শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

করোনা মাহামারির কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ায় উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। ধনী দেশগুলো এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। যখন সংকট উত্তরণের পথ শুরু হয়েছে, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিকে থমকে দিয়েছে। উন্নত দেশ থেকে শুরু করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমাদের দেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় নিত্যপণ্যের মূল্য এতটাই বেড়েছে যে, নি¤œ ও মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। এতে অনেক সাধারণ মানুষ একবেলা খাবার কমিয়ে দিয়েছে। ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করে চলেছেন। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন, তারা এখন তা ভেঙে খাচ্ছেন। কেউ সংসার চালাচ্ছেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা শেয়ার লোকসানে বিক্রি করে। সাধারণ মানুষের এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সঞ্চয় দূরে থাক, সঞ্চয়কৃত অর্থ ভেঙে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে ভালো নয়, তা বুঝতে পরিসংখ্যানের প্রয়োজন হয় না। চারপাশের মানুষের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। কর্মসংস্থানের সংকট, বেকারত্ব, দারিদ্রতার হার হু হু করে বাড়ছে। যারা কর্মজীবী তারা কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করছে। সাধারণত নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। এটি তাদের বাড়তি উপার্জন ও দুঃসময়ের ‘সেফগার্ড’ হিসেবে কাজ করে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে এখন তারা তা ভেঙে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। এ খাতে বিনিয়োগ অর্ধেকে নেমে এসেছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর বলেছে, এক বছরেরর ব্যবধানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা, সেখানে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ১৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। এ চিত্র থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, মানুষ সঞ্চয়পত্র কেনা দূরে থাক, শেষ সম্বল হিসেবে সঞ্চয় ভেঙে চলছেন এবং দারিদ্র্যসীমায় পৌঁছে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের অনেকের অন্যতম বিনিয়োগের জায়গা শেয়ার বাজার। এ বাজারও এখন নি¤œমুখ। এতে সংসার চালাতে না পেরে অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। অন্যদিকে, ব্যাংকেও মানুষের টাকা জমা রাখা অশাঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে কিংবা সীমিত আয়ের মানুষ তাদের পরিস্থিতি কি, তা বোধ করি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। বলা যায়, সরকারের নেয়া ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি’র বিষয়টি নাজুক হয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের আয় যেমন কমেছে, তেমনি যে আয় করে তা দিয়ে জীবনযাপন দুঃসাধ্যে পরিণত হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা কোথাও মিলিত হলে কে কিভাবে সংসার চালাচ্ছে, তাই এখন তাদের আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংসার চালাতে যে হিমশিম খাচ্ছে এবং ব্যয় সংকোচন করেও সামাল দিতে পারছে না, এ চিত্র উঠে আসছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যেখানে এমন দুর্দশার মধ্যে পড়েছে, সেখানে নি¤œ ও নি¤œবিত্ত পরিবারগুলোর কি অবস্থা, তা বলা বাহুল্য। সাধারণত মধ্যবিত্ত থেকে নি¤œ ও নি¤œ মধ্যবিত্তের জীবনমানের সাথে এক ধরনের আনুপাতিক সমন্বয়, বন্ধন বা পারস্পরিক সহযোগিতা থাকে। মধ্যবিত্তের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব বাকিদের ওপর পড়ে। যখন সাধারণ মানুষকে সঞ্চয় বা বিনিয়োগ ভেঙে চলতে হয়, তখন ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি’ বলে কিছু থাকে না। সরকার এ বেষ্টনি সুরক্ষিত রাখতে ইতোমধ্যে এক কোটি মানুষকে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। আপাত দৃষ্টিতে এই মানুষগুলো সাময়িক সুবিধা পেলেও তা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। এর বাইরে থেকে যাওয়া বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনযাপন কষ্টের মধ্যেই থেকে যাবে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাধারণ মানুষের এমন পরিস্থিতিতে বলেছেন, ‘সারাবিশ্বের মানুষ যেমন কষ্টে আছে, আমরাও কষ্টে আছি। আমাদের কষ্টটা সাময়িক। আশার কথা জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেলসহ সব খাদ্যপণ্যের দাম কমছে।’ অর্থমন্ত্রী এ পরিস্থিতিকে সাময়িক বললেও, যেসব মানুষ সঞ্চয়পত্র ভেঙে, লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে এবং যেসব মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে, তারা সহসা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে, এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। একবার যা হারিয়ে যায়, তা ফিরে পেতে নতুন করে শুরু করতে হয় এবং তা অনেক সময়ের ও কষ্টকর বিষয়। আমরা শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি দেখেছি। সেখানে সাধারণ মানুষের এমনই অবস্থা যে, আধাবেলা, একবেলা খেয়ে জীবন ধারণ করছে, সন্তানদের দুধ কিনে দিতে পারছে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, অসংখ্য তরুণী জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় অনৈতিক পথে পা বাড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের এত নিঃস্ব অবস্থা না হলেও আলামত যে খুব ইতিবাচক তা নয়। এ পরিস্থিতি যাতে খারাপের দিকে না যায়, এজন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার চেয়ে আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার আগে সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি’র সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এ বেষ্টনি যেমন অটুট রাখতে হবে, তেমনি এর পরিধি বাড়াতে হবে। এর অবনমন ঠেকাতে অর্থমন্ত্রীসহ অন্যান্য নীতিনির্ধারকদের সুষম পরিকল্পনার মাধ্যমে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Roman Hossain ১৭ আগস্ট, ২০২২, ৭:১৯ এএম says : 0
কবে থেকে সেটা। প্রতিদিন তো নিত্য নতুন দুর্ঘটনা ঘটতেই আছে। কেমনে কি
Total Reply(0)
Roman Hossain ১৭ আগস্ট, ২০২২, ৭:২২ এএম says : 0
প্রতিদিন দুর্ঘটনা কত মানুষ মারা যাচ্ছে তার কোনো হিসাব আছে। যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়তেছে শেষ মানুষ না খেয়েই মরতে হবে। সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে আছে। সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরলে সরকারের কি?
Total Reply(0)
Roman Hossain ১৭ আগস্ট, ২০২২, ৭:২৫ এএম says : 0
সরকারের এমপি মন্ত্রীরা চুরি করে লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিতে ঘাটতি ফেলে জনগণের গলায় ছুরি লাগিয়ে সেই ঘাটতির টাকা আদায় করে বলেকি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে????চরম হাস্যকর বেপার????
Total Reply(0)
Roman Hossain ১৭ আগস্ট, ২০২২, ৭:২৫ এএম says : 0
কে করবে...?? বেড়ায় যদি ক্ষেত খায় তাহলে ক্ষেত টিকবে কিভাবে....?
Total Reply(0)
Roman Hossain ১৭ আগস্ট, ২০২২, ৭:২৬ এএম says : 0
একজন ভালো শাসক কেন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে? জনগণকে সেবা দিলে জনগণ মাথায় তুলে রাখবে। শৈরশাসকগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে।২০ টাকার চাল খাচ্ছি ৭০ টাকায়..!! ৭০ টাকার সয়াবিন খাচ্ছি ১৭০ টাকায়..!! ৪০০ টাকার গরুর মাংস খাচ্ছি ৭০০ টাকায়..!! ৯০ টাকার বয়লার খাচ্ছি ২০০ টাকায়..!! ৫ টাকার গাড়ি ভাড়া দিচ্ছি ৩০ টাকা..!! ৪ টাকা ইউনিটের বিদ্যুৎ চালাচ্ছি ১০ টাকায়..!! ১৫০০ টাকার রুম ভাড়া দিচ্ছি ৩০০০ টাকা..!! . তারপর ও কিছুদিন পর পর পিয়াজ নিয়ে তোমাদের নাটক হয়ে যায় ৩০ টাকার পিয়াজ ৩০০ টাকা, ২০ টাকার আলু হয়ে যায় কখনো কখনো ৫০/৬০ টাকা..!! ৩ টাকা কেজি ইউরিয়া সার এখন ৪০/৫০ টাকা..!! ৮০ টাকার পাংগাস ১৫০ টাকা..!! ১০০ টাকার মাছ ৩০০ টাকা..!! ২০০ টাকার মাছ ৫০০ টাকা কেজি..!! . দেশ এগিয়ে যায়নি এগিয়ে গেছে জনগণ... কারণ আগে জনগণের চিন্তা চিলো ৮ ঘন্টা কাজ করলে আমার সংসার ভালোবাবে চলবে, আর এখন জনগণের চিন্তা আমাকে ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হবে না হয় আমার সংসার ছেলে মেয়ে না খেয়ে মরবে... যতোই দিন বাড়ছে, ততোই প্রতারনার স্বিকার হচ্ছি..!! . কারো কাছে বলে লাভ নেই... বলবো তো তার কাছেই, ওগো দয়াময় আমার সৃষ্টিকর্তা... এই জালেমদের বিছার কিছুটা তুমি দুনিয়াতেই দিয়ে দিও, যেন মজলুম মুমিনদের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পায়..!!
Total Reply(0)
আলিফ ১৭ আগস্ট, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
সরকারের উচিত সব ক্ষেত্রে দেশ থেকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা। আর সাধারণ মানুষের চিন্তা করা। রোড থেকে হতার মুক্ত করে দেন। তাহলে দেখবেন 90 পারসেন দুর্ঘটনা কমে গেছে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন