শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশকে জ্বালানি তেল দিতে চায় রাশিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ডিজেল আমদানি করতে ১২৫ ডলারের মতো খরচ পড়ছে। অপরিশোধিত ক্রড অয়েল আনতেও ৯০ ডলার খরচ পড়ছে। অর্থাৎ অপরিশোধিত ক্রডের চেয়েও অনেক কম দামে ডিজেল দিতে চায় প্রস্তাবকারী। দাম কম হলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে রাশান ডিজেল কেনাটা বেশ ঝূঁকিপুর্ণ।

প্রতি টন রাশান ডিজেল ৪২৫ ইউএস ডলারে সরবরাহ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতি ব্যারেলের (১৫৯ লিটার) মূল্য দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৪৩ ডলার মাত্র। ডলার ১১০ টাকা হিসেবে ধরলে প্রতি লিটারের আমদানি খরচ পড়বে ৪০ টাকার নীচে। দেশীয় একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এমন প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে বলে জানা গেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি বলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন নিশ্চিত করেছেন। এ দিকে জ্বালানি তেলের দাম আট মাসে সর্বনি¤œ। চীনের অর্থনৈতিক ও ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বাজারে গত মঙ্গলবার অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে। এদিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটরি (ডবিøউটিআই) জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ৩ দশমিক ২৮ ডলার বা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে ৮৬ দশমিক ১৩ মার্কিন ডলারে নেমেছে, যা জানুয়ারির পর এই তেলের সর্বনি¤œ দাম। ইউরোপভিত্তিক ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের দামও কমেছে। একই দিনে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ বা ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ কমে ৯২ দশমিক ১২ ডলারে নেমেছে। এটি চলতি বছরের ফেব্রæয়ারির পর থেকে ব্রেন্ট ক্রুডের সর্বনি¤œ দাম। গত বুধবার থেকে ডবিøউটিআই অপরিশোধিত তেলের দাম কিঞ্চিৎ বেড়েছে। এদিন প্রতি ব্যারেল ডবিøউটিআই তেল বিক্রি হয়েছে ৮৬ দশমিক ৫০ ডলারে। তবে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম গতকাল খানিক কমে ৯২ দশমিক শূন্য ২ ডলারে নেমেছে। বাংলাদেশে এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বলে জানা গেছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর আমরা কাজ শুরু করেছি। কিছু প্রস্তাব পাওয়া গেছে সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে। দাম কমোনোর বিষয় এখনই বলার মতো কোন আপডেট নেই। সচিব বলেন, রাশিয়া ডিজেল দিতে আগ্রহী আছে। তবে এখনো দেশের নাম ঠিক করা হয়নি। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছি। ভালো করে ভেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর আমেরিকাসহ ইউরোপের নানা রকম নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। তারপরও ভারতসহ অনেক দেশ সাশ্রয়ী দরে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। ২০২১ সালে এপ্রিল-মে মাসে রাশিয়া থেকে মাত্র ৪৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের তেল কিনেছিল ভারত। আর ২০২২-এ শুধু মে মাসেই ১৯০ কোটি ডলারের তেল কিনেছে। আগের বছরে চাহিদার মোট দুই শতাংশ রাশিয়া থেকে আসত। গত এপ্রিল-মে মাসে চাহিদার ১০ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত। সময় যতো যাচ্ছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণও বাড়ছে। রাশিয়া থেকে সরাসরি ডিজেল আমদানি করতে গেলে পশ্চিমা বলয়ের বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। সে কারণে অনেকদিন ধরেই রাশান তেল আমদানির বিষয়ে আলোচিত হলেও সবই ছিল অনানুষ্ঠানিক। প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পর নড়ে চড়ে বসেছে সংশ্লিষ্টরা।

গত ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন,রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনার করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত পারলে আমরা কেন পারব না? রুবলের সঙ্গে টাকা বিনিময়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের করা যায় কি না, সেই বিষয়ে উপায় খুঁজে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে গত বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও জ্বালানি পরিস্থিতি› শীর্ষক সচিব পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে ৯ জন সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার মহাপরিচালক ও চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে সুবিধা অসুবিধা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাশান মুদ্রা রুবল ও টাকার বিনিময়ের যে বিষয়টি সামনে এসেছে তারও সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। রুবলে লেনদেন করতে হলে রাশিয়াতে আমাদের রফতানির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ণ। বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি হয় তাহলে সেই ঘাটতি মোকাবিলা হবে কি করে। তখনতো ইউএস ডলার দিয়ে রুবল কিনে পরিশোধ করতে হবে। এতে দুই ধাপে কমিশন দিতে হবে। সৌভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পূর্বে বাংলাদেশের বাণিজ্য ছিল বাটা সিস্টেম। কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ওই পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। এ দেশের ব্যাংকে ছিল রাশিয়ান অ্যাকাউন্ট। বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করে তার বিনিময়ে টাকা সেই হিসাব নম্বরে জমা করতো। ওই টাকা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনে দেশে নিয়ে যেতো তারা। দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার টেবিলে বাটা সিস্টেমও স্থান পাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের বড় ধরনের ঝাঁকুনির শিকার হয়েছে। এরই মধ্যে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখা হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে, রেকর্ড পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে সব ধরনের জ্বালানির দাম। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জ্বালানি তেল ডিজেল লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। বিপিসি দাবি করেছে তারপরও লিটারে ৬ টাকা করে লোকসান দিতে হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ডিজেলের চাহিদা ছিল ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৫ মে. টন। যা মোট জ্বালানি চাহিদার ৭২.৯৮ শতাংশ। বিপিসির ওই লোকসানের হিসেব আমদানিকৃত ডিজেলের ব্যারেল প্রতি মূল্য ১৩০ ডলার ধরে। সেখানে রাশান ডিজেল পাওয়া যাচ্ছে ৬০ ডলারের নিচে। অর্থাৎ আমদানি মূল্য অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে।

বিপিসির সূত্রে জানা গেছে, তাদের কাছে একাধিক প্রস্তাব এসেছে। এরমধ্যে একটি প্রস্তাব এসেছে যারা চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস পয়েন্টে ৪২৫ ডলারে ডিজেল পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। সবগুলো নিয়ে কাজ করছে সরকার।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিপিসির পরিচালক (বিপণন) অনুপম বড়ুয়া ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, এমন প্রস্তাবের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। হয়ে থাকলেও হয়তো উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হতে পারে। বাণিজ্য ও অপারেশন বিভাগে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন, তারা জানতে পারে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন