সিলেটের প্রবাসী অধ্যূষিত ওসমানীনগরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনাটি নিছক একটি দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে সিলেট জেলা পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান সিলেটের বিদায়ী পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
এসময় তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ তদন্ত প্রক্রিয়ায় পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে- এটি একটি দুর্ঘটনা। তদন্তে প্রবাসী পরিবারের স্বজন ও আশেপাশের সংশ্লিষ্ট সকলকে জিজ্ঞাসাবাদে পূর্বশত্রুতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দু-এক দিনের মধ্যে ভিসেরা রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর মূল কারণ জানা যাবে। পুলিশ সুপার আরো জানান, জেনোরেটরের ধোঁয়া থেকে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে মৃত্যু ঘটনাটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এই মৃত্যু। তবে এর রসহস্য নিয়ে চারদিকে চলে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। শোকে কাতর হয়ে পড়েন সচেতন মহল। ১১ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ওই প্রবাসীর কন্যা সামিরা ইসলামও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে শোকের মাত্রা আরও ঘনীভূত হয়।
এর বিষয়টির রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে মাঠে নামে আইন শৃঙখলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট:
তদন্ত সূত্র জানায়, খাদ্যে বিষক্রিয়া বা কোন পক্ষ তাদের হত্যা করতে পারে- এমন কোন আলামত আমরা পাইনি। তবে ঘটনার দিন ওই বাসার জেনারেটর টানা কয়েক ঘন্টা চলেছে। তারা যে ঘরে ছিলেন ওই ঘরে কোন ভেন্টিলেটরও ছিলনা। আর তাই আমাদের ধারণা, ওই বদ্ধঘরে ধোঁয়ায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তারপর মৃত্যু। তবে দু’একদিনের মধ্যে যাবতীয় রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে বলে সূত্রটি জানায়।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই ্ওসমানী নগরের ধিরাই গ্রামের রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন। ঢাকায় এক সপ্তাহ থেকে বড় ছেলে সাদিকুলের চিকিৎসা শেষে গত ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোডে ৪ তলা বাসার দুতলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামের ৫ সদস্যের পরিবার। ২৫ জুলাই রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলেদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে বাসার অন্যান্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ‘৯৯৯’ নাম্বারে ফোন দেন রফিকুলের শ্যালক দিলওয়ার। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশের একটি দল গিয়ে দরজা ভেঙ্গে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ব্রিটিশ নাগরিক রফিকুল ইসলাম ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্ত্রী হোসনে আরা, বড় ছেলে সাদিককুল ইসলাম ও একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলামকে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। রফিকুলের স্ত্রী হোসনে আরা ও ছেলে সাদিককুল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও দীর্ঘ ১১দিন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে থাকা সামিরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন গত ৫ আগস্ট ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন