাই এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে এগোনোর দরকার নেই। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটাল সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার এবং এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, ফিনটেক এবং মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অংশীদারত্ব গড়ে তোলায় মনোযোগ দিতে হবে। এসব উদ্যোগকে অবশ্যই মানবিক হতে হবে এবং সেজন্য স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির সঙ্গে মানবশক্তির ব্যবহারের একটি যথাযথ মিশ্রণের মাধ্যমে কাজ কার পদ্ধতিই সবচেয়ে উপযুক্ত হবে। সবশেষে বাণিজ্য ঘাটতি এবং কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতিকেই মুদ্রা বিনিময় হারের অস্থিরতার প্রধানতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন ড. আতিউর রহমান।

এক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বাজারের ভাষা বুঝতে হবে এবং বাজার যেন আরও বেশি সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সুদের হার এবং মুদ্রা বিনিময় হার- এ দুটোর বিষয়েই নমনীয় এবং বাজারমুখী হওয়া এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে বাজার যেন শান্ত এবং ভারসাম্যপূর্ণ থাকে তা নিশ্চিত করতে মনিটরিং জোরদার করার ওপরও জোর দেন তিনি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘উন্মুক্ত আঞ্চলিকতা’র নীতির জায়গা থেকে সব ধরনের জনতুষ্টিবাদী অর্থনৈতিক নীতি বর্জন করার মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনীতির বিভাজন এড়ানোর জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন