বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মিত্রদের নিয়ে ইউক্রেন সঙ্ঘাতে সরাসরি উৎসাহ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

জাপোরেজিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনের অনুমতি দেবে রাশিয়া ‘বিষাক্ত’ ডলার এবং ইউরো থেকে সরে যাচ্ছে রাশিয়া :: আফ্রিকায় মস্কোর কার্যকলাপকে অসম্মানের চেষ্টা করছে মার্কিন মিডিয়া :: সোলে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ গত শুক্রবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ক্রিমিয়ায় হামলা সম্পর্কে ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের বিবৃতি ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্রদের খোলাখুলিভাবে সঙ্ঘাত বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে’ বলে প্রকাশ করছে। রিয়াবকভ বলেছেন, রুশ কর্মকর্তারা বাইডেন প্রশাসনের উচ্চ-পর্যায়ের সদস্যদের সাথে ফোনকলে এ ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেন এবং যোগ করেছেন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধে ‘যুক্তরাষ্ট্রের গভীর ও প্রকাশ্য অংশগ্রহণ’ কার্যকরভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্ঘাতের ভেতরে একটি পক্ষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ফেলেছে’।

এদিকে জাতিসংঘের তদন্ত দলকে ইউক্রেনের জাপোরেজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনে অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এর আগে পুতিন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর মধ্যে ফোনালাপ হয়। তারপরই ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জাতিসংঘের তদন্ত দলকে পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। পুতিনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। সংস্থাটির ডিরেক্টর জেনারেলের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করবেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও পুতিনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। তারপর মার্চ মাসেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দখল নেয় রুশ সেনারা। সেখানে একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে রুশ সেনারা। বর্তমানে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকায় রুশ সেনা ও ইউক্রেনের সেনাদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে। এর ফলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সেখানে কর্মরত ইউক্রেনের প্রকৌশলীরা রুশ সেনাদের নির্দেশনায় কাজ করছে।

গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিভিভে একটি সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেজ ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। তারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন।

পরে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ইউক্রেনের ওই পারমাণবিক স্থাপনা ঘিরে বর্তমান যে পরিস্থিতি সেটা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। স্থাপনাটি বেসামরিকীকরণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এভাবে বলতে হবে, জাপোরেজিয়ার কোনো ক্ষতিই হবে আত্মঘাতী।’ একই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এরদোগান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা আরেকটি চেরনোবিল চাই না। আমরা এর একটা সমাধানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আমাদের ইউক্রেনীয় বন্ধুদের পাশে আছি।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জপোরেজিয়া এলাকার আশেপাশে ইউক্রেন ও রুশ সেনাদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে। যদিও কোনো পক্ষ হামলার দায় স্বীকার না করে পাল্টাপাল্টি একে অন্যকে দোষারোপ করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশের এলাকায় সংঘর্ষের জন্য সরাসরি রাশিয়াকে দায়ী করেছেন। তার মতে, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ওই এলাকায় হামলা করছে। যদিও এ দাবি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। গত বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, তারা জাপোরেজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেনি। সেখানে শুধু পাহারা দেয়ার জন্য সেনা রয়েছে। কিয়েভের বিরুদ্ধে সেখানে হামলার উসকানির অভিযোগ করে রাশিয়া।

এর আগে গত বুধবার সকালে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, জাপোরেজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রুশ সেনাদের দখলে থাকায় সেটি নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে এবং পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তিনি জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে ইউক্রেনের জাপোরেজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জরুরি পরিদর্শন করার অনুমতি দেওয়ারও আহ্বান জানান।

‘বিষাক্ত’ ডলার এবং ইউরো থেকে দূরে সরে যাচ্ছে রাশিয়া : রাশিয়া অংশীদারদের সাথে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক এবং বিনিয়োগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ডলার এবং ইউরোকে সরিয়ে দেবে, কারণ পশ্চিমের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে এসব মুদ্রা ‘বিষাক্ত’ হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার প্যাঙ্কিন তাস-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন।

প্যানকিন বলেছেন, ‘যৌথ পশ্চিমের ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক চাপের বিরুদ্ধে রাশিয়া এবং তার অংশীদারদের মধ্যে স্থিতিশীল বাণিজ্য, অর্থনৈতিক এবং বিনিয়োগ সম্পর্কের নিশ্চয়তা দেওয়ার একমাত্র উপায় হল ‘বিষাক্ত’ হয়ে উঠেছে এমন মুদ্রার ব্যবহার এড়ানো’।

কূটনীতিক উল্লেখ করেছেন যে, ওয়াশিংটনের নির্মিত বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা ‘একটি বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থার অবস্থার জন্য অনুপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং এটি মূলত একটি গোষ্ঠীর দেশের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে’।

প্যানকিন আরো বলেন, ‘এটি বেশ সুস্পষ্ট যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমারা তার বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত অবস্থানের অপব্যবহার চালিয়ে যেতে চায়’। ‘এটা উৎসাহজনক যে, অনেক জাতি, রাশিয়ার বিরুদ্ধে অসাধারণ এবং অবৈধ নিষেধাজ্ঞা দেখে তাদের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য বৈদেশিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ডি-ডলারাইজ করার প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবছে। যেমন দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সমস্যাটি বেশ সমাধানযোগ্য’- তিনি যোগ করেছেন।

আফ্রিকায় মস্কোর কার্যকলাপকে অসম্মানের চেষ্টা করছে মার্কিন মিডিয়া : রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন মিডিয়া আউটলেটগুলো মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে রাশিয়ার কার্যক্রমকে অসম্মান করার জন্য আরেকটি প্রচারণা চালাতে চাইছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা মার্কিন মিডিয়ার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো নোট করেছি, যা আফ্রিকা মহাদেশে, বিশেষ করে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে রাশিয়ার কার্যকলাপকে অসম্মান করার জন্য আরেকটি প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে’।
এ বিষয়ে জাখারোভা ব্লুমবার্গের একটি নিবন্ধের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যার শিরোনাম ছিল ‘রাশিয়ান ভাড়াটেরা সোনার সন্ধান করুন, মধ্য আফ্রিকায় বিশৃঙ্খলা বপন করুন’। কূটনীতিকের মতে, নিবন্ধটি ‘কারিগর খনি শ্রমিক, বিদ্রোহী এবং মানবতাবাদীদের’ উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছে যে, ওয়াগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির যোদ্ধারা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে সোনার খনির এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিতে ‘জাতীয় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বহু মানুষকে হত্যা করেছে, সম্প্রদায়কে লুট করেছে এবং হাজার হাজার লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে, কারণ তারা তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। আমাদের আবারও উল্লেখ করতে হবে যে, এ ধরনের নিবন্ধগুলো সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন এবং বাস্তবতা তৈরির মতো অনৈতিক পদ্ধতি জড়িত। লক্ষ্য স্পষ্টতই রাশিয়ার ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করা, বাঙ্গুইয়ের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষতি করা’- জাখারোভা উল্লেখ করেছেন।

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রকে রাশিয়ার সহায়তা নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা জোরদার করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টার অংশ।
সোলেদারে প্রবেশ ও বেশ ক’টি রাস্তার নিয়ন্ত্রণে এলপিআর : এলপিআর পিপলস মিলিশিয়া অফিসার আন্দ্রে মারোচকো গতকাল শুক্রবার চ্যানেল ওয়ান টিভি সম্প্রচার বলেছেন, মিত্রবাহিনী দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর) এর সোলেদার ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন ছেড়ে শহরে প্রবেশ করেছে, বেশ কয়েকটি রাস্তা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সোলেদারের বন্দোবস্তের বিষয়ে, সেখানেও বেশ কিছু সাফল্য রয়েছে। আমাদের চাকুরীজীবীরা শিল্প অঞ্চল থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং ইতোমধ্যেই শহরের সীমানায় কাজ করছেন, অর্থাৎ, ইতোমধ্যেই এ বসতির রাস্তাগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’। মারোচকো উল্লেখ করেছেন যে, রাশিয়ান মহাকাশ বাহিনীর সমর্থনে ৫০ জনেরও বেশি জাতীয়তাবাদীকে নির্মূল করা হয়েছে।

ইউক্রেনে আটক করা বিদেশি অস্ত্রের প্রদর্শনী করল রাশিয়া : ইউক্রেন থেকে আটক কিংবা উদ্ধার করা বিদেশি অস্ত্রের প্রদর্শন করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বিদেশি এসব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে সাজোয়াযান এবং সেনা বহনকারী গাড়ি রয়েছে। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর কাছে পেট্রিয়ট এক্সিবিশন সেন্টারে যে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রদর্শনী হচ্ছে সেখানে আটক করা এসব বিদেশী সামরিক সরঞ্জামাদি প্রদর্শন করা হয়।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনের ভেতরে সামরিক অভিযান শুরু করে। তবে তার আগে থেকেই আমেরিকা এবং তার মিত্ররা ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। রাশিয়া শুরু থেকেই ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যেমন লড়ছে, তেমনি ইউক্রেনকে সরবরাহ করা বিদেশি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদি ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। রাশিয়ার অভিযানের বিপরীতে আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বাড়িয়েছে। সূত্র : তাস, আল-জাজিরা, এপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন