বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

তারেক রহমান আয়নাঘরের ভিকটিম: মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫০ পিএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান টর্চার সেল আয়নাঘরের ভিকটিম বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব নিজে বলেছেন, আমি নিজে একজন ভিকটিম। তাকে যখন ১/১১ সময়ে গ্রেফতার করা হয়। সেই সময়ে তাকে রিমান্ডের নাম করে নিয়ে আসা হয়েছিলো। এমন টর্চার করা হয়েছিলো যে, তার কোমড় ভেঙে গিয়েছিলো। আমরা যারা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম, আমরা কল্পনাও করিনি যে, এই বাংলাদেশ আমাদের দেখবে হবে। আজকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে এজন্য কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম?

মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের উদ্যোগে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুম-খুন-ক্রসফায়ারে হতাহত নেতা-কর্মীদের পরিবারকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকে রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভোলা, ফেনী, নেত্রকোনা, চট্টগ্রামের যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ১৪ জন নেতা-কর্মীর পরিবারকে এককালীন ও শিক্ষাবৃত্তির আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। গত ৯ বছরে সারাদেশে গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার ৩২৭টি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী হেল্প লাইন।

টর্চার সেল প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তারা তুলে নিয়ে যায়, তারপরে দেখেছেন, নেত্র নিউজে যে খবর বেরিয়েছে- তাদের সেই টর্চার সেল আছে। তার নাম দিয়েছে আয়নাঘর। সেই আয়নাঘরে নিয়ে যায়। যাদেরকে মেরে ফেলতে হয় তাদেরকে মেরে ফেলে, যাদেরকে রেখে দিতে হয় তাদের রাখে, টর্চার করে, বছরের পর বছর তাদেরকে রাখে। যারা কয়েকজন সৌভাগ্যক্রমে বেরিয়ে যেতে পেরেছিলো, তারা বিদেশে চলে গেছেন, গিয়ে সেখান থেকে বলছেন যে, এই ধরনের একটা সেলে আমাদেরকে আটকিয়ে রাখা হয়েছিলো।

দমনপীড়নে বিএনপিকে দমানো যাবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের আবার নতুন করে গ্রাম পর্যায়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। গোটা দেশের মানুষ দেখছে যে, মানুষ কিভাবে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলাতে বড় বড় মিছিল হয়েছে। এর মধ্যেও তারা কেউ থেমে নেই। সোমবার লক্ষীপুরে শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে আক্রমণ করেছে, বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের নেতাদেরকে ঘর থেকে ধরে এনে মারধর করেছে, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে।

তিনি বলেন, সমস্যাটা ওই জায়গায় শেখ হাসিনার, আওয়ামী লীগের। এতো নির্যাতন, এতো নিপীড়ন, এতো হত্যা, এতো গুম-খুনের পরেও বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিএনপি সেই ফিনিক্স পাখির মতো আবার ওই ধ্বংসাবশেষ থেকে জেগে উঠছে- এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় তাদের রাগের কারণ, ভয়ের কারণ।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তারা (সরকার) বাইরে চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। বিরোধিতা করে। কেনো? যদি তিনি বেরিয়ে আসেন তাহলে তারা সামাল দিতে পারবে না। তারেক রহমান সাহেব যদি দেশে আসেন তাহলে এখানে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে-এই ভয়েই তারা সেটা করতে চায় না।

গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার পরিবারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যদি সরকার পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, সত্যিকারের জনগণের পার্লামেন্ট আনতে পারি তাহলে আমাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের পূর্ণবাসনের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন, ভিকটিম হয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই রাষ্ট্রের সিষ্টেমের মধ্য দিয়ে সকল ব্যবস্থা করা হবে। এখন আমরা আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। দলের পক্ষ থেকে আমরা নুরে আলম ও আব্দুর রহিমের পরিবারের জন্য ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তারা যেন বাকি জীবনটা চালাতে পারে এজন্য সব রকম ব্যবস্থা আমরা করব।

সরকার উন্নয়নের বড়াই করছে মন্তব্য করে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, এরা বড়াই করছে-সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বানিয়ে দিয়েছে। মানুষের পার কেপিটাল ইনকাম নাকী ২৮‘শ ডলার হয়ে গেছে। আর এদিকে চা শ্রমিকেরা ১২০ টাকা প্রতিদিন পায়। ওই দিকে শতকরা ৪২ জন মানুষের জীবন দারিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে, দুই বেলা খেতে পায় না। তারপরে তারা বলেন, আমরা নাকী তাদের উন্নয়ন দেখতে পাই না। আপনারা তো আওয়ামী লীগের যতজন মানুষ আছেন আপনারা জনগণের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভারী করেছেন আর উন্নত হয়েছেন, ধনী হয়েছেন।

জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সদস্য যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে এবং হেল্প সেলের সদস্য মামুন খান, ফয়সাল আহমেদ ও নাসির উদ্দিন শাওনের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পারভেজ রেজা কাকন, হেল্প সেলের সুমন আহসান, ওবায়দুর রহমান, কাজী এমদাদুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম রাসেল, এমদাদুল হক লিমন বক্তব্য রাখেন।

গত ১ আগস্টে ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম, ছাত্র দলের নুরে আলমের বড় ভাই আবুল কাশেম, ছাত্র দলের লিখন, সানাউল্লাহ, সুমন এবং নেত্রকোনা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হাতে পঙ্গু মঞ্জুরুল আলম তাদের ওপরে সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন।###

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন