নিত্য পণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি সহ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দক্ষিণাঞ্চলের নি¤œবিত্ত থেকে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সংসার আর চলছে না। আয় না বাড়লেও একের পর এক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এসব পরিবারে এখন নিরব হাহাকার চলছে। প্রায় সকলেই নানামুখি ব্যায় সংকোচনের কষ্টকর প্রচেষ্টায় বর্তমান সংকটে টিকে থাকার সংগ্রাম করছেন। গত কয়েক মাসের মূল্যস্ফিতির সাথে সংগতি রেখে আয়ের পথ না বাড়লেও কোন কোন ক্ষেত্রে তা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তরনে সাধারন মানুষকে কম মূল্যে নিত্য পণ্য সরবারহে নিকট অতীতের সরকারী পদক্ষেপগুলো এখন আর কার্যকর নেই।
করোনা মহামারীর দূর্যোগ না কাটতেই নিত্যপণ্য সহ সমাজের প্রায় সব ধরনের সেবার ব্যায় বৃদ্ধিতে দক্ষিণাঞ্চলে সাধারন মানুষ এখন যথেষ্ঠ কষ্টে আছেন। গত ৬ মাসে প্রতি কেজি মধ্যম মানের চালের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকারও বেশী। এরমধ্যে চলতি মাসেই বেড়েছে আরো ৩Ñ৪ টাকা। ‘বিআর-২৮’ নামের সরুÑমোটা চালের কেজিও এখন ৫০ টাকার ওপরে। মধ্যম মানের মিনিকেট চাল বিক্রী হচ্ছে ৬৮ টাকায়। আটার কেজি ৪০ টাকায় উঠেছে। সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম এখনো আকাশ ছোয়া। বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্রই সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ২শ টাকা লিটার। চিনির কেজি ৮৫ টাকা।
গত মাসের শেষ ১৫ দিনে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমলেও গত কয়েকদিনের বর্ষনের সাথে ফুসে ওঠা সাগরের প্লাবনে সরবারহ হ্রাসের সাথে দামও প্রতিদিন বাড়ছে। এখন ৪০ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি মিলছে না। বেশীরভাগ সবজিই ৫০ থেকে ৬০ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। এমনকি মৌসুমের শুরুতে ১৫ টাকা কেজির গোল আলু গত মাসে ৩২ টাকায় উঠলেও এখনো তা ২৮ টাকার নিচে নয়। কৃষকের ঘরের আলু ব্যাবসায়ীদের হীমঘরে ঢোকার পরেই গরীব ভোক্তাদের এ সবজীর দাম নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। তবে বিগত রবি মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চলে শীতকালীন সবজি আর বোরো ধান সহ প্রায় সব কৃষি পণ্যের উৎপাদনই ছিল স্বাভাবিক সহ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী। আমদানীকৃত পেঁয়াজের কেজি এখন ৪০ টাকার মধ্যে হলেও দেশীয় পেঁয়াজের দাম ৪৫ টাকা। রসুন ও আদার দাম কিছুটা সহনীয় হলেও ভোজ্য তেল, চিনি, ও চালের অস্থিতিশীল বাজার সাধারন মানুষকে দূর্ভোগের চরম সীমায় নিয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।
নিত্যপণ্যের লাগাতর মূল্য বৃদ্ধির এ পরিস্থিতি সামাল দিতে বাজারে পণ্য সরবারহ স্বাভাবিক রাখার অতীতের কার্যক্রমকে অনুসরন করছে না প্রশাসন। এমনকি বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা-টিসিবি’র মাধ্যমে পণ্য বিক্রী কার্যক্রমও গত তিন মাসাধিককাল ধরে বন্ধ। ইতোপূর্বে খোলা বাজার অপক্ষোকৃত কম মূল্যে হাতে গোনা কয়েকটি নিত্যপণ্য বিক্রী করায় বাজার কিছুটা হলেও স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বিগত রমজানের পরে তা বন্ধ করে দেয়ায় সাধারন মানুষ যথেষ্ঠ বিপাকে পড়েছেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রæত দেশের ১ কোটি পরিবারকে ভতর্’কি মূল্যে খাদ্যপণ্য সরবারহের আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৬লাখ পরিবারকে মাসে মাত্র ১ কেজি চিনি, ২ কেজি মুসুর ডাল ও দুই লিটার করে সয়াবিন তেল বিক্রী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ৯০ হাজার পরিবার সহ বরিশাল জেলার ১ লাখ ৩০ হাজার পরিবার সিমিত খাদ্যপণ্য পাচ্ছেন। অণ্য জেলাগুলোতেও সিমিত পরিসরে এ কার্যক্রম চলছে।
তবে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ভতর্’কি মূল্যে দক্ষিণাঞ্চলের মাত্র ৬ লাখ পরিবার টিসিবি পণ্য পেলেও খোলা বাজারে বিক্রী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাজারে তেমন কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না বলেই মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকগন।
এসব বিষয়ে বরিশালের জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সহ টিসিবি’র স্থানীয় দায়িত্বশীল মহলে আলাপ করা হলে ‘বিষয়টি সরকারী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভশীল’ বলেই জানান হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন