মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘যেমন খুশি তেমন পোশাক পরা স্বাধীনতা হতে পারে না’

নরসিংদীতে হেনস্তা তরুণী হাইকোর্টের মন্তব্য নিয়ে কটূক্তি করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

নরসিংদীর রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেফতার মার্জিয়া আক্তার শিলার জামিন শুনানির সময় পোশাক নিয়ে হাইকোর্টের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

গতকাল বুধবার বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আনেন অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন। এ প্রেক্ষিতে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন এবং বিচারপতি একে এম জহিরুল হকের ডিভিশন বেঞ্চ বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

এই আইনজীবী আদালতকে বলেন, শামীম আশরাফ নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশকে হাইকোর্টের কাঠমোল্লাদের হাতে দিয়ে আমি দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না’। এটি লিখে ওই ব্যক্তি হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করেছেন। আদালতকে অবজ্ঞা করেছেন।

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আবুল হাশেমও আদালত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা ফেসবুকের একটি স্ক্রিনশট উপস্থাপন করেন। তিনি এসব মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন।

আদালত তখন বলেন, মঙ্গলবার জামিন শুনানিকালে আমরা পোশাক নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। আদেশে কিছু লিখিনি। শুধু ভিডিও দেখে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছি একেবারে গ্রাম্য এলাকায় এ ধরণের পোশাক পরে যাওয়া সমীচীন কি-না?
পরে আদালত আইনজীবীদের বলেন, ফেসবুকে কারা আদালত সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছে, সুনির্দিষ্ট করে তাদের তথ্য দিন। আমরা বিষয়টি দেখবো।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার মার্জিয়া আক্তার নামের এক নারীর জামিন শুনানি কালে আদালত যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, মন্তব্য করেছেন সেটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় আদালত সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অনেকে আদালত অবমাননা করেছেন। তাদের বিষয়ে তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে এনেছিলাম। আদালত সুনির্দিষ্ট করে নিয়ে যেতে বলেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ মে ভোর সোয়া ৫টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে হেনস্তার শিকার হন এক তরুণ ও দুই তরুণী নারী। সকাল পৌঁনে ৬টা পর্যন্ত স্টেশনটির ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তারা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সাড়ে ৫টার দিকে স্টেশনে অবস্থানরত মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসা করেন,‘এটা কী পোশাক পরেছ তুমি?’ তরুণী পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনার তাতে কী সমস্যা হচ্ছে?’ এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। সেই বিতর্কে যোগ দেন স্টেশনে অবস্থানরত আরও কয়েকজন ব্যক্তি। কেউ একজন দৃশ্যটি ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড দেন। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছে একদল ব্যক্তি। এর মধ্যে এক নারী উত্তেজিত অবস্থায় তার সঙ্গে কথা বলছেন। বয়ষ্ক এক ব্যক্তিও তার পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে ওই নারী দৌঁড়ে তাকে ধরে ফেলেন। এ সময় অশ্লীল গালাগাল করতে করতে তার পোশাক ধরে টান দেন ওই নারী। কোনো রকমে নিজেকে সামলে দৌঁড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে চলে যান ওই তরুণী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা দুই তরুণকেও মারধর করতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে।

পরে ভুক্তভোগী তরুণী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ রেলস্টেশনে এসে তাদের ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেয়। ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তরুণী হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবি জানান তারা। এ প্রেক্ষিতে পুলিশ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ও ৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় একটি মামলা করে। মামলায় মো. ইসমাইল ও শিলা ওরফে মার্জিয়া আক্তারের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও একজন নারী ও ৮-১০ জন পুরুষকে আসামি করা হয়।

এ মামলায় নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করা হয় মার্জিয়া আক্তার নামের এক নারীকে। মঙ্গলবার ওই নারীর জামিন শুনানি হয় হাইকোর্টে। পরে তাকে ৬ মাসের জামিন দেন আদালত।

শুনানিকালে হাইকোর্ট কিছু প্রশ্ন তোলেন ও মন্তব্য করেন। হাইকোর্টের বরাত দিয়ে অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন জানান, আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, গুলশান বনানীর মতো এলাকায়ও কোনো মেয়ে এ ধরণের পোশাক পরে রাস্তায বের হয় না। সেখানে গ্রামের মতো একটি জায়গায় পাবলিক প্লেসে এ রকম পোশাক পরা স্বাধীনতা হতে পারে না। যেমন খুশি তেমন পোশাকের নামে আমাদের সোসাইটির কালচারকে ধ্বংস করতে পারে না। ওই মেয়ে যে ধরণের পোশাক পরিহিত ছিল সেটা আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে বেমানান। যে কারণেই প্রতিবাদের শিকার হয়েছিল। আদালতের এসব মন্তব্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটিও ভাইরাল হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Mahbubur Rahman ১৮ আগস্ট, ২০২২, ৬:৩৯ এএম says : 0
যেমন খুশি তেমন পোশাক পরা যদি স্বাধীনতা হতো তাহলে যেমন খুশি তেমন পোশাক না পরে নগ্ন হয়ে রাস্তায় বের হওয়ার নামও স্বাধীনতা হতো।।
Total Reply(0)
Harunur Rashid ১৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:২৮ এএম says : 0
Freedom has some limit, must have some limit. In the name of freedom you can't ignore decency. This is what sets us a part from animal.
Total Reply(0)
Faruque GM ১৮ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
পরিপূর্ণ সমর্থন । এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন প্রবর্তনের অনুরোধ রইলো
Total Reply(0)
মোঃ হামিদুর রহমান ১৮ আগস্ট, ২০২২, ৬:৩৯ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা বিচারপতি কে বামপন্থী দের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমীন
Total Reply(0)
Omar Faruk ১৮ আগস্ট, ২০২২, ৬:৩৯ এএম says : 0
ধন্যবাদ অ*/শ্লীল পোশাক কখনো বাংলাদেশের কালচার হতে পারে না। যেখানে এমন পোশাক পরে বের হবে সেখানেই প্রতিবাদ হবে ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
মামুন ১৮ আগস্ট, ২০২২, ৯:২৪ এএম says : 0
বিচারকের সুস্থতা ও নেক হায়াত কামনা করছি।কিছু নারীলোভী পুরুষ নারীদের অশ্লীল পোশাককে তাদের স্বাধীনতা দাবি করে,মনে রাখবেন শুধুমাএ শিয়ালরাই মুরগির স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ আব্দুস সালাম ১৮ আগস্ট, ২০২২, ১০:১৯ এএম says : 0
অনেকদিন ভাল একটি সংবাদ চোখে পড়ল। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আইনজীবিকে। তিনি কিছু না পারলেও তার হ্রদয়ে শালিনতার যে বিষয়টি উঠে এসেছে তার জন্য তিনি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ারই যোগ্য।
Total Reply(0)
Mosarof Hosan ১৮ আগস্ট, ২০২২, ৬:৩৯ এএম says : 0
যারা আদালত অবমাননা করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।
Total Reply(0)
Md Umayer Hossain ১৮ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
খুবেই চমৎকার কথা বলেছেন বিচারক সাহেব। এধরনের পোশাক আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়।
Total Reply(0)
jack ali ১৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:৪৫ পিএম says : 0
এই লোকটা কোরআনের আয়াত কে অস্বীকার করেছে কারণ সরকারেকে সাহস দিয়েছে যে কোরআনের আয়াত কে অস্বীকার করে সে আর মুসলিম থাকেনা সে চিরজীবন জাহান্নামে যাবে | [SurahAl-Noor 24: Ayat:31] “এবং মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে (হারাম জিনিসের দিকে তাকানো থেকে) অবনত রাখে এবং তাদের গোপনাঙ্গকে (অবৈধ যৌনকর্ম থেকে) রক্ষা করে এবং তাদের সাজ-সজ্জা প্রদর্শন না করে শুধুমাত্র যা প্রকাশ্য (দেখার জন্য উভয় চোখের মতো)। পথ, বা হাতের বাইরের তালু বা এক চোখ বা ঘোমটা, গ্লাভস, হেডকভার, এপ্রোনের মতো পোশাক এবং সমস্ত জুয়ুবিহিন্না (অর্থাৎ তাদের শরীর, মুখমণ্ডল, ঘাড় এবং বক্ষ) জুড়ে তাদের পর্দা টানা এবং তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করা ছাড়া তাদের স্বামী, বা তাদের পিতা, বা তাদের স্বামীর পিতা, বা তাদের পুত্র, বা তাদের স্বামীর পুত্র, বা তাদের ভাই বা তাদের ভাইয়ের ছেলে, বা তাদের বোনের ছেলে, বা তাদের (মুসলিম) মহিলারা (অর্থাৎ ইসলামে তাদের বোন), বা (মহিলা) ক্রীতদাস যাদের তাদের ডান হাত আছে, বা বৃদ্ধ পুরুষ দাস যাদের শক্তি নেই, বা ছোট বাচ্চারা যাদের মেয়েলি লিঙ্গের কোন বোধ নেই। এবং তারা যেন তাদের পায়ে নুপুর না পরে যাতে তারা তাদের সাজসজ্জার মধ্যে যা লুকিয়ে রাখে তা প্রকাশ করে। আর তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর, হে ঈমানদারগণ, যেন তোমরা সফলকাম হতে পারো।" বেপর্দা নারী অভিশপ্ত [মুসনাদে আহমদ হাদিস: 7083] যে মহিলারা পোশাক পরেন তারা নগ্ন বলে মনে হয়। তারা মন্দ কাজের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং এর দিকে আমন্ত্রণ জানায়। তাদের মাথা হবে ব্যাক্ট্রিয়ান উটের কুঁজের মতো। নবীর বাণী, “তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং এর ঘ্রাণও পাবে না”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কোন ফিতনা আমি আমার পিছনে রেখে যাইনি।” আল-বুখারী, ৫০৯৬ দ্বারা বর্ণিত; মুসলিম, 2740।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন